স্বামীকে মসজিদের ভেতরে রেখে পাশে নারীদের জন্য নির্মিত আলাদা মসজিদে যান পারভীন। নামাজ শুরুর কিছুক্ষণ পর মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শুনে দৌঁড়ে বের হয়ে আসেন স্বামীকে বাঁচাতে। আর সেখানেই তিনি সন্ত্রাসীর ছোড়া গুলিতে প্রাণ হারান। মুখ থুবড়ে পড়ে যান দুই মসজিদের সামনের খালি জায়গায়। শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের দুই মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার প্রতীকি হয়ে ওঠা ছবিটি বাংলাদেশের হোসনে আরা পারভীনের (৪২)।
তার স্বামী ফরিদ উদ্দিন বেশ কিছুদিন ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত। শুক্রবার জুমআর নামাজ আদায় করতে স্বামীকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে নিয়ে যান তিনি। তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন পারভীনের স্বামী ফরিদ উদ্দিন। নিউজিল্যান্ড প্রবাসী ফরিদ উদ্দিন ও হোসনে আরা পারভীন দম্পতির বাড়ি সিলেটে। ফরিদ উদ্দিনের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার চকগ্রামে। আর পারভীনের বাবার বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালহাটা গ্রামে। ওই গ্রামের মৃত নুর উদ্দিনের মেয়ে তিনি।
হোসনে আরা স্বামী ফরিদ উদ্দিনের সাথে দীর্ঘ দুই দশকের অধিক সময় ধরে নিউজিল্যান্ডে বসবাস করে আসছিলেন। শিপা বেগম (১৩) নামে তাদের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। সর্বশেষ, ২০০৯ সালে তারা বাংলাদেশে এসেছিলেন বলে তাদের পারিবারিক একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। হোসনে আরার বড় বোন রওশন আরা বেগম বলেন, সন্ত্রাসী হামলার পরপরই তাদের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ফাতেমা বেগম ফোন করে হুসনে আরার নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে হুসনে আরার স্বামী ফরিদ উদ্দিন বেঁচে গেছেন।
রওশন আরা বেগম বলেন, কোরআন শরিফ ইংরেজিতে অনুবাদ করতে পারতেন হোসনে আরা ও তার স্বামী। তারা দুজন মসজিদে গিয়ে ইংরেজি ভাষাভাষীদের কোরআন শরিফ তিলাওয়াত করে শোনাতেন। মসজিদের একটি অংশ নারীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। অপর অংশে পুরুষেরা নামাজ আদায় করতেন। ঘটনার সময় হোসনে আরা নারীদের জন্য সংরক্ষিত কক্ষে ছিলেন। সন্ত্রাসী হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ফরিদ উদ্দিন বর্তমানে ক্রাইস্টচার্চ এলাকায় আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে থাকলেও পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। সেখানকার পুলিশ তার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে দিচ্ছে না।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তিন বাংলাদেশিসহ কমপক্ষে ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন আরো ৪৮ জন। জানা গেছে, জুমার নামাজের সময় দুজন বন্দুকধারী ক্রাইস্টচার্চের ডিনস অ্যাভিনিউর আল নুর মসজিদ ও পার্শ্ববর্তী লিনউডের মসজিদে হামলা চালায়। স্ট্রিকল্যান্ড স্ট্রিটে একটি গাড়িবোমা হামলার ঘটনাও ঘটেছে। নিউজিল্যান্ড সরকারে একে সন্ত্রাসী হামলা বলে ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।