করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হলে কী হবে

0
50

বাংলা খবর ডেস্ক:

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। মহামারি এ ভাইরাসে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন বিশ্বের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫ লাখের বেশি। ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর চেষ্টায় লকডাউনে ঘরবন্দি পুরো বিশ্ব। এমন পরিস্থিতিতে দেশে দেশে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের। তবে শেষপর্যন্ত যদি তারা কার্যকর কোনো ভ্যাকসিন তৈরিতে সক্ষম না হন, তখন কী হবে! এমন আশংকাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা।

তারা বলছেন, কোনো দিন করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হলে মানবসমাজ এ ভাইরাসের সঙ্গে নিজেদের ধীরে ধীরে খাপ খাওয়াতে শিখবে। তবে প্রতি বছর এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটবে। বৈশ্বিক মৃত্যুহার বাড়তে থাকবে। খবর সিএনএনের।

চীনের উহান শহর থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্বে। চীন থেকে ছড়ালেও এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে ইউরোপ, আমেরিকার দেশ। আর তাইতো চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানিসহ বিশ্বের বহু দেশ এখন করোনার ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে চলছে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ। কিন্তু বহু বিশেষজ্ঞের মতে, শিগগিরই এ ভাইরাসের ভ্যাকসিন পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ, এর আগেও কিছু কিছু ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। যেমন, ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মার্গারেট হেকলার ঘোষণা করেন যে বিজ্ঞানীরা এইচআইভির কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছেন। পরীক্ষামূলক প্রয়োগের দুই বছর পর এমনটা ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু চার দশকে ভাইরাসটিতে প্রায় তিন কোটি ২০ লাখ মানুষ মারা গেলেও এখনও এইচআইভির কার্যকর ভ্যাকসিনের দেখা মেলেনি। তাই করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও ভ্যাকসিন তৈরি না হওয়ার আশংকা অমূলক নয়।

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দূত হিসেবে কাজ করছেন লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক ডা. ডেভিড নাবারো। করোনার ভ্যাকসিন বিষয়ে তিনি বলেন, এখনও বহু ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। এর আগে এইচআইভি, ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য কিছু ভাইরাসের কোনো কার্যকর প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। করোনার ভ্যাকসিনও শিগগিরই আবিষ্কার হবে এমন নিশ্চয়তা এখনও আমরা পাইনি।

যদিও অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ বলেছেন, নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার হবেই। এক্ষেত্রে ১৮ মাস সময় লেগে যেতে পারে বলে আগেই জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের পরিচালক ডা. অ্যান্টনি ফাউসি।

ইংল্যান্ডের প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা ক্রিস হোয়াইটিও বলেন, করোনার ভ্যাকসিন পেতে বছর খানেক লাগতে পারে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনের বেলর কলেজ অব মেডিসিনের ডিন ডা. পিটার হোটেস বলেন, এক বছর থেকে ১৮ মাসের মধ্যে করোনার ভ্যাকসিন তৈরি হওয়ার বিষয়টি আমরা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে তার মানে এই নয় যে, সেটি অসম্ভব। সম্ভব হলে তা হবে, খুবই নায়কোচিত অর্জন।

গবেষকরা বলেন, একেবারেই যদি করোনার কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হয়, তবে জীবন হবে অন্যরকম। নটিংহাম ইউনিভার্সিটির এপিডোমোলজি অব ইনফেকশাস ডিজিজের ইমেরিটাস অধ্যাপক কেইথ নীল বলেন, করোনার ভ্যাকসিন না পাওয়া গেলে আগের মতো জীবনযাপন স্বাভাবিক থাকবে না। যেহেতু লকডাউন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নস্যাত করে, রাজনৈতিকভাবেও অসম্ভব, তাই আমাদের তখন বিকল্প চিন্তা করতে হবে। অন্যভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

এ বিষয়ে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক ডা. ডেভিড নাবারো বলেন, তখন দেশে দেশে সামাজিক রীতিনীতি পাল্টে যাবে। তখন মানুষ বাঁচতে নিজেরাই একাকিত্ব বা বিচ্ছিন্নতা মেনে চলবে। সঙ্গনিরোধ জীবনের অংশ হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here