স্যার, ম্যাডাম, ওরে বাটপার এবং লাপাত্তা পরিচালক, প্রযোজকেরা

0
116

সাজেদুল হক

স্কুল জীবনে ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইডের কাহিনী পড়েছি। একই ব্যক্তি কীভাবে দিনের বেলায় ভালো এবং রাতের বেলায় মন্দ মানুষের ভূমিকা নিতে পারেন তার অপূর্ব বিবরণ। আমরা অবশ্য সম্ভবত স্কটিশ লেখক রবার্ট লুইস স্টিভেনসনের পুরো উপন্যাসটি পড়িনি। সেই যাই হোক মোহাম্মদ শাহেদের আড়ালে চলে যাওয়া শাহেদ করিম প্রকাশ্যে আসাতে বারবারই সেই কাহিনী মনে পড়ছে।
শাহেদ ও সাবরিনা আখ্যান নিয়ে গত কয়দিন অনেক চর্চা হয়েছে। অবশ্য ডা. সাবরিনার মানুষের জীবন নিয়ে ভয়ঙ্কর খেলা প্রসঙ্গে যত কথা হয়েছে তার চেয়ে বেশি কথা হয়েছে তার রূপ আর নানা ভঙিমার ছবি নিয়ে। তবে শাহেদের কাহিনী খানিকটা বিস্ময় জাগানিয়া। প্রতারণা মামলার একজন পলাতক আসামি কীভাবে টকশো টেবিলে জাতিকে জ্ঞান দিতেন আর অবাধে যাতায়াত করতেন রাষ্ট্রের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে, সেটা একটা প্রশ্ন বটে।
এখন, কথা হলো, শাহেদ-সাবরিনারা কি কোন রূপকথার গল্প নাকি এরা আমাদের সমাজের একেবারে পরিচিত চরিত্র। ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড তো আমরা আমরাই।

রূপের হয়তো হেরফের হতে পারে। কিন্তু আইনের শাসনের হাত গলে এমন কত মানুষই না আমাদের চারপাশে রয়েছেন। তারাই সময়ের হর্তাকর্তা। তারাই আঙ্গুল উচিয়ে বলেন, কেউ রেহাই পাবে না। সম্রাট, পাপিয়া, শাহেদ, সাবরিনারা ধরা পড়েন। আমরা বিপুল হাততালি দেই। কিন্তু গল্পের পেছনের গল্প আর জানতে পারি না। শাহেদ বা সাবরিনার কারো দ্বারাই একা একা এই গল্প টেনে নেয়া সম্ভব ছিলো না। ব্যঙ্গাত্মক সাইট ইআরকিতে এটা যথার্থই বলা হয়েছে, শাহেদ-সাবরিনা সিনেমার এক্সট্রা চরিত্র। বড়জোর আমরা এদের খলনায়ক বলতে পারি। কিন্তু যারা পরিচালক, প্রযোজক, পরিবেশক তারা কোথায়? নায়কদেরই বা খবর কি? মেডিকেল টেস্টের ব্যাপারে কোন অভিজ্ঞতা ছিল না জেকেজির? তবুও কেন কাজ পেয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। ধরা পড়ার আগে সাবরিনা দাবি করেছিলেন, জেকেজির টেস্ট জালিয়াতির বিষয়টি তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে আমরা কোনো শক্ত প্রত্যাখ্যান দেখি না। পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, অধিদপ্তরের পদত্যাগী মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের নির্দেশেই জেকেজিকে কাজ দেয়া হয়েছিল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আজাদ সাহেব পদত্যাগ করেই কি সব বিচারের উর্ধ্বে উঠে গেলেন। এই কারণেই কি জাতির তার কাছে কৃতার্থ থাকা উচিত। নাকি তার ব্যাপারে কোন তদন্ত হবে। স্বাস্থ্যের ব্যাপারে প্রতিদিনই যে দুর্নীতির নানা খবরাখবর বের হচ্ছে এর কোনো দায় কি তার নেই?
গত কয়দিনে এটাও একটা ট্রেন্ড। কেউ ধরা পড়লে তাদের গডফাদারদের নিয়ে নানা কথা শোনা যায়। তালিকা হয় লম্বা-ছোট। ডিজিটাল আইনের যুগে সংবাদপত্র সব লিখতে পারে না। কিছু লিখে আকার-ইংগিতে। কিন্তু কয়দিন পরেই এসব নাম হারিয়ে যায়। নতুন ঘটনা সামনে চলে আসে। লোকে সব ভুলে যায়। যেমন শাহেদ-সাবরিনা আখ্যান কিছুটা স্তিমিত হয়ে এসেছে। গডফাদাররা ধরা পড়বেন না তার চিত্র মোটামুটি পরিষ্কার। এরইমধ্যে আলোচনায় এসেছে জাদিদ অটোমোবাইলস। অনলাইন সংবাদমাধ্যম সারাবাংলা খবর দিয়েছে, সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহের কাজ পেয়েছিল এ অটোমোবাইল কোম্পানিটি। চুক্তি অনুযায়ী ৪৫ দিনের মধ্যে সরবরাহের কথা ছিল এসব সামগ্রীর। ৮৪ দিনে একটি পণ্যও সরবরাহ করেনি। অথচ এরইমধ্যে নয় কোটি ৫৭ লাখ টাকার বিল তুলে নিয়েছে কোম্পানিটি।
লোকে অবশ্য এখন আর এসব দুর্নীতি দেখে বিস্মিত হয় না। তারা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। মেনে নেয়া ও মানিয়ে নেয়াই এখনকার নিয়ম। পরিচালক-প্রযোজকরা সামনে না আসা পর্যন্ত এটা চলতেই থাকবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here