সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা হত্যা: বোনের মামলা

0
86

বাংলা খবর ডেস্ক:
কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের শামলাপুরে পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস (৪২)। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ টেকনাফ উপজেলার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারহার আদালতে মামলাটি দায়ের করেন তিনি।

মামলায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইন্সপেক্টর লিয়াকতকে প্রধান আসামি ও টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে দ্বিতীয় আসামি করে আরও ৭ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফার নেতৃত্বে এ মামলা দায়ের করা হয়।

এজাহারটি মামলা হিসেবে গ্রহণে টেকনাফ থানাকে নির্দেশনা দিয়েছেন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারহা। মামলা নথিভুক্ত করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে নথিসহ আদালতকে অবহিত করার কথাও বলা হয়েছে। পাশাপাশি মামলাটি তদন্তে র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ককে দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত। মামলা করে বের হয়ে আদালত চত্বরেই সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা ও মামলার বাদী নিহত মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া।

এর আগে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছে একটি মাইক্রো যোগে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে পৌঁছান মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া। সেখান থেকে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফার চেম্বারে অবস্থান করে মামলার প্রস্তুতি নেন তিনি। তার সঙ্গে পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন।

গত শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান (৩৭)। ঐ ঘটনার পর প্রথমে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাহজাহান আলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হলেও পরবর্তী সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক পুনর্গঠন করা কমিটিতে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করা হয়েছে। কমিটিতে রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের একজন প্রতিনিধি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির একজন প্রতিনিধি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। কমিটিকে সরেজমিন তদন্ত করে ঘটনার কারণ, উত্স অনুসন্ধান এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, তার করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট মতামত দিতে বলা হয়েছে। এরপর থেকে তদন্ত টিমের প্রতিবেদনে দৃষ্টি নিবন্ধন হয়ে আছে সবার।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, সেনাবাহিনী থেকে ২০১৮ সালে স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়া মেজর সিনহা রাশেদ খান ‘জাস্ট গো’ নামের একটি ফ্লিমের শ্যুটিং করার জন্য এক মাস আগে কক্সবাজারের হিমছড়িতে এসে নীলিমা রিসোর্ট নামে একটি হোটেলে দুই কক্ষ ভাড়া নিয়ে অবস্থান করছিলেন। এ সময় মেরিন ড্রাইভের বিভিন্ন স্পটে শুটিং করে তার টিম। ৩১ জুলাই বিকেলে বাহারছড়া ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা থেকে শহিদুল নামের এক কিশোরকে নিয়ে মাথাভাঙ্গা ও মারিশবনিয়ার একটি পাহাড়ে উঠে পছন্দসই শট নেন। কিশোরটি তাদের পথ দেখিয়ে ফিরে এলে তারা লাইটের আলো জালিয়ে কাজ করেন। এতে স্থানীয় অনেকেই অপরিচিত লোকজন দেখে কৌতূহল ও নানা রকম ধা করতে থাকেন। সন্ধ্যা শেষে রাতের শুরুতে গন্থব্যস্থলে ফেরার জন্য রওনা দেন তারা। পথে প্রথমে টেকনাফ সড়কের ২ বিজিবির চেকপোস্ট পার হন। পরে বাহারছড়া পুলিশের তদন্তকেন্দ্রের তল্লাশি চৌকিতে পৌঁছালেই গাড়ি থেকে নামতে বলা হয় তাকে। তিনি হাত উঁচু করে নামার অল্পক্ষণে পুলিশের গুলিতে ঢলে পড়েন। এ সময় তার সঙ্গে থাকা সঙ্গী সিফাতকেও পায়ে গুলি করে আটকে রেখে তদন্তকেন্দ্রে নেওয়া হয়।

ঘটনাটি তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরপরই শনিবার বিকেলে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত হোসেনসহ পুলিশের ২০ সদস্যকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here