চাল চোরদের জেলে দিন বিদায় হোন ব্যর্থরা

0
87


নঈম নিজাম

না, অপেক্ষা করতে পারব না। চাল চোরদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন। ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই জেল। প্রজ্ঞাপন জারি করুন, জনপ্রতিনিধি থাকার কোনো অধিকার তাদের নেই। চোরের রক্ষকদেরও ছাড় দেওয়া যাবে না। এলজিআরডি মন্ত্রণালয়কে বসে থাকলে হবে না। নির্দেশ জারি করতে হবে জনপ্রতিনিধি পদ থেকে ওদের চিরতরে বিদায়ের। শুধু বিদায় নয়, আর কোনো দিন এই চোরেরা ভোট করতে পারবে না। কঠোর হাতে চোর দমন চাই। প্রয়োজনে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ে কমিটি হোক। একজন অতিরিক্ত সচিব কমিটির নেতৃত্বে থাকুক। এ কমিটির কাজ শুধুই চাল চোরদের বাদ দেওয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সেল থাকবে। এ সেলের কাজ ওদের জেল নিশ্চিত করা। আইন মন্ত্রণালয়ের সেল কাজ করবে জামিন বন্ধের। এই কঠিনতম সময়ে কোনো সুস্থ মানুষ গরিবের ত্রাণ চুরি করতে পারে না। চোর দমনে মাননীয় এমপি সাহেবরা কী করছেন? তারা কি নিজের এলাকার খোঁজ রাখেন? এত চোর কোথা থেকে এলো? কীভাবে এলো? এত দিন তারা কী করেছেন? জবাব সবাইকে দিতে হবে। অনেক এমপি নিজেই লকডাউন হয়েছেন। ফোন বন্ধ করে দিয়েছেন। এলাকার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। চাল কীভাবে বণ্টন হচ্ছে নিজেই জানেন না। জানলেও দলের লোকদের আশকারা দিচ্ছেন। চুরিতে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। দয়া করে কেউ চোরদের আশকারা দেবেন না। সাতক্ষীরার এমপি জগলু, কুমিল্লার সীমাসহ অনেক এমপির মতো মানুষের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিন। আপনি না পারেন দলের ভালো লোকদের কাজে লাগান। চোরদের নিয়ে ঘরবসতি বন্ধ করুন। অন্যথায় মানুষ ক্ষমা করবে না। মানুষ ক্ষমা করলেও আল্লাহ রেহাই দেবেন না।

চারদিকের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করুন। মানুষ ভালো নেই। বিশ্ব আজ কাঁদছে। চারদিকে অশ্রু আর হাহাকার। সবকিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে। আগামীর পৃথিবী টিকবে কিনা কেউ জানি না। দুনিয়ার দিকে একবার তাকান। লোভ করে কী হবে? কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে একটি লাশ পড়েছিল। কেউ এগিয়ে আসেনি। পুলিশ এসে লাশ দাফন করে। রাজবাড়ীতে একই চিত্র। পুলিশ ছাড়া কেউ আসেনি। আত্মীয়-পরিজন কারও খবর ছিল না। ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজনকে ফোন করা হয়। কেউ সাড়া দেয়নি। এক পর্যায়ে ফোনের সুইচ বন্ধ করে দেওয়া হয়। নরসিংদীতে লাশ পড়ে ছিল নৌকার ভিতর। দীর্ঘ সময় পড়ে থাকা লাশের পাশে কেউ এগিয়ে আসেনি। নারায়ণগঞ্জে রাস্তায় কত ঘণ্টা পড়ে ছিল লাশ? বিশ্বাস করুন, একজন মানুষও আসেনি। পুলিশ এসে লাশ দাফনে নিয়ে যায়। দুনিয়ার সব হাসপাতালের একই চিত্র। আমেরিকায় গণকবর খোঁড়া হচ্ছে। নিকটজনেরা কেউ এগিয়ে যাচ্ছে না লাশ দাফনে। পৃথিবী আজ বদলে গেছে। তার পরও লোভ করবেন ত্রাণের সামগ্রীতে? কে খাবে আপনার এ সম্পদ? ব্যাংক লুটেরা, শেয়ার কেলেঙ্কারির খলনায়করা কি একবারও ভেবেছেন এসব? ত্রাণ লুটেরা ধরা পড়ছে। জেলে যাচ্ছে। পত্রিকায় ছবি প্রকাশিত হচ্ছে। টিভিতে চোর হিসেবে খবর দিচ্ছে। কীসের জনপ্রতিনিধি আপনারা? আপনাদের, তোমাদের, তোদের একটি পরিচয়- চোর। আর কিছু নয়। চোরদের কোনো দল নেই, দেশ নেই, সমাজ নেই। ওরা মানবতার শত্রু। ওদের বাদ দিয়ে ত্রাণ বণ্টন হোক সিভিল প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সেনা, পুলিশ, র‌্যাবের মাধ্যমে। গরিব মানুষের তালিকা ধরে ত্রাণ পৌঁছে দেবে বাড়ি বাড়ি। মানবতার জয়গান ফিরে আসুক। স্বস্তি ফিরে আসুক সবখানে। মানুষকে ভালো রাখতে হবে।

দুনিয়ার কোথাও মানুষ ভালো নেই। সময়টা কারও জন্যই ভালো নয়। ভুল করে কেউ টিকছে না। থাকতে পারছে না মন্ত্রিত্বে। নিউজিল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডেভিড ক্লাপ নিজেই লকডাউন ভাঙলেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে গেলেন সমুদ্রসৈকতে। বিষয়টি প্রকাশ পেয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বয়ে যায় সমালোচনার ঝড়। পরিস্থিতি অনুধাবন করে মন্ত্রী নিজেকে বললেন, নির্বোধ! তারপর পদত্যাগ করলেন। মন্ত্রিসভা ছাড়লেন। বিদায় নিলেন। বারবার প্রকাশ করলেন অনুতাপ। একইভাবে মন্ত্রিসভা ছাড়তে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের এক মন্ত্রীকে। এ সময়টা বিনোদনের নয়। আনন্দ আর অবহেলার নয়। বাস্তবতা অনুধাবন করুন। মানুষের পাশে দাঁড়ান। মানুষ না থাকলে এমপি, মন্ত্রী, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার কাউকে দরকার নেই। প্রয়োজন মানবতাকে জাগিয়ে তোলার। একজন চেয়ারম্যান ত্রাণ দিয়ে ছবি তুললেন। ছবি তোলা শেষে ত্রাণ কেড়ে নিলেন! এরপর তিনি কী থাকতে পারেন? আপনাদের বিবেক কী বলে? নিজের বিবেককে জাগিয়ে তুলুন। কঠিন ডেঙ্গুর সময় আমাদের মন্ত্রী সাহেব যান প্রমোদভ্রমণে মালয়েশিয়া। তিনি বিদায় নেন না। তাকে বিদায় করা হয়ও না। পিয়াজের দাম বাড়ার সময় আরেক মন্ত্রী সাহেব ঘুরে বেড়ান অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড। কাকে দোষারোপ করব? আপনি মন্ত্রী, গার্মেন্ট চলবে কি বন্ধ থাকবে ঘোষণা দেওয়ার দায়িত্ব আপনার। এটুকু না বুঝলে আছেন কেন? আপনি মন্ত্রী আপনারই দায়িত্ব ক্রাইসিসকালীন সমন্বয়ের। আপনি কী করে বলেন, জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান হওয়ার পরও আপনাকে কোনো কিছু জানানো হয় না? এরপর আপনি কী করে থাকেন? হায়রে মন্ত্রী! হায়রে মন্ত্রণালয়! আপনি মন্ত্রী হলে আপনাকে জানতে হবে। আপনার দক্ষতা, মেধা, মনন, ম্যানেজমেন্ট ক্যাপাসিটির প্রমাণ আপনাকেই দিতে হবে। না পারলে বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকুন। মানুষের সামনে হাস্যকর কথা বলবেন না। এই কঠিনতম সময়ে মানুষ কষ্টে আছে। নতুন করে কষ্ট বাড়াবেন না। মানুষের দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শুনুন। কাঁদতে ভুলে গেছে মানুষ। চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে না। চারদিকের অবস্থায় বোবা আর্তনাদের মতো বাজছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছাত্রের শেষ আর্তনাদ জানিয়ে দিয়েছে আমাদের অবস্থান। পাহাড়ের মেধাবী ছেলেটি ঢাকায় এসে ভর্তি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরিবারের মাঝে স্বপ্ন তৈরি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এ ছেলেই বদলে দেবে সবাইকে। কিন্তু হায়! হঠাৎ কী হতে কী হয়ে গেল। ক্যান্সার ধরা পড়ল সুমনের। নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হতো চিকিৎসার জন্য। করোনাভাইরাসের আক্রমণ বাংলাদেশে আসার পরই বদলে গেল হাসপাতালের চিত্র। সুমন ঘুরছে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। কেউ এগিয়ে আসছে না। চিকিৎসা দিচ্ছে না। ডাক্তার-নার্স সরে যাচ্ছে দূরে। সবাই বলছে, আমাদের প্রটেকশন নেই। জবাবে সুমন বলছে, আমি করোনা রোগী নই। আমাকে চিকিৎসা দিন। আমাকে বাঁচান। কিন্তু সেই ডাকে কেউ সাড়া দেয়নি। ঢাকায় সুমনের কেউ থাকে না। ক্যান্সার ছিল প্রাথমিক পর্যায়ে। বিপর্যস্ত সুমন নিজের ফেসবুকে লিখলেন, ‘আমার করোনা হয়নি, অথচ পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে করোনার জন্যই আমাকে মারা যেতে হবে।’ তাই হয়েছে। হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত সুমন। সহ্য আর করা যায় না। বাবা-মাকে ফোন করে চলে যায় গ্রামের বাড়ি। পর্যাপ্ত ওষুধ সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেনি। পাহাড়ি এলাকায় ওষুধ ম্যানেজ করতে পারেনি পরিবার। সুমন চলে গেল বিনা চিকিৎসায়। সুমনের জন্য আজ সবাই কাঁদছে। পাহাড় কাঁদছে। মানুষ কাঁদছে। কিন্তু সুমন তো আর ফিরবে না। তার পরও স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলবেন সব ঠিক আছে! কোথাও কোনো সমস্যা নেই। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মালিকরা গিয়ে বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নেই। এ বৈঠকটি কেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আগে ডাকলেন না? তারপর যদি বলেন, আপনি ডেকেছেন তারা আসেননি, তাহলে বলব আপনার থাকার কোনো দরকার নেই। অবশ্যই স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সবার আগে। কিন্তু কাজটা কে করবে? কে তাদের আশ্বস্ত করবে? কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে? মাননীয় মন্ত্রী আপনিই বলুন। মাঝেমধ্যে ইরাকে সাদ্দামের তথ্যমন্ত্রী সাহাফের মতো বেরিয়ে এসে আপনি বাণী দেবেন। তারপর আবার হাওয়া হয়ে যাবেন। কিছুই বলার নেই।

এই দুঃসময়ে আমরাও ভালো নেই। মিডিয়াকর্মীরাও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। জানি না আগামী দিনের দুনিয়ায় কে বাঁচব কে মরব। রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কবিতার লাইনগুলো মনে পড়ছে। রুদ্র লিখেছেন-

‘হঠাৎ ডেকে ওঠে নাম না জানা অজানা পাখি

অজান্তেই চমকে উঠি

জীবন, ফুরালো নাকি!

এমনি করে সবাই যাবে, যেতে হবে…’

চলে তো যেতেই হবে। চাইলেও কেউ থাকতে পারব না। জানি না আগামীর পৃথিবীতে কে থাকব আর কে থাকব না। শুধু প্রশ্ন- এ কেমন যাওয়া? চোখের সামনে বাবার মৃত্যু হচ্ছে। সন্তান কিছুই করতে পারছে না। লাশ দাফনে যেতে পারছে না। চিৎকার করে কাঁদতেও পারছে না। গুমরে গুমরে নিজের ভিতরের চাপাকান্না জমিয়ে রাখতে হচ্ছে। কাউকে জড়িয়ে ধরে মনের কষ্ট লাঘব করতে পারছে না। অসুস্থ প্রিয়জনদের পাশে হাসপাতালে আজ কেউ নেই। সন্তান মায়ের খবর নিতে পারছে না। মা পারছেন না সন্তানের পাশে দাঁড়াতে। লাশের খাটিয়া অজানা মানুষের হাতে। আহারে শেষ গোসল হলো কি? জানি না কেউ। পৃথিবী আজ নিষ্ঠুর। থাকব কার অপেক্ষায়? কোথাও কেউ নেই। মেয়েরা বাবার লাশ বহন করে নিয়ে গেছে দাহ করতে। ভারতের ঘটনাটি বিশ্ববাসীকে কাঁদিয়েছে। মুসলমানরা দাহ করতে নিয়ে গেছে হিন্দু ভাইয়ের লাশ। এখন আর লাশের কোনো জাতপাত নেই। কোন ধর্মমতে শেষ অন্ত্যেষ্টি হচ্ছে সেই প্রশ্নও নেই। গণকবরের খবর আসছে উন্নত বিশ্বে। কোনো খবরই এখন আর কাউকে আঘাত করে না। চারদিকে শুধু বুকভাঙা আর্তনাদ। এক অজনা পথের দিকেই এগিয়ে চলেছি আমরা। কোথায় গিয়ে থামব, শেষ পরিণতি কী? কিছুই জানি না।

মাঝেমধ্যে প্রশ্ন জাগে পৃথিবী কি চিরতরে শেষ হয়ে যাবে? এমন তো আগেও হয়েছে। ইউরোপে ভয়াবহ প্লেগ হানা দিয়েছে বারবার। কালো প্লেগ খ্যাত সেই অসুখ ইউরোপের তিন ভাগের এক ভাগ মানুষকে নিয়ে যায় তেরো শর মাঝামাঝি। এর আগে-পরেও প্লেগ দুনিয়াবাসীকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। আমাদের এ ভূখন্ডে ভয়াবহতায় ছিল কলেরা। সেই সময়গুলো মানুষ পার করেছে। কিন্তু এখন যে সময় যেতে চায় না। থমকে আছে সবকিছু। মানুষ বড্ড অসহায়। হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন, ‘কিছু কিছু মানুষ সত্যি খুব অসহায়। তাদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা, ব্যথা-বেদনাগুলো বলার মতো কেউ থাকে না। তাদের কিছু অব্যক্ত কথা মনের গভীরেই রয়ে যায়, কিছু স্মৃতি একসময় পরিণত হয় দীর্ঘশ্বাসে।’ একটা বেদনাবিধুর দীর্ঘশ্বাস নিয়েই এ সময়গুলো কাটছে। অমাবস্যার অন্ধকারে শ্মশানের পাশ ঘেঁষে যেতে একটা ভয় হতো। সেই ভয়টা এখন আবার পেয়ে বসেছে নাগরিক জীবনের আলোক উজ্জ্বলতায়। কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ভাষায়, ‘বিদায়ের সেহনাই বাজে/নিয়ে যাবার পালকি এসে দাঁড়ায় দুয়ারে’।

প্লেগ একসময় থেমে গিয়েছিল। কলেরা আর মহামারী হিসেবে থাকেনি। হয়তো একদিন এ মহামারীও থেমে যাবে। একটি সাধারণ সিজনাল অসুখ হিসেবেই দেখব আমরা করোনাভাইরাসকে। কিন্তু তত দিন এ ধাক্কা কীভাবে সামলে উঠবে পৃথিবী। আর সামলে উঠলেও ক্ষতটা থেকে যাবে। সেই ক্ষত যুগের পর যুগ ভোগাবে। মানুষকে নিয়ে যাবে কঠিন এক পরিস্থিতিতে। ২০২৩ সালের আগে বিমানবন্দরগুলোর স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে না। বিশ্ব বাণিজ্য হবে না স্থির। মানুষ কি বুঝতে পারছে সবকিছু? এখনই মানুষ ধৈর্যহারা। না থাকতে পারছে ঘরে, না পারছে বের হতে। দিল্লিতে এক যুবককে পাঠানো হয় এক হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইনে। যুবকের ভালো লাগছিল না। তিন তলা থেকে লাফিয়ে পড়ল নিচে। দুই পা ভেঙে আবার হাসপাতালে। নিয়ম না মেনে ঘর থেকে বের হওয়ার পরিণতি ভালো হচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জে লাশ পড়ে ছিল রাস্তায়। ঢাকায়ও তাই হচ্ছে। কেউ সাহস করে লাশের ধারেকাছে যায়নি। ইকুয়েডরের একটি ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে বিশ্বব্যাপী। লাশের সারি পড়ে আছে। সেনাবাহিনী নেমেছে লাশ সরাতে। আমরা সতর্ক না হলে আমাদের অবস্থা কী হবে একবারও ভেবেছেন? বাংলাদেশ ঘনবসতির। জীবন-জীবিকার তাগিদে মানুষকে ঘর থেকে বের হতে হয়। লকডাউন কিংবা মৃত্যুর হুমকি কাউকে আটকাতে পারছে না। একবার সংক্রমণ বাড়লে এর শেষ থাকবে না। সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। লাশ দাফন করার প্রতিষ্ঠানও পাওয়া যাবে না। কে মারা যাবে কে জীবিত থাকবে কেউ জানি না।

এমন মহামারী মোকাবিলায় বিশ্ব একবিন্দুও প্রস্তুত ছিল না। ক্ষমতাবান রাষ্ট্রগুলো ছিল আত্মঅহমিকায়। নিজেদের জাহির করা নিয়ে ব্যস্ত। মহামারীর টর্নেডো নিয়ে তাদের কোনো সতর্কতা ছিল না। শুরু থেকেই তাদের বক্তব্য-বিবৃতি ছিল হতাশাজনক। বড় বড় দেশগুলোর ব্যর্থ নেতৃত্বের কবলে পড়ে বিশ্ব আজ এক ধ্বংসস্তূপ। আগামী শুধুই অন্ধকার। মহামারীর দুনিয়া কেড়ে নিয়েছে সবার ক্ষমতা। একটিবার ভাবুন না, প্রকৃতি কেন এত নিষ্ঠুর হলো? আমরা কি বাড়াবাড়িটা কম করেছি? সবার অহংকার আর নিষ্ঠুরতা আজকের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। এখন আর কেউ নিজেকে দুনিয়ার বাদশাহ দাবি করতে পারছে না। দুই দিন আগেও অহংকার ছিল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের। এখন আর নেই। করোনাভাইরাস ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চেনে না। রানীকে তোয়াক্কার সময় নেই। তাই ট্রাম্পের কণ্ঠ নমনীয়। চুপসে গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। উন্নত বিশ্বের চোখ-ধাঁধানো হাসপাতালগুলোয় শুধুই মৃত্যুর বিভীষিকা। বিমানবন্দরগুলো পরিত্যক্ত। শহরগুলো খাঁখাঁ করছে। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো বুঝতে পারছে না কী হবে আগামীতে। অজানা গন্তব্যের দিকে ছুটছি আমরা। সামনে থমকে দাঁড়ানোর লাইট নেই। শুধুই অনিশ্চয়তায় পথচলা। আর চিন্তা বেঁচে থাকব তো? অদ্ভুত আঁধার নেমে এসেছে। একটু আলোর সন্ধান করছি আমরা। জীবনের বহতা নদীতে সেই আলোর রশ্মি একটু যদি জ্বলে ওঠে। সামনে কূলকিনারাহীন অথৈ সাগর। পরিত্রাণ কী, কেউ জানি না। এমন বিপর্যয়ে কেউ পড়েনি কোনো দিন। এত অসহায় কখনো মনে হয়নি। এ মৃত্যুপুরীর পৃথিবী আমার নয়। এ জগৎ আমার অচেনা। এ পৃথিবী আমার অচেনা।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here