ধর্ষণ : ঘৃণা-ধিক্কার অব্যাহত, আইন সংশোধনের দাবি

0
102

বাংলা খবর ডেস্ক:
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে বর্বরোচিত নির্যাতনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল বুধবার তৃতীয় দিনের মতো শাহবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধন ও ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে।

ধর্ষণ প্রতিরোধে গতকালও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের স্লোগানে স্লোগানে কেঁপেছে রাজপথ। তরুণ-যুবাদের প্রতিবাদে উত্তাল ছিল শাহবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক। গতকাল শাহবাগ ছাড়াও ঢাকা কলেজ, প্রেস ক্লাবের সামনে, মতিঝিল, মিরপুর, উত্তরা ও রামপুরা এলাকায় পৃথক মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলা এই কর্মসূচি ঘিরে ছিল পুলিশের কড়া নজরদারি। তবে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন কিংবা মিছিলে বাধা দেয়নি পুলিশ।

শাহবাগে সমাবেশ :
শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে গতকাল তৃতীয় দিনের মতো জড়ো হয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রাখে বাম ধারার ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়নসহ অন্যরা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে সকাল সোয়া ১০টার দিকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ করেছে ‘সেভ আওয়ার উইমেন’ নামের শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্ম। তারা ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানায়।

‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে একই স্থানে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাম সংগঠনের নেতৃত্বে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কালো পতাকা মিছিল করে। মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘যে হাত নিপীড়কের সে হাত ভেঙে দাও’, ‘ধর্ষকদের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘পাহাড় কিংবা সমতলে লড়াই হবে সমান তালে’ ইত্যাদি স্লোগানে ধর্ষকদের বিচারের দাবির পাশাপাশি গতকালও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে। এ সময় ওই সমাবেশে সারা দেশের অনেক নির্যাতিত নারী অংশ নেন।

‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ মুভমেন্টের অন্যতম আহ্বায়ক ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আমাদের এই প্রতিবাদ কর্মসূচি ধর্ষকদের বিরুদ্ধে। আমাদের এই প্রতিবাদ র‌্যালির পাশাপাশি চিত্রাঙ্কন কর্মসূচিও থাকছে।’

দুপুর ১২টার দিকে সেখানে জমায়েত হন ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। পরে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে কালো পতাকা মিছিল নিয়ে মৎস্য ভবন, প্রেস ক্লাব ও পল্টন হয়ে জিরো পয়েন্টে গেলে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। সেখানে নুর বলেন, ‘আজ যদি ধর্ষণের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারি, তবে এ ধর্ষণ বন্ধ হবে না।’ পরে তিনি আগামী শুক্রবার বিকেলে শাহবাগে ‘ধর্ষণ ও গুম-খুনের’ বিরুদ্ধে গণসমাবেশ ও মিছিল করার ঘোষণা দেন।

মিরপুরে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ : ধর্ষণের বিরুদ্ধে গতকাল সকাল ১১টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। দুপুর ২টা পর্যন্ত তারা মূল সড়কে অবস্থায় নেওয়ায় ওই এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ অবস্থান নিলেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। জানতে চাইলে মিরপুর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দুপুর পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা রাস্তায় ছিল।’

উত্তরায় সড়কে বিক্ষোভ :
দেশজুড়ে ধর্ষণ-নিপীড়নের প্রতিবাদে গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় উত্তরা হাউস বিল্ডিং চৌরাস্তায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিতে থাকে শিক্ষার্থীরা। উত্তরা ইউনিভার্সিটির ছাত্রী মোহনা বলেন, ‘ধর্ষণ বন্ধ ও ন্যায়বিচারের দাবিতে আমরা রাস্তায় নেমেছি। কোন মা-বোনের ইজ্জত নিয়ে আমরা খেলতে দেব না।’ সেখানে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘ধর্ষকমুক্ত দেশ চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘আমার দেশে আমার বোন নিরাপদ নয় কেন?’, ‘বাংলাদেশ তুমি কার?’, ‘আমার সোনার বাংলায় ধর্ষকের ঠাঁই নাই’। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সামিয়া জেরিন নামের আরেক শিক্ষার্থী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাসা থেকে বের হলেই আমাদের বাবা-মায়েরা এখন চিন্তায় পড়ে যান। তাঁরা সারাক্ষণ আমাদের নিয়ে ভয়ে থাকেন। এমন সমাজ আমরা চাই না। নিরাপদে বাঁচতে চাই আমরা। কোনো ধর্ষক-নিপীড়কের হাতে দেশ বন্দি থাকতে পারে না।’

মানববন্ধন :
অন্যদিকে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। এ ছাড়া পৃথকভাবে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতি, বাংলাদেশ আঞ্জুমানে আল ইসলাম, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন ও সোনাইমুড়ী জনকল্যাণ সমিতি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here