মসজিদে বিস্ফোরণে মৃত ১৪: আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক

0
105
হাসপাতালে আহত চিকিৎসাধীনরা

বাংলা খবর ডেস্ক:
নারায়ণগঞ্জে মসজিদে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ এ পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন ২৬ জন এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন।

গতকাল শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণের পর আজ শনিবার সকালে তাঁদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।

এর আগে এক শিশুর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন । ৭ বছরের ওই শিশুটির নাম জুয়েল বলে জানিয়েছেন তিনি। তার ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।

নিহতরা হলেন- মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৫), সাব্বির (২২), জুয়েল (১৮), জামাল (৪০), জুবায়ের (৭), হুমায়ন কবির (৭০), মোস্তফা কামাল (৩৪), ইব্রাহিম (৪৩), রিফাত (১৮), জুনায়েদ (১৭) ও কুদ্দুস বেপারী (৭০)।

গতকাল এশার ফরজ নামাজ শেষে মুসল্লিদের অনেকে যখন সুন্নত নামাজ পড়ছিলেন সে সময়েই হঠাৎ গ্যাসের আগুনের সঙ্গে একযোগে বিস্ফোরণ ঘটে মসজিদের ছয়টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র-এসিতে। এর আগে থেকেই মসজিদে গ্যাসের পাইপ থেকে ছিদ্র দিয়ে গ্যাস লিক করে আসার অভিযোগ ছিল। গন্ধ পাওয়া যেত গ্যাসের।

অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের পর মুসল্লিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হুড়াহুড়ি করে অনেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁদের আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে যায়। ততক্ষণে বেশির ভাগ মুসল্লি দগ্ধ হন।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বাইতুস সালাম জামে মসজিদে গতকাল শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। দগ্ধ মুসল্লিদের বেশির ভাগেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৩৮ জনকে ভর্তি করা হয়। তাঁদের সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছিলেন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। পরে তাদের মধ্যে ১১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন তিনি।

বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, দগ্ধদের শরীরের ৬০-৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

জানা গেছে, মসজিদে ৪০ থেকে ৫০ জনের মতো মুসল্লি ছিলেন। ওই সময় মসজিদে বিদ্যুৎ ছিল না। বিদ্যুৎ আসার পরপরই এসিতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপরই মসজিদে বিদ্যুৎ চলে যায়।

স্থানীয় লোকজন জানায়, মুসল্লিরা আর্তচিৎকার করতে করতে মসজিদের বাইরে বের হন। মসজিদের আশপাশে সড়কে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে তাঁরা গড়াগড়ি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।

ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আরেফিন জানান, ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৯ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এর আগে স্থানীয় লোকজন বেশির ভাগ দগ্ধ ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। দগ্ধদের অবস্থা এত খারাপ ছিল যে তাঁদের শরীরে হাত দেওয়া যাচ্ছিল না।

নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাজমুল হোসেন জানান, রাত ৯টা থেকে একের পর এক দগ্ধ মুসল্লি আসছিলেন। তাঁদের সবার নাম লিপিবদ্ধ করা হয়নি। যাঁরা এসেছেন তাঁদের শরীরের ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। তাঁদের দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো জানান, যে ২০ থেকে ২৫ জন এসেছিলেন, তাঁদের কয়েকজনের শরীরে ৯৯ ভাগ পর্যন্ত দগ্ধ হয়েছে।

মসজিদটি চারতলা। তিনতলা পর্যন্ত জামাত হয়। চারতলার কিছু অংশ মেস। ঘটনার পর সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বিস্ফোরণে সিলিং ফ্যানগুলো বেঁকে গেছে। জানালার কাচ ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়েছে। মসজিদের মেসের ভাড়াটিয়া শাওন জানান, প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে আগুন ও কালো ধোঁয়া চারতলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

মসজিদের মেঝের নিচ দিয়ে গ্যাসের লাইন গেছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পানি ছিটানোর কারণে গ্যাসের বুদ্বুদ্ বের হচ্ছিল। ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন বলেন, গ্যাসের লিকেজের কারণে সম্ভবত এই বিস্ফোরণ। মসজিদটির নিচ দিয়ে তিতাস গ্যাসের লাইন আছে। আর পুরো মসজিদটি থাই গ্লাসে বদ্ধ থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

পরে ঢাকা থেকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশর অ্যান্ড মেইনট্যানেন্স) লে. ক. জিল্লুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মসজিদটি থাই গ্লাসে আবদ্ধ ছিল। নিচ দিয়ে যাওয়া গ্যাসের পাইপের লিকেজ থেকে গ্যাস জমছিল। এই কারণে সম্ভবত বিস্ফোরণ ঘটেছে। সম্ভাব্য অন্যান্য কারণও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মসজিদে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর শোক:

ওদিকে নারায়ণগঞ্জ শহরে মসজিদে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে সর্বদা খোঁজ-খবর রাখছেন এবং আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দুর্ঘটনার খোঁজ নিয়েছেন এবং ডা. সামন্তলাল সেনকে আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here