করোনার উৎপত্তি তদন্তে সহায়তায় রাজি চীন

0
533

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উৎপত্তি প্রাকৃতিকভাবে, নাকি কোনো গবেষণাগারে, তা নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ রয়েছে। তাই ভাইরাসটির উৎপত্তি চিহ্নিত করার জন্য স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের দ্বার উন্মুক্ত করতে চীনের ওপর বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর চাপ বাড়ছিল। কিন্তু চীনের কর্মকর্তারা বলে আসছিলেন, তদন্তের জন্য তাঁরা আন্তর্জাতিক কোনো দলকে চীনে ঢুকতে দেবে না। অবশেষে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এল বেইজিং। গত বৃহস্পতিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈশ্বিক এই করোনা মহামারির বিষয়টি তদন্ত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক প্যানেলকে তারা সমর্থন করে। প্যানেলকে সব ধরনের সহায়তা দেবে চীন। করোনা মহামারি নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ যুক্তরাষ্ট্র মিথ্যাচার করছে বলেও দাবি বেইজিংয়ের।

চীনের উহানে গত ৩১ ডিসেম্বর অজ্ঞাত কারণে মানুষের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি শনাক্ত করে ডব্লিউএইচও। নতুন ভাইরাসটির জিনোম সিকোয়েন্স করে চীনের বিজ্ঞানীরা গত ৯ জানুয়ারি জানান, এটি সার্স করোনাভাইরাস গোত্রের। এর দুই দিনের মাথায়, ১১ জানুয়ারি সংক্রমণে প্রথম মৃত্যু দেখে বিশ্ব। ডব্লিউএইচও পরে ভাইরাসটির নাম দেয় নভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯। গত ৩০ জানুয়ারি করোনার সংক্রমণকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও। আর গত ১১ মার্চ একে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে সংস্থাটি। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্যমতে, এই মহামারিতে সারা বিশ্বে মারা গেছেন ২ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ। তাঁদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেই মৃত্যু হয়েছে ৭৫ হাজারের মতো। সারা বিশ্বে রোগী শনাক্ত করা হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ।

চীন তথ্য লুকিয়ে রাখার কারণেই বিশ্বে করোনা সংক্রমণ মহামারি আকার ধারণ করেছে বলে অভিযোগ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেন, টিকা আবিষ্কারের বৈশ্বিক গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় ভাইরাসের নমুনা দেয়নি চীন। তিনি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে স্বচ্ছ তদন্তের দাবি করেন। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ, আন্তর্জাতিক সংস্থা, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও মনে করেন, উহানের একটি বন্য প্রাণীর বাজারে আনা প্রাণী থেকে মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও দাবি করে আসছেন, ভাইরাসটি চীনের গবেষণাগার থেকে ছড়িয়েছে। তবে তাঁদের এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।

করোনা মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে অতিমাত্রায় ঢিলেমি করার জন্য ডব্লিউএইচওকে দায়ী করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে সংস্থাটির অর্থসহায়তা স্থগিত করে ট্রাম্প প্রশাসন।

করোনা মোকাবিলায় নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই ট্রাম্প প্রশাসন চীনের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে লিপ্ত বলে আগে থেকেই দাবি করে আসছে চীন। বৃহস্পতিবার বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিংয়ের প্রেস ব্রিফিংয়েও একই অভিযোগ আনা হয় ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে। ভাইরাসটি চীনে উৎপত্তি হয়নি দাবি করে চীনের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যেখানে বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের উৎপত্তির বিষয়ে এখন পর্যন্ত উপসংহারে পৌঁছাতে পারেননি, সেখানে পম্পেও দ্রুতই উপসংহার টেনে দিলেন যে ভাইরাসটি উহানের গবেষণাগারে তৈরি। তিনি কোথায় পেলেন এই প্রমাণ। প্রমাণ আমাদের দেখাক। তিনি প্রমাণ দেখাতে পারেননি।’ তিনি বলেন, ‘উৎপত্তির প্রশ্নসহ করোনাভাইরাস–সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে ডব্লিউএইচওকে সব ধরনের সহায়তার জন্য সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি আমরা।’

এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারি বিশ্বে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সুনামির মতো ছড়িয়ে দিয়েছে। এটা রোধ করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করেন তিনি।

সূত্র: রয়টার্স ও এএফপি, বেইজিং

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here