নারায়ণগঞ্জে অসহায় মানুষের পাশে ওসমান পরিবার

0
89

নিউজ ডেস্ক: করোনা পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জে কর্মহীন হয়ে পড়েছে দিন আনে দিন খায় এমন লাখো মানুষ। ফলে খাবার সংকট দেখা দেয় তাদের মধ্যে। এই মহাদুর্যোগ মুহূর্তে সব মতভেদ ভুলে অসহায় কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবার।

জনসমাগম ঠেকাতে রাতের আধারে মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন তারা। এ ছাড়া যারা অভাবে থাকলেও মুখ ফুটে চাইতে পারেন না লজ্জায়, নিম্ন-মধ্যবিত্ত এই মানুষেদের বাড়িতেও খাবার পৌঁছে দিয়েছেন।

এর আগে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন, ‘করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগে আমার ও আমার বড় ভাই সেলিম ওসমানের সংসদীয় এলাকার একজন মানুষকেও না খেয়ে মরতে দেবো না। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি আমাদের যা আছে তা নিয়েই সবাই ভাগ করে খাব। প্রয়োজনে কম খাব। কিন্তু সবাইকে নিয়ে খাব।’

এদিকে মানবিকতায় পিছিয়ে নেই তার বড়ভাই বিকেএমইএর সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানও। দুইভাই তাদের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা অনুদান ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামেন। তবে তাদের আগেই মাঠে নেমেছেন শামীম ওসমানের স্ত্রী সালমা ওসমান লিপি ও একমাত্র ছেলে পুত্র ইমতিনান ওসমান অয়ন। তারাও ব্যক্তিগত অর্থায়নে অসহায় মানুষের জন্য এগিয়ে এসেছেন। ফলে নতুন করে নারায়ণগঞ্জে আলোচনায় উঠে এসেছে ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবার। রাজনীতির বাইরেও যে পরিবারটির মধ্যে মানবিকতা রয়েছে তা আলোচিত হচ্ছে দলীয় ফোরামের বাইরে সাধারণ মানুষের মাঝেও।

করোনার হটস্পট নারায়ণগঞ্জে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডবয়দের জন্য শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান থাকার ব্যবস্থা করেছেন। এ ছাড়া শামীম ওসমানের আহবানে চারটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নমুনা সংগ্রহের জনবল দেওয়া হয় এবং তাদের সহায়তায় ব্যক্তিগত অর্থায়নে নমুনা সংগ্রহকারীদের জন্য সার্বক্ষণিক দুটি অ্যাম্বুলেন্স দেন শামীম ওসমান। এ ছাড়া তার প্রচেষ্টা ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশে প্রথমবারের মতো নারায়ণগঞ্জে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ার নামের প্রতিষ্ঠানকে করোনা উপসর্গ থাকা রোগীদের নমুনা সংগ্রহের জন্য নির্দেশ দেয় সরকার।

শামীম ওসমান তার নির্বাচনী এলাকা ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে জনসমাগম ঠেকাতে রাতের আধারে ২০ হাজার পরিবারের ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। দলের অসহায় কর্মী, সমর্থক, পেশাজীবী বিভিন্ন সংগঠন, ও দরিদ্র পরিবারের মধ্যে নগদ ৪০ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা এবং গণমাধ্যম, প্রশাসন ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে ৪০০ পিস ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম (পিপিই) সরবরাহ করেন তিনি।

সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ নগরীর কর্মহীন হয়ে পড়া প্রায় ১ হাজার হকার পরিবার এবং পরিবহন সেক্টরের প্রায় ২ হাজার পরিবারকেও খাদ্য সামগ্রী দেন শামীম ওসমান। শুধু তাই নয়, শামীম ওসমানের আহ্বানে তার সমর্থক দলীয় নেতারা ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় সাড়ে ৩৮ হাজার পরিবারের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী দিয়েছেন।

অন্যদিকে সেলিম ওসমান তার নির্বাচনী এলাকা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৭টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান ও ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলোচনার করে ৭দিনের কর্মসূচি নিয়ে তার কার্যক্রম শুরু করেন। এর মধ্যে ২০ হাজার পরিবারকে ৯০০ টাকা করে বিকাশ বা নগদ একাউন্টে অর্থ প্রেরণ, রোজার মাসের জন্য ৬০০ ছেলেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা সম্মানি ভাতা দিয়ে কর্মজীবী করে তোলা, করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া ডাক্তার নার্সদের খাওয়া এবং যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা আর্থিক সহযোগিতা, ৬০০ স্বেচ্ছাসেবী যারা ত্রাণ ও সেবায় নিয়োজিত তাদের সম্মানী বাবদ ৯ লাখ টাকা, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে মৃতদের দাহ এবং দাফনের জন্য ১০ লাখ প্রদান করেন।

এ ছাড়া সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ১৭ জন কাউন্সিলরের মাধ্যমে এলাকার নিম্ন-মধ্যবিত্ত প্রায় ১৩ হাজার মানুষের মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার কেজি চাল বিতরণ করেছেন সেলিম ওসমান। শহর ও বন্দরের মানুষদের করোনা রোগের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে চারটি ভাড়া করা অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করেন তিনি।

অন্যদিকে শামীম ওসমানের ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে ১০ হাজার স্যানিটাইজার ও ১০ হাজার মাস্ক প্রদান করেন। এবং তার ডাকে সাড়া দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডসহ ফতুল্লা এলাকায় অয়ন ওসমানের ব্যক্তিগত অর্থায়নে সড়কে জীবানুনাশক পানি স্প্রে এবং ৫ হাজার পরিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন।

এ ছাড়া নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন শামীম ওসমানের স্ত্রী জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান সালমা ওসমান লিপি। তিনি তার ব্যক্তিগত অর্থায়নে গত একমাসে ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর ও শহর এলাকায় রাতের আধারে প্রায় ৬ হাজার পরিবারে খাদ্য সামগ্রী উপহার হিসেবে পাঠিয়েছেন।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন মিয়া বলেন, ‘ঐহিত্যবাহী এই পরিবার বারবারই প্রমাণ করেছে তারা সাধারণ মানুষের পাশে ছিল এবং আছে। তারা অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলেই জনগণ তাদের ডাকে সব সময়ই সাড়া দেন।’

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক ডা. দেবাশীষ সাহা বলেন, ‘চিকিৎসকসহ করোনা স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিতরা যেভাবে আক্রান্ত হয়েছেন তাতে আমরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছি। তারপরও আমরা কাজ করছি কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা করার পেছনে দুই সাংসদের যে অবদান রয়েছে তা এই জেলার চিকিৎসক সমাজ কখনও ভুলবে না।’

নারায়ণগঞ্জ কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ ড. প্রফেসর শিরিন বেগম জানান, ‘করোনার এই চরম পরিস্থিতিতে পুরো ওসমান পরিবার যে অবদান রেখেছেন এবং রাখছেন তা পুরো দেশের মধ্যে একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।’

এ বিষয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘যারা আমাদের উপহার গ্রহণ করেছেন তারা আমাদের ওপর দয়া দেখিয়েছেন, ভালোবাসা দেখিয়েছেন বলেই মনে করি আমি। কারণ রিজিকের মালিক আল্লাহ। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার একজন কর্মী হিসেবে মানুষের পাশে থাকা শিখেছি।’

শামীম ওসমান বলেন, ‘মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা পরিবারের কাছ থেকেই পেয়েছি। সাধারণ মানুষের ভালোবাসা ছাড়া চাওয়া পাওয়ারও কিছু নেই আমাদের। সেটুকুই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আমাদের জন্য।’

তিনি বলেন, ‘জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যিনি ইতিমধ্যে “মাদার অব হিউমিনিটি” উপাধি পেয়েছেন। মানবতার মা। তিনি দিনরাত ক্লান্ত পরিশ্রম করছেন মানুষের জন্য। বিশেষ করে এই দুর্যোগময় মুহূর্তে অসহায় মানুষের জন্য। যারা খাদ্যের জন্য কষ্ট করতে পারে।’

‘সরকারি সাহায্য আসছে, সেটা সরকারি লোকজন বিতরণ করছে। আমি আমারটা করছি। কারণ সরকারি সাহায্যের বাইরেও আমার সাহায্য দেওয়ার ক্ষমতা আছে। আমি করছি। কারণ এখনই পরীক্ষা দেওয়ার সময়। বিপদে পড়লে মানুষ যদি আমাকে কাছে না পায় তাহলে কিসের জন্য কার জন্য রাজনীতি করি। তার চেয়ে বড় কথা হলো এখন এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে যা করছি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে খুশি করার জন্য করছি’, যোগ করেন শামীম ওসমান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here