ইসরাইলের স্বীকৃতি নিয়ে এখনই ভাবছে না ঢাকা

0
101

বাংলা খবর ডেস্ক:
ইসরাইলকে স্বীকৃতির প্রশ্নে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অবস্থানে নাটকীয় পরিবর্তন এলেও বাংলাদেশ এখনই তা নিয়ে ভাবছে না। নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অবস্থান এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এবং ঘোষণা আসবে। সেগুনবাগিচা বলছে,

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্বে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত স্পষ্ট। সংযুক্ত আরব আমিরাত তেলআবিবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে। তারা চুক্তি করতে যাচ্ছে। সৌদি আরবও অলিখিত একটা সম্পর্ক তৈরি করেছে। সুদান, বাহরাইন সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় অনেক দূর এগিয়েছে।

অন্যদের অবস্থানেও নড়াচড়া শুরু হয়েছে। হুজুগ বা কারও দেখাদেখি বাংলাদেশ চটজলদি এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না- জানিয়ে নীতিনির্ধারণী একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ বরাবরই জাতিসংঘ ঘোষিত টু স্টেট থিওরি এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে। ফিলিস্তিনিদের স্বতন্ত্র-স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে জাতিসংঘের যে অবস্থান তার দৃঢ় সমর্থক বাংলাদেশ। এ অবস্থানে সহসা পরিবর্তন না আসার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে এক কর্মকর্তা বলেন, স্পর্শকাতর ফিলিস্তিন-ইসরাইল ইস্যুটির সঙ্গে যতটা না আন্তর্জাতিক বিষয়াদির সম্পৃক্ততা, তার চেয়ে অনেক বেশি বাংলাদেশের জনমত এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতি জড়িয়ে আছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শুরুর দিকে যে ক’টি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব করেছিল, তারমধ্যে ছিল ইসরাইল। ১৯৭২ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ইসরাইল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে চেয়েছিল। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার লিখিতভাবে ইসরাইলের স্বীকৃতির সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। সেটি ছিল মূলত ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সমর্থন। ৫০ বছর পর ইসরাইল প্রশ্নে বাংলাদেশের অবস্থান পরিবর্তন কঠিন দাবি করে ওই কর্মকর্তা বলেন, এর প্রধান বাধা হবে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অবস্থা। কারণ সরকার আচমকা এমন ঝুঁকি নিতে যাবে কেন? ওই কর্মকর্তার মতে, ফিলিস্তিন প্রশ্নে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ডান-বাম একাট্টা। আওয়ামী লীগ- বিএনপি’র অবস্থানও প্রায় অভিন্ন। ফলে এতোদিন কোনো রাজনৈতিক নেতা বা রাষ্ট্রনায়ক ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে চিন্তা করেন নি। তাছাড়া বাংলাদেশিদের পাসপোর্টে ইসরাইল সফরে বারণ রয়েছে। ইসরাইল ছাড়া অন্যান্য দেশে যেতে পারে বাংলাদেশিরা। দীর্ঘদিনের এ অবস্থান পরিবর্তনে পরিবর্তন আনা এবং তাতে মানুষের সমর্থন পাওয়া দুরূহ কাজ হবে। এতে উগ্রপন্থার উত্থানের ঝুঁকির বিষয়টিও সামনে রাখছেন পর্যবেক্ষকরা।

ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন যাচ্ছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি নিজেই তার এই সফরকে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ন হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। সেখানেই সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করবেন। এর মাত্র ৪ দিন পূর্বেই বাহরাইন ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। হোয়াইট হাউজে তার সঙ্গে যুক্ত হবেন সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এ খবর দিয়েছে জেরুজালেম পোস্ট।

মন্ত্রীসভার বৈঠকের পূর্বে নেতানিয়াহু সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বাহরাইনের কিং হামাদ বিন ইসা আল খলিফার সঙ্গে তার উষ্ণতাপূর্ন কথা হয়েছে। তিনি ইসরাইলের সঙ্গে পুরোপুরি শান্তি স্থাপন এবং সবধরনের সম্পর্ক নিশ্চিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

আমরা মাত্র এক মাসের মধ্যেই দুটি আরব রাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করলাম। এই শান্তি হবে উষ্ণ, অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক।

তবে এখনো চুক্তির খসরা পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। এছাড়া, এখনো নিশ্চিত হয়নি যে এই চুক্তিকে শান্তি চুক্তি বলা হবে নাকি সম্পর্ক স্বাভাবিকরণ বলা হবে। জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, কম সময় পাওয়ার কারণে বাহরাইনের সঙ্গে চুক্তির নথি আরব আমিরাতের মতো বিস্তারিত হবে না। ইসরাইল এরইমধ্যে বাহরাইনে দূতাবাস স্থাপনের কাজ শুরু করে দিয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here