সাকিবের নিষেধাজ্ঞার শেষ দিন

0
78
মঙ্গলবার নিউইয়র্কয়ে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন সাকিব

বাংলা খবর ডেস্ক:
সাকিব আল হাসান ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের অপেক্ষা শেষ হচ্ছে বুধবার। এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে আবার আনুষ্ঠানিকভাবে সব ধরণের ক্রিকেট কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার।

অনৈতিক প্রস্তাব পেয়েও সংশ্লিষ্ট কোনো কতৃপক্ষকে না জানানোয় গত বছরের ২৯ অক্টোবর সাকিবকে নিষিদ্ধ করে আইসিসি। মূল শাস্তি ছিল দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা, তবে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা ছিল স্থগিত। বিডি নিউজ

নিষিদ্ধ হওয়ার সময় সাকিব ছিলেন বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। শাস্তি পাওয়ার মাত্র ১ সপ্তাহ আগে ক্রিকেটারদের ধর্মঘটে তিনি ছিলেন নেতৃত্ব দেওয়া ক্রিকেটারদের একজন। সাকিব নিষিদ্ধ হওয়ার পর গত মার্চের জিম্বাবুয়ে সিরিজ ছাড়া বাকি সব সিরিজে মাঠের পারফরম্যান্সে ধুঁকেছে বাংলাদেশ দল।

গত বছেরের অক্টোবরে ক্রিকেটারদের তিন দিরে ধর্মঘটের ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই বাংলাদেশর ক্রিকেটকে নাড়িয়ে দিয়েছিল সাকিবের নিষেধাজ্ঞার খবর। আইসিসি সেসময় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল, এই চার মাসের মধ্যে তিনবার প্রস্তাব আসে সাকিবের কাছে। একবারও তিনি কোনো কতৃপক্ষকে জানাননি।

নিষিদ্ধ হওয়ার পর বিসিবি কর্তাদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব।আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী ধারা অনুযায়ী, কারও কাছ থেকে সন্দেহজনক কোনো বার্তা পেলেই আইসিসি বা সংশ্লিষ্ট বোর্ড কিংবা দায়িত্বশীল কাউকে জানাতে হয়। এটা গোপন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রতিটি সিরিজ, টুর্নামেন্ট, ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরের আগে ক্রিকেটারদের এই নিয়ম মনে করিয়ে দেওয়া হয় বারবার। এসব নিয়ে ক্লাসও করানো হয়। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী ৬ মাস থেকে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা পর্যন্ত হতে পারে শাস্তি।

আইসিসির মহাব্যবস্থাপক (ইন্টেগ্রিটি) অ্যালেক্স মার্শাল তখন বলেছিলেন, “সাকিব খুবই অভিজ্ঞ একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। সে আইসিসির অনেক শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে এবং ধারা অনুযায়ী বাধ্যবাধকতার ব্যাপারে অবগত আছে। ফিক্সিংয়ের প্রতিটি প্রস্তাবই তার জানানো উচিত ছিল। সে তার ভুল স্বীকার করেছে এবং তদন্তে পুরোপুরি সহায়তা করেছে। ইন্টেগ্রিটি ইউনিটকে ভবিষ্যত শিক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছে সে, যাতে করে তরুণ ক্রিকেটাররা তার ভুল থেকে শিক্ষা নেয়।”

গত জুন মাসে ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ-এ জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে সাকিব বলেছিলেন, ব্যাপারটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দেওয়ার খেসারত দিতে হয়েছে তাকে।

“ আমার মনে হয়, এটা আমি একটু বেশিই হালকাভাবে নিয়েছিলাম। অবশ্যই এই প্ল্যাটফর্মে বিস্তারিত সবকিছু আলোচনা করতে চাই না। আমি যখন দুর্নীতি দমন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করলাম এবং বললাম, তারা সবকিছু জানে, সব প্রমাণ দিলাম, ভেতরে-বাইরের সবকিছু তারা খুঁটিনাটি সব জানে, সত্যি কথা বলতে, এই কারণেই মাত্র ১ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছি। নইলে ৫-১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারতাম।”

“আমার মনে হয়, বোকার মতো ভুল করেছিলাম। কারণ যে অভিজ্ঞতা আমার আছে, যে পরিমাণ আন্তর্জাতিক ম্যাচ আমি খেলেছি এবং দুর্নীতি দমন ধারা নিয়ে যতগুলি ক্লাস করেছি, আমার ওই ভুল করা উচিত হয়নি। সেটা নিয়ে আমি অনুতপ্ত।”

নিষেধাজ্ঞার পর প্রথম কয়েক মাস দেশেই ছিলেন সাকিব। পরে করোনাভাইরাসের দুর্যোগ শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রে যান স্ত্রী-সন্তানের কাছে। তার দ্বিতীয় সন্তান পৃথিবীর আলোয় আসে গত এপ্রিলে। তাদের সঙ্গে সাড়ে ৫ মাস কাটিয়ে তিনি দেশে ফেরেন গত ২ সেপ্টেম্বর। শুরু হয় মাঠে ফেরার প্রস্তুতি পর্ব।

বিসিবির কোনো সুযোগ-সুবিধা ব্যবহারের নিয়ম নেই বলে সাকিব অনুশীলনের জন্য বেছে নেন তার বেড়ে ওঠার প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিকে। সেখানে তার ঘনিষ্ঠ দুই কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম ও মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের তত্ত্বাবধানে চলে তার অনুশীলন। পাশাপাশি বিকেএসপির বিভিন্ন অনুশীলন সুবিধা কাজে লাগান তিনি। বিকেএসপির অ্যাথলেটিকস কোচ, বক্সিং কোচরাও সহায়তা করেন তাকে।

বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফরে দ্বিতীয় টেস্ট দিয়ে সাকিবের অফিসিয়াল ক্রিকেটে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সফরটি স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর গত ১ অক্টোবর তিনি আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। সেখানে অবশ্য অনুশীলন চালিয়ে গেছেন।

আগামী মাসে বিসিবির টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট দিয়ে সাকিব ক্রিকেটে ফিরবেন বলে কদিন আগে নিশ্চিত করেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সাকিবের দেশে ফেরার কথা।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো কদিন আগে বলেছেন, সাকিবের ফেরা নিয়ে তিনি ও সতীর্থরা বেশ রোমাঞ্চিত।

সাকিবের নিষেধাজ্ঞার এই সময়টায় এক পঞ্জিকাবর্ষে নিজেদের সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলার কথা ছিল বাংলাদেশের। এশিয়া কাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্ট ছিল সূচিতে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চের পর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। পিছিয়ে গেছে এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপও। এই এক বছরে কেবল ৪টি টেস্ট, ৩টি ওয়ানডে ও ৭টি টি-টোয়েন্টি মিস করেছেন সাকিব।

জুনে হার্শা ভোগলের সঙ্গে ওই সাক্ষাৎকারে সাকিব বলেছিলেন, এই নিষেধাজ্ঞা অবসর নিয়ে তার ভাবনাও বদলে দিয়েছে। আর বছর দুয়েক খেলেই অবসর নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার পর এখন তিনি আরও তিন থেকে পাঁচ বছর খেলতে চান।

আমার মতো ভুল যেনো কেউ না করে : সাকিব

ওদিকে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান আইসিসির নিষেধাজ্ঞা মুক্ত হয়েই আগামী ১ নভেম্বর ঢাকায় ফিরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়ে মাঠে নামছেন। প্রতিটি ম্যাচে বাংলাদেশকে জয়ী করতে নিজের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন সাকিব।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিউইয়র্কে বর্ণাঢ্য এক শুভেচ্ছা বিনিময়-সমাবেশে সাকিব আরও বলেন, বিসিবির নির্দেশ অনুযায়ী মাঠে নামব। এ ব্যাপারে বিসিবির সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগও রয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও উজ্জ্বল করতে কোন কার্পণ্য করব না। নিজের যতটা সম্ভব সেরা খেলা উপহার দিয়ে যাব। একইভাবে ক্রিকেটাঙ্গনে নবাগতদের পরামর্শ দেব অনুশীলনে যেন ঘাটতি না পড়ে।

এক বছর পর ফিরছেন, কেমন লাগছে? হেসে সংক্ষেপে তিনি উত্তর দেন, ভালো লাগছে। দোয়া করবেন, যেনো দেশের জন্যে ভালো খেলতে পারি। চেষ্টা সবসময়ই থাকবে। প্রবাসীরা শুভ কামনা জানিয়ে বলেন, সাকিব ফিরবে বীরের বেশে। কিন্তু গত একটি বছর যে কারণে জীবন থেকে চলে গেলো, সেটা নিয়ে কি সাকিবের কোনো আফসোস আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে সাকিব বলেন, আমার মতো ভুল যেনো কেউ না করে।

আইসিসি প্রদত্ত একটি নির্দেশ অনুযায়ী ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মাঠে নিষিদ্ধ ছিলেন সাকিব। আর এ সময়ের বড় একটি অংশ করোনায় বিপর্যস্ত ছিল। ক্রিকেটের মাঠও ছিল একেবারেই ফাঁকা। সে সুযোগে স্ত্রী-সন্তানের সাথে কিছুদিন উইসকনসিনে কাটালেন সাকিব। ক্রিকেটে পুনরায় প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে নিউইয়র্কের বিনোদন সংস্থা ‘শোটাইম মিউজিক’ এই শুভেচ্ছা বিনিময় সমাবেশের আয়োজন করে। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন ‘বিশ্ববাংলা টোয়েন্টিফোর’ টিভির সিইও আলিম খান আকাশ।

সাংবাদিক শামিম আল আমিনের উপস্থাপনায় এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন হোস্ট সংগঠনের প্রধান আলমগীর খান আলম এবং সাকিবের প্রত্যাবর্তনকে প্রবাসীদের জন্যেও বিরাট একটি প্রত্যাশার প্রতিফলন হিসেবে অভিমত পোষণ করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন আলিম খান আকাশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here