চলে গেলেন রাহাত খান

0
140

বাংলা খবর ডেস্ক:
একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাহাত খান আর নেই। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর নিজ বাসায় তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

রাহাত খানের স্ত্রী অপর্ণা খান গত রাতে বলেন, ‘উনার (রাহাত খান) শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শনিবার (আজ) তাঁকে সমাহিত করা হবে। রাতে মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়েছে।’

গত ২০ জুলাই রাহাত খানকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগের দিন বাসায় খাট থেকে নামতে গিয়ে কোমরে ব্যথা পান তিনি। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে এক্স-রে করা হলে পাঁজরে গভীর ক্ষত ধরা পড়ে। এর পাশাপাশি তাঁর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে তাঁকে বারডেম হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। যার জন্য তাঁর চিকিৎসাপ্রক্রিয়াটা জটিল হয়ে পড়ায় সার্জারি করা যাচ্ছিল না বলে বাসায়ই অবস্থান করছিলেন।

রাহাত খানের স্ত্রী অপর্ণা এর আগে জানিয়েছিলেন, চিকিৎসকরা ২৯ জুলাই তাঁদের জানিয়ে দিয়েছেন হাসপাতালে থেকে কোনো লাভ হবে না। ডায়াবেটিস, কিডনি, হার্টে সমস্যা থাকার কারণে কোনো সার্জারি করা যাবে না। এ জন্য বাসায় নিয়ে আসা হয়। এরপর থেকে সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকতে হয় রাহাত খানকে।

বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান কথাশিল্পী রাহাত খান। ছোটগল্প ও উপন্যাস উভয় শাখায়ই তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। সাংবাদিক হিসেবেও রাহাত খানের অবদান উল্লেখযোগ্য। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় তিনি ষাটের দশক থেকে কর্মরত ছিলেন। তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকায় সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন।

রাহাত খান ১৯৪০ সালের ১৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার পূর্ব জাওয়ার গ্রামের খান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কথাসাহিত্যিক হিসেবে সমাদৃত হলেও কর্মসূত্রে রাহাত খান আপাদমস্তক সাংবাদিক। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। শিক্ষাজীবন শেষ করে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে যোগদান করেন তিনি।

তারপর একে একে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করেন রাহাত খান।

১৯৬৯ সালে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় সাংবাদিকতা জীবনের হাতেখড়ি রাহাত খানের। পরে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যোগদান করেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩ সালে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় দৈনিক বর্তমান পত্রিকা। সর্বশেষ তিনি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। জনপ্রিয় ও বিখ্যাত থ্রিলার সিরিজ মাসুদ রানার রাহাত খান চরিত্রটি তাঁকে অনুসরণ করেই তৈরি করা।

বর্ণাঢ্য সাংবাদিকতা জীবনে রাহাত খান ছোটগল্প, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও উপন্যাসের নিপুণ কারিগর হয়ে উঠেছেন। ১৯৭২ সালে তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ অনিশ্চিত লোকালয় প্রকাশিত হয়। তাঁর উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—অমল ধবল চাকরি, ছায়াদম্পতি, শহর, হে শূন্যতা, হে অনন্তের পাখি, মধ্য মাঠের খেলোয়াড়, এক প্রিয়দর্শিনী, মন্ত্রিসভার পতন, দুই নারী, কোলাহল ইত্যাদি। তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৩), সুহৃদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৫), সুফী মোতাহার হোসেন পুরস্কার (১৯৭৯), আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮০), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮২), ত্রয়ী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), একুশে পদক (১৯৯৬) পেয়েছেন। রাহাত খান ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন।

বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত হবেন রাহাত খান

ওদিকে রাহাত খানকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হবে। আজ শনিবার তাঁকে দাফন করা হবে সেখানে। তার আগে জাতীয় প্রেসক্লাবে জানাজা অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।

রাহাত খানের স্ত্রী অপর্ণা খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘উনার (রাহাত খান) শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শনিবার (আজ) তাঁকে সমাহিত করা হবে। রাতে মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়েছে।’

গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর নিজ বাসায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রাহাত খান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেক বিশিষ্টজন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান কথাশিল্পী রাহাত খান। ছোটগল্প ও উপন্যাস উভয় শাখায়ই তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। সাংবাদিক হিসেবেও রাহাত খানের অবদান উল্লেখযোগ্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here