করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় প্রায় অর্ধকোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত

0
120
উত্তরের জেলাগুলোতে বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে রয়েছে লম্বা সময় ধরে।

বাংলা খবর ডেস্ক:
বাংলাদেশে এবার লম্বা সময় স্থায়ী বন্যায় এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধকোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে সরকারি হিসাবেই বলা হচ্ছে।

বন্যাদুর্গত বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপের মাঝে বন্যায় তারা চরম অসহায় পরিস্থিতিতে রয়েছেন।

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, এখন রাজধানীর ঢাকার নিচু এলাকাগুলোর দিকে বন্যা ধেয়ে আসছে এবং মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোতে অবনতি হচ্ছে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, ৩১টি জেলায় করোনাভাইরাস এবং বন্যা-এই দু’টি দুর্যোগ একসাথে মোকাবেলা করাটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের কাজিয়ার চর এলাকার কৃষক সিরাজুল মণ্ডল এক মাসের বেশি সময় ধরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নৌকায় বাস করছেন।

বন্যায় তার বসতভিটা তলিয়ে গেছে। আমন ধানের বীজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবার তিনি কোন আবাদও করতে পারবেন না।

‘বাড়ি ঘর মনে করেন, পানিতে তলায়ে গেছে। এখন নৌকায় আছি। আর আমন বীজতলা সব নষ্ট হয়া গেছে। এবার ফসল কিছু হবে না।”


বন্যায় অসহায় মানুষ।

যমুনা এবং পদ্মাসহ বিভিন্ন নদীর তীর এলাকার মাননুষের কাছে বড় আতংক হয়েছে ভাঙন।

অনেকে চোখের সামনে তাদের ঘরবাড়ি নদী ভাঙনে বিলীন হতে দেখছেন। এমন একটি এলাকা সিরাজগঞ্জের সায়দাবাদ ইউনিয়নের কাউন্সিলর রানী ঘোষ বলছিলেন, বন্যার কারণে ভাঙন বেড়ে যাওয়ায় অনেক মানুষ মুহুর্তেই সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়ছেন।

“করোনার জন্যে লকডাউন গেলো, এখন আবার বন্যা। মানুষের কোন কাজ নাই। আমাদের এলাকায় সব ঘরে ঘরে তাঁত কারখানা। সব পানির নীচে। সরকারি সহায়তা কিছুটা আসছে। কিন্তু এত অসহায় মানুষের মাঝে সেই সাহায্য দিয়া কিছুই হয় না।”

এখন বন্যার পানিতে ঢাকার অনেক নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।


একটু উঁচু জায়গা পেলেই মানুষ সেখানে পলিথিন দিয়ে ঝুপড়ি বানিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন।

ফরিদপুর, শরিয়তপুরসহ মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।

দীর্ঘ সময় বন্যার কারণে এসব জেলাতেও নদী ভাঙ্গনে অনেক ঘরবাড়ি পানিতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

শরিয়তপুর জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জাজিরা এলাকা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত একজন নারী তাদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন।

“বাড়িঘর সহ সব তলায় গেছে। বলার কোন ভাষা নাই। আপনাকে বুঝাতে পারবো না ভাই কতটা অসহায় অবস্থায় আছি। আমরা কোন সাহায্যও পাচ্ছি না।”

বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে একট বড় জনগোষ্ঠী কর্মহীন হয়ে রয়েছেন এবং পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন।

তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মহসিন বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি সামলা দেয়ার চ্যালেঞ্জ বিবেচনা করেই তারা ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দিচ্ছেন।

“অন্য বছরের থেকে এবার যে পার্থক্যটা, তা হচ্ছে, করোনাভাইরাস এবং তার মধ্যেই বন্যা। আমরা পুরোপুরি এটা বিবেচনায় এনেই বন্যা ব্যবস্থাপনা করেছি।”

“যেমন, আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা আমরা অনেক বাড়িয়েছি। এবার এপর্যন্ত ১৬০৩টি করা হয়েছে। যা আগের বছরে অনেক কম ছিল। কারণ যাতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা যায়।”

তিনি আরও বলেছেন, “অন্য বছরের তুলনায় ত্রাণ বরাদ্দ অনেক বেশি দিয়েছি। আজকেও আমি বন্যা কবলিত জেলাগুলোর ত্রাণ কর্মকর্তাদের সাথে সভা করেছি। ত্রাণ বিতরণের মনিটরিং পদ্ধতিটাও এফেক্টিভ করা হয়েছে।”


গবাদিপশু নিয়েও বিপদে রয়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ।

এবার পর তিন দফায় বন্যা আঘাত হেনেছে।

কিন্তু রাজনৈতিক দল এবং এনজিওগুলোর মাঠে এখনও তেমন ত্রাণ তৎপরতা নেই বলে বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন।

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেছেন, আগাষ্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের পর বন্যার পানি কমতে শুরু করতে পারে।

“১৯৯৮ সালে বন্যা দুই মাসের বেশি সময় স্থায়ী ছিল। এবার এক মাসের বেশি সময় ধরে বন্যা চলছে। এই বন্যা স্থায়িত্বের দিক থেকে ৯৮ এর পর দ্বিতীয়।”

সরকারি হিসাবে ৩১টি এই বন্যায় এপর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here