‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের ২৮ নাবিক নিরাপদ আশ্রয়ে

0
56
উদ্ধারের আগে জাহাজে বাংলাদেশি নাবিকরা। ছবি : সংগৃহীত

বাংলা খবর ডেস্ক:
ইউক্রেনে আটকে পড়া ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের ২৮ নাবিককে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উদ্ধার করে নিরাপদে স্থলভাগে নেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহিরয়ার আলম এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘তাঁরা নিরাপদে আছেন। জাহাজ ছেড়ে দূতাবাসের মাধ্যমে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করছেন। ’

ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরের কাছে জলসীমায় বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে গত বুধবার রাতে হামলা হয়।

এতে নিহত হন জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান। এরপর ভিডিও বার্তায় জাহাজে থাকা বাংলাদেশি নাবিকরা তাঁদের উদ্ধারে সরকারের প্রতি আকুতি জানাচ্ছিলেন। গতকাল জাহাজ থেকে উদ্ধারের পর তাঁদের টাগবোটে করে নিরাপদে উপকূলে নেওয়া হয়। বাংলাদেশ সময় রাত ঠিক ৮টায় তাঁদের বহনকারী টাগবোটটি ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দর জেটিতে পৌঁছে। জেটিতে নির্মিত একটি বাংকারে তাঁদের রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
মিসর সফররত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী গতকাল সন্ধ্যায় ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা আমাদের জানিয়েছেন, কিছুক্ষণ আগে জাহাজের ২৮ আরোহীকে নিরাপদ হেফাজতে, নিরাপদ স্থানে নেওয়া হয়েছে। তাঁরা তাঁদের সহকর্মী প্রয়াত হাদিসুর রহমানের মরদেহও সঙ্গে নিয়েছেন। আমরা খুব দ্রুত তাঁদের ওয়ারশে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ’

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘সবাইকে আমরা মরদেহসহ বাংলাদেশে আনার জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা করব। পোল্যান্ডে অবস্থানকালে নিহতের জানাজাও হবে। ’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ভিডিও বার্তার আগে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, উদ্ধারকারী যান দিয়ে ২৮ আরোহীকে স্থলভাগে নেওয়া হচ্ছে। কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে।

২৮ নাবিককে সরিয়ে নেওয়ার আগে জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আমরা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি পেয়েছি, যেটির খুব দরকার ছিল। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে জাহাজটিকে পরিত্যক্ত করার অনুমতি দিয়ে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে। এটি আমরা তাদের (ইউক্রেন) জানিয়েছি। ’

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘২৮ নাবিককে নিরাপদে সরিয়ে আনা এবং নিহত নাবিকের মরদেহ সরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে রাশিয়া। ’ গোলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের কী হবে, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, জাহাজটি এখন পরিত্যক্ত রেখে আসতে হবে। কারণ সেখানে মাইন পাতা রয়েছে। কাজেই জাহাজটি এখন যেখানে রয়েছে, সেখান থেকে সরানো ঝুঁকিপূর্ণ।

বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন মুজিবুর রহমান গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ২৮ নাবিক ও নিহত হাদিসুর রহমানকে বন্দর জেটির বাংকারে রাখা হয়েছে। কাল (আজ শুক্রবার) পরিস্থিতি বুঝে নিরাপদ স্থানে তাঁদের সরিয়ে নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আমি জাহাজের ক্যাপ্টেন নুর ই আলম সিদ্দিকীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা ভালো আছেন। ’

এ বিষয়ে জানতে জাহাজের একাধিক নাবিকের হোয়াটসঅ্যাপ-মেসেঞ্জারে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কারো সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

এর আগে গোলায় হাদিসুর রহমান নিহত হওয়ার পর জাহাজের বাকি ২৮ নাবিকের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাঁদের দেশে ফিরিয়ে নিতে তাঁরা ভিডিও মাধ্যমে সরকারের প্রতি আকুতি জানান। দেশে থাকা তাঁদের পরিবারও প্রিয় স্বজনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রতি আবেদন জানায়।

গত ২ মার্চ রাতে জাহাজের পেছনের অংশের নিয়ন্ত্রণকক্ষের ওপর গোলা আঘাত হানে। এর পর থেকে জাহাজটি অচল হয়ে গেছে। নৌবাণিজ্য অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ক্যাপ্টেন হাবিবুর রহমান বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণকক্ষের মাধ্যমেই জাহাজ চালানো হয়। ইঞ্জিন সচল থাকলেও নিয়ন্ত্রণকক্ষ, রাডার সিস্টেম অচল থাকায় এই জাহাজ চালানো সম্ভব নয়। টাগবোট যুক্ত করে এটিকে চালিয়ে ডকইয়ার্ডে নিতে হবে। ’

যেসব নাবিককে সরিয়ে নেওয়া হলো:

নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া ২৮ নাবিক হলেন জাহাজের মাস্টার জি এম নুর ই আলম, অতিরিক্ত মাস্টার এমডি মনসরুল আমিন, এসিও সেলিম মিয়া, দ্বিতীয় কর্মকর্তা রামাকৃঞ্চ বিশ্বাস, তৃতীয় কর্মকর্তা ময়মনসিংহের রুকনুজ্জামান রাজিব, ডিসি-১ ফারিয়াতুল জান্নাত তুলি, ডিসি-২ ফয়সাল আহমেদ সেতু, প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ ওমর ফারুক, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ আরিফুল ইসলাম, দ্বিতীয় প্রকৌশলী রবিউল আউয়াল, চতুর্থ প্রকৌশলী চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সালমান সারোয়ার সামি, ইসি-১ ফারজানা ইসলাম মৌ, ইসি-২ মোহাম্মদ শেখ সাদি ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান। এ ছাড়া আছেন জামাল হোসাইন, মোহাম্মদ হানিফ, মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, মহিন উদ্দিন, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের হোসাইন মোহাম্মদ রাকিব, সাজ্জাদ ইবনে আলম, নাজমুল উদ্দিন, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সারোয়ার হোসাইন, মাসুম বিল্লাহ, মোহাম্মদ হোসাইন, মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, মোহাম্মদ শফিকুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।

‘হামলা কে করেছে, নিশ্চিত নয়’ জাহাজে ইউক্রেন না রাশিয়া হামলা চালিয়েছে, তা নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মহমুদ চৌধুরী। গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা জানার পর আক্রমণের ব্যাপারে কথা বলব। ’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here