চেয়ারম্যান ছেলেকে বানালেন দিনমজুর , মেম্বার সাজলেন শ্রমিক

0
93

বাংলা খবর ডেস্ক:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বাদৈর ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) মো. কাউছার মিয়া প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের যে তালিকা করেছেন তাতে রয়েছে ছেলে নূর মোহাম্মদ, আপন ছোট ভাই জাহের মিয়ার নাম। দিয়েছেন দুই ছেলে প্রবাসে থাকা বাছির মিয়ার নামও।

আরো একধাপ এগিয়ে ওই উপজেলার মেহারি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আলম মিয়া। দুই ছেলেসহ পরিবার ও স্বজনদের ১৯ জনের নাম তালিকায় উঠিয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে দুই হাজার ৫০০ টাকা করে পেয়েও গেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের নগদ টাকা নিয়ে নয়-ছয় হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকাতে। এ যেন আমরা আর তোমরা মিলে টাকা রেখে দেওয়ার মহোৎসব। আত্মীয়-স্বজন তো বটেই নিজেদের নামও দিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা! টাকা নিজের ঘরে নিতে ছেলেকে দিনমজুর বানিয়েছেন চেয়ারম্যান আবার মেম্বার নিজেই সেজেছেন নির্মাণ শ্রমিক।

এরই মধ্যে ওই উপহার তৈরিসহ অন্যান্য অনিয়মেয় অভিযোগে জেলার চারজন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। অনিয়ম বিষয়ে অভিযোগ উঠলে স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণেই তাঁদেরকে এ ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোট ৭৫ হাজার পরিবার টাকা পাওয়ার কথা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেহারি ইউনিয়ন পরিষদের করা ৫৮৮ জনের তালিকায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলম মিয়া নিজের ছেলে, আপন দুই ভাই ও বোনসহ পরিবার এবং নিকট আত্মীয়দের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি নিজ এলাকা ৪নং ওয়ার্ডের শিমরাইল সাতপাড়া গ্রাম থেকেই অন্তত ১২০ জনের নাম দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, ৬০ নম্বর ক্রমিকে চেয়ারম্যানপুত্র মো. আরাফাত আলম, ১৩৩ নম্বরে চেয়ারম্যানের আপন বড় ভাই ইউনুছ মিয়া, ৩২২ নম্বরে আপন ছোট ভাই ছোটন মিয়ার নাম রয়েছে। এছাড়া ২১২ নম্বরে থাকা জরিনা বেগম, ১২১ নম্বরে থাকা জোহরা বেগম, ১১৭ নম্বরে থাকা মমতাজ বেগম, ৪৯ নম্বরে থাকা কাজাল মিয়া, ৩৯১ নম্বরে থাকা সেন্টু মিয়া, ৪৭৭ নম্বরে থাকা নয়ন মনি (প্রবাসীর স্ত্রী), ১৭৯ নম্বরে থাকা রুস্তম মিয়া, ৩২৮ নম্বরে নিলুফা বেগম, ৩৪৪ নম্বরে থাকা আলেয়া বেগম, ৫১২ নম্বরে থাকা ছাত্তার মিয়া, ৫৪৪ নম্বরে থাকা সুমন মিয়া, ০২ নম্বরে থাকা রফিয়া আক্তার, ৬৩ নম্বরে থাকা লাইলী আক্তার, ১০১ নম্বরে থাকা সেলিনা বেগম, ১১১ নম্বরে থাকা গোলাম মোস্তফা ও ৫৩৫ নম্বরে থাকা আল আমিন ওই চেয়ারম্যানের নিকট আত্মীয়। আরাফাত আলমের নামের নামে দিনমজুর লেখা রয়েছে।

এদিকে বাদৈর ইউনিয়নের তালিকার ২০৮ নম্বরে থাকা দানু মিয়া হলেন ওয়ার্ড মেম্বার কাউছার মিয়ার ছেলে। এছাড়া কাউছার মিয়ার আপন ভাই জাহের মিয়ার নাম আছে ২২৩ নম্বরে। ২২২ নম্বরে নাম থাকা বাছির মিয়ার দুই ছেলে প্রবাসে রয়েছে।

এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের সদস্য হারিছ মিয়া ও হাছান মিয়া ঈদ উপহারের তালিকায় নিজেদের নাম বসিয়ে দিয়েছেন। তালিকার ২৪৭ নম্বরে হারিছ মিয়া, ৬১৭ নম্বরে রয়েছে হাসান মিয়ার নাম। ওই দুজনই নিজেদের পেশার পাশে নির্মাণ শ্রমিক লিখেছেন।

এ প্রসঙ্গে বাদৈর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য কাউছার মিয়া বলেন, ‘তালিকা তৈরি করতে গিয়ে চারবার সংশোধন করা হয়েছে। সর্বশেষ সংশোধন করতে গিয়ে হাতে সময় না থাকায় ছেলের নাম বসিয়ে দিয়েছি। আর আমার আপন ভাই খুবই গরীব ও স্ত্রী প্রতিবন্ধী বিধায় নাম দিয়েছি। বাছির মিয়ার দুই ছেলে বিদেশে থাকলেও তাঁদের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ।’

মেহারি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আলম মিয়া বলেন, ‘আমার দুই ছেলের মধ্যে আলমের নাম কেটে দিয়েছি। আরেক ছেলে মাসুমের মোবাইল ফোনে আসা টাকাটা আরেকজনকে দিয়ে দিয়েছি। আমার এক ভাই গরীব বলে তাই নাম তালিকায় দেই। এর বাইরে আমার আর কোনো আত্মীয়ের নাম তালিকায় নেই।’

মজলিশপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হারিছ মিয়া জানান, কিভাবে কি হয়েছে সেটা তিনি জানেন না। তাড়াহুড়া করে তালিকা করতে গিয়ে ভুল হয়ে থাকতে পারে। এ বিষয়ে খোঁজ পেয়ে ইউএনও আসার পর সবাই বলে দিয়েছে যে এটা ভুল হয়েছে। তবে হারিছ মিয়া দিনমজুর নন বলে স্বীকার করেছেন।

হাসান মিয়া বলেন, ‘আমি সহজ সরল মানুষ। আমি স্বাক্ষর করতে পারি না। গ্রামের মানুষ আমারে মেম্বার বানাইছে। আপনি তদন্ত করে দেখেন কেও বলতে পারবে না আমি খারাপ মানুষ। এটা কিভাবে কি হয়েছে আমি বুঝতে পারছি না। নির্বাচনের সময় করা আইডি কার্ডের ফটোকপির একটি এখানে চলে গিয়ে এটা হতে পারে। এ ঘটনা জানার পর তিন দিন ধরে আমার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ।’
সূত্র: কালের কন্ঠ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here