বাংলা খবর ডেস্ক:
নিউইয়র্কে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা ব্রঙ্কস, জ্যামাইকা, ওজনপার্ক, ব্রুকলিনের ফুলটন এলাকা, ফ্লাশিংসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা এবং ডাকাতির ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। গত ১০দিনে অন্তত তিনজন বাংলাদেশি হামলার শিকার হয়েছেন এবং বেশ কয়েকটি গ্রোসারিতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর ব্রুকলিনে হামলার শিকার হয়েছেন মনির আহমেদ (৩৪), গত ২৯ সেপ্টেম্বর কুইন্সে হামলার শিকার হয়েছেন আক্তারুজ্জামান (৪৫) এবং গত ৬ অক্টোবর সকালে ওজনপার্কে হামলার শিকার হয়েছেন নাজিম উদ্দিন ও তার মেয়ে। এ ছাড়াও জ্যামাইকায় বেশ কয়েকটি গ্রোসারি এবং ডেইলিতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতির সময় বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হয়েছেন এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধুষ্যিত ওজনপার্কের ৭৭ স্ট্রিট ট্রেন স্টেশনে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে গত ৬ অক্টোবর ভোর সাড়ে পাঁচটায়। জানা গেছে, ওজনপার্কের ৭৬ স্ট্রিটে বসবাসরত সিলেটের বড়লেখা উপজেলার সুড়ুইকান্দি গ্রামের নাজিম উদ্দীনের কন্যা প্রতিদিনের মত ম্যানহাটনে কাজে যাওয়ার উদ্দ্যেশ্য রওনা হন। ট্রেন স্টেশনের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার পর ওঁৎ পেতে থাকা দুই কৃষ্ণাঙ্গ যুবক তার ওপর চড়াও হন। তারা প্রথমে তার মানিব্যাগ দিতে বলে। তাতে রাজি না হওয়ায় তাদের মধ্যে চলে কয়েক সেকেন্ড ধস্তাধস্তি। নাজিম উদ্দিনের মেয়ের কপাল ভাল যে ঐ সময় হঠাৎ করে সিভিল পোশাকে ডিউটি ফেরৎ এক সিকিউরিটি গার্ড তাদের সামনে চলে আসেন এবং তিনি অবস্থা বেগতিক দেখে তার সাথে থাকা বন্দুক তাক করামাত্র ছিনতাইকারীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। ততক্ষণে মেয়েটিকে কিল-ঘুষি মেরে নাজেহাল করে ফেলে ছিনতাইকারীরা। সিকিউরিটি গার্ড ৯১১-এ কল দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে কিন্ত তার আগেই ছিনতাইকারীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, মাত্র পাঁচদিনের মাথায় শুধু ওজনপার্কে চারটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় কমিউনিটির সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করেছে। ওজনপার্কের মান্নান সুপার মার্কেটেও ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে ব্রুকলিনের নস্ট্রান এভিনিউ এবং হ্যানকক স্ট্রিটে বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি গ্রোসারি থেকে বাজার করে বাসায় ফেরার পথে মনির আহমেদের সামনে দাঁড়ায় দুই কৃষ্ণাঙ্গ দুর্র্বৃত্ত। তারা তার উপর চড়াও হয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে। তাকে তার নিজের দেশে ফিরে যেতে বলে। তারা প্রথমে মনির আহমেদকে ছুরিকাঘাত করে এবং কিলÑঘুষি মারতে শুরু করে। এক পর্যায়ে রক্তাক্ত মনির মাটিতে পড়ে গেলে দুর্বৃত্তরা তার সেল ফোন এবং পকেট থেকে ওয়ালেট নিয়ে যায়।
জানা গেছে, তার ওয়ালেটে ৫শ ডলারের মত ছিলো। কেউ একজন পুলিশে কল করলে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। পুলিশ আসার আগেই দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এ দিকে পুলিশ মনির আহমেদকে ব্রুকলিনের কিংস কাউন্ট্রি হাসপাতালে ভর্তি করে।
জানা গেছে, মনির আহমেদকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তিনি এখন ভাল রয়েছেন।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ফ্লাশিংয়ে দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হন বাংলাদেশি আক্তারুজ্জামান। তার বাসায় তিনি হামলার শিকার হন। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং রিপোর্ট করেছে।
ওজনপার্কে দুটি দোকানে ডাকাতি : প্রবাসের বাংলাদেশি অধ্যুষিত ওজনপার্কে ও সিটি লাইনে দুটি দোকানে ডাকাতি হয়েছে। প্রথম ঘটনাটি ঘটে ১ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে মান্নান সুপার মার্কেটে। দ্বিতীয় ঘটনা ঘটে ৫ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে সিটি লাইনের এন বি ফ্যাশন দোকানে। প্রত্যক্ষদর্শী একটি সূত্র জানায়, কৃষ্ণাঙ্গদের একটি সংঘবদ্ধ দল আকস্মিক মান্নান সুপার মার্কেটে ঢুকে অস্ত্রের মুখে দুটি ক্যাশ বাক্স থেকে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় একজন প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশে কল দেন। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই দুষ্কৃতকারিরা পালিয়ে যায়। জানা যায়, মান্নান সুপার মার্কেটে ডাকাতির আগে ডাকাতরা পাশের দোকান মান্নান সুইটস রেস্টুরেন্টে ঢুকেছিল। তবে ওই দোকানের কিছু নেয়নি। এদিকে ৫ অক্টোবর সকাল ১০ টার দিকে সিটি লাইনের এন বি ফ্যাশন স্টোরে ঢুকে ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। তবে ডাকাতরা কি পরিমাণ টাকা বা অন্য মালামাল নিয়ে গেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।