কিশোর-মুশতাক-কাজলদের বিরুদ্ধে মামলা, রাষ্ট্রযন্ত্র আসলে কার স্বার্থে?

0
120

মঞ্জুরুল আলম পান্না :
করোনার অর্থনৈতিক অভিঘাত মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর তড়িৎ সিদ্ধান্তে প্রায় লাখো কোটি টাকার প্রণোদনার বাইরে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এসব টাকার মোটা একটা অঙ্ক উধাও করার পরিকল্পনায় দুর্নীতিবাজদের অনেকেরই যে নির্ঘুম রাত কাটছে, তা নিয়ে কি কারও কোনো সন্দেহ আছে? সেই সন্দেহ যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে করতে পারেন, তবে সাধারণ মানুষ কেন প্রকাশ করতে পারবে না? সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে নিয়ে প্রতিবাদের রেশ কাটতে না কাটতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় আটক করা হলো কার্টুনিস্ট কবির কিশোর এবং লেখক মুশতাক আহমেদকে। তাদের অপরাধটা কী? ফেসবুকে তারা কি কেবল সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে? আর সরকারবিরোধী বক্তব্য দিলেওবা কেন নেমে আসবে অত্যাচারের খড়গ? আর কতো?
করোনা দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দেওয়া সরকারের ত্রাণ নিয়ে কেউ দুর্নীতি করলে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবারই কঠোর হুঁশিয়ারি উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে নিয়মিত ভিডিও কনফারেন্স কিংবা করোনা মোকাবেলায় তার ৩১ দফা নির্দেশনাতেও দুর্নীতিবাজদের কাউকে ক্ষমা করা হবে না বলে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন। এমনকি চিকিৎসকদের জন্য এন-৯৫ মাস্ক নিয়ে উঠা দুর্নীতির প্রসঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বেগ প্রকাশ করতে হয়, সতর্ক করতে হয় সংশ্লিষ্টদের। তারপরও স্পষ্ট করে বলতে পারি, দুর্নীতি থেমে নেই। প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দুর্নীতিবাজরাই যেখানে বিচারকের আসন দখল করেন, শাস্তি ভোগ করতে হয় উল্টো দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রশ্ন উথাপনকারীদের, সেখানে এই সন্দেহ মোটেই অমূলক কিছু নয়। মাস্কের বিষয়ে প্রশ্ন তোলায় এবং স্বাস্থ্য সচিবের বিরুদ্ধে কথা বলায় চিকিৎসকদের করা হয় ওএসডি অথবা শোকজ। এক্ষেত্রে লেখক-সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষ যে হয়রানির বাইরে থাকবে তা আমরা ভাবি কী করে। কবির কিশোর আর মুশতাক আহমেদের ফেসবুক ওয়াল ঘেঁটে দেখলাম বেশ সময় নিয়ে। শুধু করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বা সরকারের বিরুদ্ধে কার্টুন বা সমালোচনা নয়, তাদের ওয়ালজুড়ে রয়েছে সরকারেরই শত্রু আরও অনেকের বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিবাদ, তীব্র ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ। সেখানে তারেক রহমান-সহ বিএনপির অনেক নেতার বিরুদ্ধে কঠিন কটাক্ষ যেমন রয়েছে, তেমনি ছড়িয়ে রয়েছে যুদ্ধাপরাধের মাস্টার মাইন্ড গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ঘৃণা কিংবা জামায়াত-শিবির থেকে বেরিয়ে আসা নবগঠিত দল ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’র বিরুদ্ধে লেখা। একইভাবে একাধিক সিনিয়র সাংবাদিকের বিতর্কিত কর্মকা-ের বিরুদ্ধেও রয়েছে অনেক কথা, তীর্যক মন্তব্য রয়েছে হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে।
সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জাগে, প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করছে আসলে কারা? ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিশেষের স্বার্থ উদ্ধারে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে যে রাষ্ট্রযন্ত্র, সেই যন্ত্রের চালক আসলে কারা? ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম ভাঙিয়ে কবির কিশোর-মুশতাক-কাজলের মতো মানুষদের নির্যাতন করে বেনিফিশায়ারি আসলে কারা হচ্ছেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি একটু সদয় বিবেচনা করবেন? কারণ ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিশেষের সব দায় এসে পড়ছে আপনার কাঁধে। দেশের কল্যাণে আপনার একক ভূমিকাগুলোর সবই বিতর্কিত হয়ে পড়ছে অত্যুৎসাহী-দালাল-দুর্নীতিবাজদের কারণে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার শত্রু সংখ্যা এখন অনেক। ঘরে বাইরে, সব জায়গায়। দুঃসাধ্য অনেক কিছুই করছেন আপনি। কিন্তু মুখোশধারীদের মুখোশ খুলতে পারছেন না, সেটিই বড় ভয়।

লেখক : সাংবাদিক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here