বাংলা খবর ডেস্ক: অনলাইন ভিত্তিক গেম ‘প্লেয়ার আননোনস ব্যাটলগ্রাউন্ডস’ (পাবজি) বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্মের কাছে তুমুল জনপ্রিয়। কিন্তু গেমটি নিয়ে সাধারণ মানুষের রয়েছে নানা অভিযোগ। নেতিবাচক সাইকো স্যোসাল ইপেক্ট ও সহিংস মনোভাব সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে গেমটির বিরুদ্ধে।
পাবজি যেসব তরুণ-তরূণী খেলে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকেই ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগে অংখ্যা অভিযোগ এসেছে। অভিযোগের সঙ্গে পিতা-মাতারা গেমটি বন্ধ করার পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন। সেসব অভিযোগ খতিয়ে দেখে বিটিআরসিসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে গেমটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাইবার ক্রাইম ইউনিট।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ভিডিও গেমটি অনলাইনে একাধিক ব্যক্তি মিলে খেলতে হয়। একটি দ্বীপে প্রতিপক্ষকে হত্যা করে টিকে থাকতে হয় গেমটিতে। সেখানে নানা ধরনের অধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়। খেলতে খেলতে যিনি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবেন তিনিই জয়ী হয়। ফলে গেমটি খেলতে থাকা তরুণ-তরুণীর ভেতরে সহিংস মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে বলে ওই তরুণ-তরুণীর অভিভাবকরা অভিযোগ দিয়েছেন সাইবার ক্রাইমে।
সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ সূত্র বলছেন, অক্টোবরের শুরু থেকে গেমটি বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গেমটি অনেকগুলো আইপি ব্যবহার করে খেলা যায়। কিছু আইপি বন্ধ করা হয়েছে আর কিছু আইপি বন্ধের পথে। তবে গেমটি আর কখনো খেলা যাবে না বাংলাদেশে। সর্বসম্মতিক্রমে গেমটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকার শুক্রাবাদে অবস্থিত নিউ মডেল কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবু তাহের। তাহের গেমটি বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত খেলেন। আবু তাহের এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গেমটি আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে খেলি। সন্ধ্যা থেকে খেলা শুরু করি আর রাত তিন-চারটা পর্যন্ত খেলি। এখন একদিন না খেললে অস্থির লাগে। কিছুই ভালো লাগে না। যাদের সঙ্গে খেলি তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে খেলি। ভালোই তো লাগতো খেলতে। খেলায় জিতে গেলে হিরো হিরো ভাব আসে ভেতরে। সবাইকে মেরে-কেটে জিততে হয় এখানে। তবে কয়েকদিন ধরে খেলতে সমস্যা হচ্ছে। মাঝে মাঝে গেমটিতে ঢুকতে ঝামেলা হয়। তবে এখনো ঢোকা যায়।’
জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পাবজি গেম বন্ধের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। বন্ধ হয়েছে বললে ভুল হবে। কারণ আমরা এখনো গেমটির পুরো প্রক্রিয়া বন্ধ করতে পারেনি। তবে দ্রুতই করে ফেলব। এ বিষয়ে মন্ত্রী মহোদয় মোস্তফা জব্বার স্যার ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছি। সবার মতামতের ভিত্তিতে গেমটি বন্ধের সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে।’
মো. নাজমুল ইসলাম আরো বলেন, ‘যেহেতু এই গেমের একটি নেতিবাচক সাইকো স্যোসাল ইপেক্ট রয়েছে। যাতে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া ও মনন বিকাশে সমস্যা হয়। তাই গেমটির বিষয়ে অভিযোগের শেষ নেই। যে সন্তান গেমটি খেলে তারই অভিভাবক আমাদের কাছে অভিযোগ করছেন এটি বন্ধ করতে। বাংলাদেশ পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগে আসা অভিযোগগুলো একত্রে করে বিটিআরসি ও মোস্তফা জব্বার স্যারকে জানিয়েছিলাম।’
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘পরে বিষয়টি নিয়ে আমরা সবাই বসেছিলাম। আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। সবার মতামতের ভিত্তিতে আমরা পাবজি গেমটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন পাবজি বন্ধ হওয়ার পথে। পাবজির অনেকগুলো আইপি আছে। আমরা কিছু আইপি বন্ধ করেছি। এখনো কিছু আইপি আছে। যেগুলো বন্ধের প্রক্রিয়াধীন।’