খালেদা জিয়া ফিরলেন ‘ফিরোজা’য়

0
441

বাংলা খবর ডেস্ক: সাড়ে ২৫ মাস আগে রাজধানীর গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে সবশেষ বেরিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ড পাওয়ায় আর সেই বাসায় ফেরা হয়নি। তারপর থেকে ছিলেন পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার এবং সবশেষ কারান্তরীণ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে। বিশেষ বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পাওয়ায় সাড়ে ২৫ মাস পর সেই ‘ফিরোজায়’ ফিরেছেন খালেদা জিয়া।

বুধবার (২৫ মার্চ) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে তাকে বহনকারী গাড়ি গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের ১১ নম্বর বাসভবন ‘ফিরোজা’য় পৌঁছায়। এসময় খালেদার বাসভবনের সামনে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীরা নানা রকমের স্লোগান দিতে থাকেন।

এর আগে বিকেল ৪টার পর কারান্তরীণ খালেদাকে মুক্তি দেয়া হলে তিনি বিএসএমএইউ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে রাখা গাড়িতে ওঠেন। সেখান থেকে খালেদাকে বহনকারী গাড়ি ‘ফিরোজা’র উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। খালেদার সঙ্গে তার গৃহকর্মী ফাতেমাও বের হন। তবে ফাতেমা অন্য গাড়িতে করে বাসায় ফেরেন।

গতকাল মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) সরকারের পক্ষ থেকে খালেদার মুক্তির সিদ্ধান্ত জানানো হলে তার বাসভবন ‘ফিরোজা’ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়।

মঙ্গলবার বিকেলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে (করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট) সরকার তার বয়স বিবেচনায় মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত থাকবে। তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশ যেতে পারবেন না, এমন শর্তে এই সাজা স্থগিত থাকবে।

আইন মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত সুপারিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গেলে সেখানে বিএনপি প্রধানের কারামুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়। সর্বশেষ তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যায়। ফাইলে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে তা যায় কারা অধিদফতরে। সেখানকার আনুষ্ঠানিকতা শেষে মুক্তি পান বিএনপি প্রধান।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান। রায় ঘোষণার পর খালেদাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এই মামলায় আপিলে তার আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট।

একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন একই আদালত। রায়ে ৭ বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

পরে কারান্তরীণ অবস্থায়ই চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেয়া হয় খালেদা জিয়াকে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে তাকে আবারও কারাগারে পাঠানো হয়। এভাবে কয়েক দফায় তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এবং হাসপাতাল থেকে কারাগারে নেয়া হয়। সবশেষ গত বছরের ১ এপ্রিল তাকে তৃতীয় দফায় হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়। তিনি হাসপাতালের ৬২১ নম্বর কেবিনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

মামলা দু’টি ষড়যন্ত্রমূলক বলার পাশাপাশি বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এক্ষেত্রে তারা আদালতেও আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বরাবরই বিফল হতে হয়েছে বিএনপির নেতৃত্বকে।

এর মধ্যে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে বিএনপি নেতারা খালেদার মুক্তির জোর দাবি তোলেন। বিশ্বজুড়ে যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, তাতে করোনাভাইরাসে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সেজন্য ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে দ্রুতই মুক্তি দেয়া প্রয়োজন বলে মতামত দেন তারা।

মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে খালেদার মুক্তির সিদ্ধান্ত জানানোর পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়ার শাস্তি ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে প্রধানমন্ত্রী তার প্রাজ্ঞ, অভিজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের পরিচয় দিয়ে উদারনৈতিক এবং মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here