বাজেট: রেমিট্যান্সে ২% প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে

0
129
ছবি: সংগৃহীত

বাংলা খবর ডেস্ক:
করোনা ভাইরাসের মহামারীর মধ্যেও রেমিট্যান্স না কমায় ২ শতাংশ হারে প্রণোদনাকেও কারণ হিসেবে দেখছিল সরকার। এজন্য এ খাতে প্রণোদনা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

গতকাল বৃহস্পতিবার ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বাজেট উপস্থাপনের সময় এ ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী। বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে আরও ২ টাকা যোগ হয়ে মোট ১০২ টাকা পেয়েছেন। আগামী অর্থবছরেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

প্রসঙ্গত বর্তমানে বিশ্বের ১৭৪টি দেশে ১ কোটি ২০ লাখ অভিবাসী কর্মরত রয়েছে। এ অভিবাসীদের পাঠানো অর্থ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে আগের অর্থবছরের ১২ মাসের সমান রেমিট্যান্স এসেছে।

ওদিকে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক ও করভার কমানোর পাশাপাশি রাজস্ব আয় বাড়াতে ও বিলাস পণ্যে মানুষের ব্যয় নিরুৎসাহিত করতে বেশকিছু পণ্যে শুল্ক ও কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলোর স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ও ওষুধে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) অব্যাহতি দেয়াসহ যেসব পণ্যে শুল্ক ও করভার বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে, সেগুলোর দাম সঙ্গত কারণেই কমার কথা। অন্যদিকে প্রসাধন সামগ্রী, মোবাইল ফোন সেবা, গাড়ির নিবন্ধন মাসুল, প্রক্রিয়াজাতকৃত মুরগির মাংসসহ যেসব পণ্যে শুল্ক-কর বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে সেগুলোর দাম বাড়তে পারে। বৃহস্পতিবার নতুন অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

দাম বাড়তে পারে যেসব পণ্যের:
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত তথ্য-প্রযুক্তি খাতের লোডেড পিসিবি (প্রিন্টার সার্কিট বোর্ড), আনলোডেড পিসিবি এবং রাউটারের ওপর পাঁচ শতাংশ মূসক আরোপ করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। আসবাবপত্রের বিপণন কেন্দ্রের ওপর মূসক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাত ৭ শতাংশ করায় সেখানে বিক্রীত পণ্যের দাম বাড়তে পারে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লঞ্চ সার্ভিসের মূসক দ্বিগুণ করে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে বাড়তে পারে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত লঞ্চের ভাড়া। কার ও এসইউভির নিবন্ধনসহ বিআরটিএর অন্যান্য মাসুলের ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকায় গাড়ি নিবন্ধনের খরচ বাড়বে। চার্টার্ড বিমান ও হেলিকপ্টার ভাড়ার ওপর সম্পূরক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ করার প্রস্তাব রাখায় এ খাতেও ভাড়া বাড়তে পারে। সব প্রসাধন সামগ্রীর ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাবে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। মোবাইল সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ফলে মোবাইল ফোনে কথা বলা, এসএমএস পাঠানো এবং ডেটা ব্যবহারের খরচও বেড়ে যাবে। সিরামিকের সিঙ্ক, বেসিন ইত্যাদি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করায় বেড়ে যাবে এসব পণ্যের দাম। সিগারেটের চারটি স্তরের মধ্যে তিনটি স্তরের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, একটি স্তরের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ফলে বেশিরভাগ সিগারেটের দাম বাড়ছে। এছাড়া হাতে তৈরি ফিল্টারবিহীন ও ফিল্টারযুক্ত বিড়ির সব স্তরের দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে বাড়ছে বিড়ির দাম। পেঁয়াজের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপের প্রস্তাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। শিল্পের জন্য লবণ আমদানির ওপর শুল্ক হার বৃদ্ধি করার প্রস্তাবে বাড়বে এই পণ্যের দাম। প্রক্রিয়াজাত মুরগির মাংসের অংশ বিশেষ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক হার বাড়ানোর প্রস্তাবে এ পণ্যের দাম বাড়তে পারে। আবার স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয় যেমন- পেরেক, স্ক্রু ও ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ আমদানির ওপর বিদ্যমান শুল্ক হার বাড়ানোর প্রস্তাবে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। তেলনির্ভর বিদ্যুত কেন্দ্র অনুৎসাহিত করতে ফার্নেস অয়েল আমদানিতে যে রেয়াতি সুবিধা দেয়া হতো তা প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বাড়বে ফার্নেস অয়েলের দাম।

দাম কমতে পারে যেসব পণ্যের:
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২-এর কয়েকটি ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। স্থানীয় উৎপাদনমুখী শিল্পের জন্য কাঁচামাল আমদানির ওপর আগাম কর ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে সাধারণভাবে স্থানীয়ভাবে তৈরি সব পণ্যের দাম কিছুটা কমার কথা। কোভিড-১৯ এর পরীক্ষা কিটের আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি পিপিই এবং ফেইস মাস্কসহ সার্জিক্যাল মাস্কের উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া কোভিড-১৯ নিরোধক ওষুধ আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসা পযায়ে মূসক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ফলে কমছে এসব পণ্যের দাম। স্বর্ণ আমদানির ওপর বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে কমতে পারে সোনার দাম। দেশের টেক্সটাইল শিল্প বিকাশের জন্য পলিস্টার, রেয়ন ও অন্যান্য সব সিনথেটিক সুতার ওপর মূসক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে প্রতি কেজিতে সুর্নিদিষ্ট ৬ টাকা করা হয়েছে এবং সব ধরনের কটন সুতার ওপর কর প্রতি কেজিতে ৪ টাকা থেকে কমিয়ে ৩ টাকা করা হয়েছে। এসএমই শিল্পের পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেয়ায় সেসব পণ্যের দাম কমবে। মৎস্য, পোল্ট্রি ও ডেইরি খাতের জন্য সয়াবিন অয়েল কেক ও সয়া প্রোটিন কনসেনট্রেট আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেয়ায় এ দুটি পণ্যের দাম কমতে পারে। দেশের আলু দিয়ে পটেটো ফ্লাস্ক তৈরি ১৫ শতাংশ মূসক কমিয়ে ৫ শতাংশ আরোপের প্রস্তাব করায় পণ্যটির দাম কমতে পারে। একইভাবে স্থানীয়ভাবে ভুট্টার গুঁড়ো (মেইজ স্টার্চ) তৈরির ওপর ১৫ শতাংশ মূসক কমিয়ে ৫ শতাংশে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে এটির দাম কমতে পারে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সরিষার তেলের ওপর মূসক অব্যাহতি দেয়ায় এর দাম কমতে পারে। কৃষি যন্ত্রপাতি যেমন- পাওয়ার রিপার, পাওয়ার টিলার অপারেটেড সিডার, কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার, রোটারি টিলালের মতো পণ্যে ব্যবসায়িক পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি দেয়ায় এসব পণ্যের দাম কমতে পারে। সোলার বিদ্যুত উৎপাদনের সুবিধার্থে সোলার মেশিনের জন্য ৬০ এএমপি পর্যন্ত ব্যাটারি কেনার ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here