৬৫ দিন পর সাগরে উৎসব: ইলিশের রুপালী ঝিলিক

0
97

বাংলা খবর ডেস্ক:
ঝাঁকে ঝাঁকে জালে পড়ছে ইলিশ। তাই রুপালী ঝিলিক জেলেদের মুখে। দীর্ঘ ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার পর প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় আড়ত গুলোতে ফিরেছে কর্ম চাঞ্চল্যতা।
কক্সবাজারে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। গভীর সমুদ্র থেকে মাছ শিকার করে ট্রলার বোঝাই করে জেলেরা ফিরছে আড়ত ঘাটে। শহরের নুনিয়ারছড়া মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (ফিশারি ঘাটে) ইলিশে সয়লাব হয়ে গেছে। ট্রলার থেকে খালাস করা ও হাঁকডাক দিয়ে বেচাকেনার কাজে ব্যস্ত জেলে ও ব্যবসায়ীরা।
জেলেরা জানান, দুইমাস জেলে ও মৎস্যজীবীরা বেকার ছিল। ভরা মৌসুমের অনেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ায় জেলেদের মাঝে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছিল।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বৃহত্তম মাছের আড়ত শতবছরের ঐতিহ্যবাহী ফিশারি ঘাটে, ভোর হতেই জেলেদের হাঁকডাক। তাদের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। হাতে হাতে ইলিশ বোঝাই খাঁচা। চারদিকে রুপালি ইলিশের ছড়াছড়ি। দম ফেলার ফুসরত নেই কারও।
গতকাল শনিবার সরেজমিন দেখা গেল এই দৃশ্য। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই- ৬৫ দিন সামুদ্রিক মাছের সুষ্ঠু প্রজনন ও আহরণ নিশ্চিতে সাগরে সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষে ২৩ জুলাই বৃহস্পতিবার রাতে ইলিশ, লইট্টাসহ নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছের খোঁজে ট্রলার, বোট নিয়ে বেরিয়ে পড়েন চট্টগ্রামের প্রায় ৭০০ জেলে।
শুক্রবার রাতে প্রথমবারের মতো কিছু জেলে ২৫-৩০টি ইলিশ বোঝাই ট্রলার, ২০-২৫টি লইট্টা মাছ বোঝাই ট্রলার এবং পাঁচটি অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ বোঝাই ট্রলার নিয়ে ফিশারি ঘাটে ফেরেন। গতকাল শনিবার সকালে ট্রলার থেকে ইলিশসহ এসব সামুদ্রিক মাছ আড়তে নিয়ে আসা হয়। পুরো ফিশারিঘাটের ‘দখল’ নেয় মাছের রাজা ইলিশ।
এদিন ৭০০-৮০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি মন ১৮ হাজার, ৫০০-৬০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি মন ১৪ হাজার টাকায় এবং এর চেয়ে ছোট ইলিশ প্রতি মন ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হয় ফিশারি ঘাটে।
লইট্টা মাছ বড়, মাঝারি এবং ছোট- এই তিন আকারভেদে কেজি প্রতি ৮০, ৭০ এবং ৬০ টাকায় বিক্রি করেন আড়তদাররা। মাইট্টা মাছ কেজি প্রতি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, চইখ্যা মাছ কেজি প্রতি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করা হয় ফিশারি ঘাটে।
কয়েকটি আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, ট্রলার থেকে ইলিশ নিয়ে আড়তে সাজিয়ে তা বাজারজাত করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রান্তে। জেলেদের ধরা ইলিশ আড়তে তুলে হাঁকডাক দেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত দামে সেসব ইলিশ কিনে নিচ্ছেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারি ক্রেতারা। এরপর দূর-দূরান্তে নেওয়ার জন্য ড্রামে সংরক্ষণ করা হচ্ছে মাছগুলো।
জেলেদের হাত থেকে আড়তদার, সেখান থেকে পাইকার এবং বেপারিদের হাত ঘুরে এসব মাছ চলে যাচ্ছে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কাঁচা বাজারে।
ফিশারি ঘাটের সোনালি যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আলী জানান, সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা সাগরে থেকে মাছ নিয়ে ফেরায় ফের কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে ফিশারি ঘাট।
তিনি বলেন, প্রথম দিন ইলিশসহ কিছু সামুদ্রিক মাছ চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারের মাছ বিক্রেতারা কিনেছেন। বাকি মাছ কোল্ড স্টোরেজে রাখা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতির এই নেতা বলেন, করোনার এই সময়ে যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ্য বিধি মেনে আমরা মাছ বিকিকিনি করছি। সমিতির পক্ষ থেকে জেলে, আড়তদারদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাছ বিকিকিনি করতে বলা হয়েছে।
ফিশারি ঘাটের জেলে নারায়ন দাশ বলেন, প্রায় দুই মাস ঘরে কাজহীন বসে থাকার পর সাগরে যেতে পারায় আমরা খুশি। আশা করছি- রূপালি ইলিশ আমাদের অভাব ঘুচাবে।
নুনিয়ারছড়া মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আড়ত গুলোতেও দেখা গেল এখন উৎসবমুখর পরিবেশ । সাগর থেকে একের পর এক ইলিশ ভর্তি করে নিয়ে ট্রলার আসছেন আর শ্রমিকরা ট্রলার থেকে মাছ খালাস করে আড়ত গুলোতে নিয়ে যাচ্ছেন। আড়তদাররা খোলা ডাকের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছে। এসব মাছ পিকআপ, ট্রাক ও পরিবহন যোগে দেশে বিভিন্ন বাজারে চালান করতেও দেখা গেছে। এদিকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় এক দিনেই দাম বেশ কমেছে।
রফিক উদ্দিন নামে এক জেলে বলেন, গত মধ্যরাতে সাগর উন্মুক্ত হওয়ার পরে ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে যাই। প্রায় এক সপ্তাহ সাগরে থাকার জন্য পর্যাপ্ত রসদ মজুদ ছিল। কিন্থু সাগরে প্রচুর ইলিশ মাছ থাকায় আমরা সকালে ট্রলার ভর্তি মাছ নিয়ে জেটিঘাটে ফিরে আসি। ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে ।
মাছ ব্যবসায়ী জয়নাল বলেন, বর্তমানে সাগরে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আশা করি জেলেদের জালে যে ইলিশ ধরা পরবে এতেই বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে আনতে পারবে।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার পর গতকাল ( শুক্রবার) মধ্যরাতে জেলেরা প্রায় দু’শতাধিক বোট নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। আজ ( গতকাল শনিবার) সকালে প্রায় ৫০ টি বোট মাছ নিয়ে ফিরে আসে। এরমধ্যে অন্যান্য মাছের পাশাপাশি ইলিশ মাছের সংখ্যা বেশি। সাগরে অবরোধ থাকার কারণে মাছের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এবারে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here