যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন : ভোটারদের উপচে পড়া ভিড়

0
95

বাংলা খবর ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে স্থানীয় সময় সকাল ৬ টায়। নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি, ভার্জিনিয়া স্টেট সহ বিভিন্ন স্টেটে দেখা গেছে ভোটারদের উপচে পড়া ভিড়। দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে নিউইয়র্ক এর বিভিন্ন এলাকায়। গত কয়েকদিন ধরে বেশ ঠান্ডা আবহাওয়া আজও অব্যাহত রয়েছে। এ ঠান্ডা উপেক্ষা করে ভোটাররা সারিবদ্ধভাবে লাইনে অপেক্ষা করে ভোট প্রদান করছেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ভোটারের উপস্থিতির সংখ্যা বাড়বে বলে বিভিন্ন সূত্রে আভাষ মিলেছে। বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বয়স্ক ভোটার ভোটকেন্দ্রগুলোতে উপস্থিত হয়েছেন যাদের বয়স ৭০ থেকে ৮০ বছর পর্যন্ত। তাদের অনেকেই বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন চান। একারনে ভোট দিতে এসেছেন।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে আরও চার বছর ক্ষমতায় থাকার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেও ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেন ইতোমধ্যে দেশটিতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে মার্কিনিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সব জনমত জরিপে ৭৭ বছর বয়সী জো বাইডেনই এগিয়ে রয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমেরিকার আত্মার পুনরুদ্ধার দরকার। ২ লাখ ৩১ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া করোনাভাইরাস মহামারি সামলাতে নতুন নেতৃত্ব প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছেন বাইডেন।


নিউইয়র্ক এর উডসাইডের একটি স্কুলে ভোটারদের লাইন

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে যুক্তরাষ্ট্রের আত্মার লড়াই উল্লেখ করে জো বাইডেন বলেন, আমার একটি অনুভূতি আছে যে, আমরা আগামীকালের বিশাল জয়ের জন্য একসঙ্গে এসেছি। ব্যাগ গুছিয়ে বাড়িতে চলে যাওয়ার সময় এসেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের।

ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি, ভার্জিনিয়া, কানেকটিকাট ও মাইনে স্থানীয় সময় সকাল ৬টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। কিন্তু দেশটিতে ভোটকেন্দ্র সবার আগে ভোটারদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় মধ্যরাতে নিউ হ্যাম্পশায়ারের ডিক্সভিল নচ ও মিলফিল্ডে।

ঐতিহ্যগতভাবে ১২ জন বাসিন্দার কানাডা সীমান্তের ডিক্সভিল নচে প্রথম ভোটগ্রহণ শুরু হয় মধ্যরাতে। এই শহরের দুটি ভোট কেন্দ্রের একটিতে জো বাইডেন এবং অন্যটিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হয়েছেন। ১৯৬০ সাল থেকে শহরটির বাসিন্দারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবার আগে ভোট দিয়ে আসছেন।

এবারের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা দেখা দিতে পারে বলে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সহিংসতার আশঙ্কায় ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক, নর্থ ক্যারোলিনাসহ বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যে দোকান-পাট ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণার শেষ মুহূর্তে এ দুই প্রার্থী প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরিতে দেশটির ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করেছেন। দেশটির মোট ২৪ কোটি ভোটারের মধ্যে এবারের নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন প্রায় ১৯ কোটি। তবে ইতোমধ্যে দশ কোটিরও বেশি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন বলে জানিয়েছে ইউএস ইলেকশন প্রজেক্টস।

আগাম ভোট পড়েছে ১০ কোটি:

এবারের নির্বাচনের আগে ১০ কোটিরও বেশি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রে গত একশ বছরের হিসাবে নতুন রেকর্ড হতে পারে। দেশটির মোট ভোটার ২৩ কোটি।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেনের মধ্যে প্রতিদ্বদ্বিতা হচ্ছে। ট্রাম্পই আরো চার বছর হোয়াইট হাউজে কাটাবেন, নাকি জো বাইডেন নতুন বাসিন্দা হবেন তা নির্ধারণ হবে আজই (মঙ্গলবার)।


নিউইয়র্ক এর ভোটকেন্দ্রগুলোতে অন্যান্য ভাষার সাথে বাংলায় দিক-নির্দশনা

প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হতে হলে ইলেকটোরাল কলেজ বা নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটে জিততে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে মোট ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৩৮, জিততে হলে প্রয়োজন ২৭০টি ভোট। ভোট গণনা শেষ হতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে, তবে ভোটগ্রহণ শেষ হবার পর দ্রুত একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

সিএনএন বলছে, সারাদেশে নিবন্ধিত ভোটারদের ৪৭% এরও বেশি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। এছাড়া ২১টি রাজ্য এবং ওয়াশিংটন ডিসি ইতিমধ্যে তাদের নিবন্ধিত ভোটারদের অর্ধেকেরও বেশি ভোট পড়েছে। চলমান করোর ভাইরাস মহামারী চলাকালীন আগাম ভোটদান, বিশেষ করে টেক্সাস, হাওয়াই, নেভাডা, ওয়াশিংটন, অ্যারিজোনা এবং মন্টানাসহ কমপক্ষে ছয়টি রাজ্য সা¤প্রতিক দিনগুলিতে ২০১৬ সালের সাধারণ নির্বাচন থেকে তাদের মোট ভোটগ্রহণকে ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে উত্তর ক্যারোলিনা, ওরেগন, কলোরাডো, নিউ মেক্সিকো, জর্জিয়া, ফ্লোরিডা এবং টেনেসিতে আগাম ভোট তাদের ২০১৬ সালের মোট ভোটের কমপক্ষে ৯০ ভাগ।

এছাড়া ৩৭টি রাজ্যে অর্ধেকের বেশি আগাম ভোট পড়েছে, যা এবারের প্রেসিডেন্ট পদে কে বিজয়ী হবেন তা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

নির্বাচন নিয়ে সহিংসতার আশঙ্কা:

ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে চলছে রাজনৈতিক উত্তেজনা। দেশজুড়ে বিরাজ করছে টানটান করেছে উত্তেজনা। দেখা দিয়েছে নজিরবিহীন সহিংসতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও লুটপাটের আশঙ্কা।

মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, অনেক দোকান-পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তার আশঙ্কা নিয়ে ভীত। কারণ এতে চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা। ফলে এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা পিজবোর্ড দিয়ে দোকানের সামনের অংশ ঢেকে দিচ্ছেন সম্ভাব্য সহিংসতা এবং হামলা থেকে বাঁচতে।

খবরে বলা হয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে স্যাকস, ফিফথ এভিনিউ, নোরডস্ট্রম এবং ফার্মেসি চেইন সিভিএস।

ইতোমধ্যে কয়েকটি শহরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ভোটের দিন ও পরবর্তী দিনগুলোয় জ্বালাও-পোড়াও ও ভাংচুরের ভয়ে ঘরবাড়ি ছাড়ছে সাধারণ মার্কিনিরা।


নিউইয়র্ক এর উডসাইডের একটি স্কুলে ভোটারদের লাইন

ট্রাম্প বলেছেন, নির্বাচন ঘিরে বড় রকমের সহিংসতা কিংবা লড়াই হতে পারে। আর এরকম কিছু একটা অবশ্যই ঘটবে

সোমবার এক টুইটে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন ট্রাম্প। পেনসিলভানিয়ায় নির্বাচনের তিনদিন পর পর্যন্ত গণনা করা যাবে পোস্টাল ভোট। সুপ্রিম কোর্টের এমন রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প বলেন, আদালতের সিদ্ধান্ত সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে, গণনায় বেশি সময় নিলে সহিংসতার হতে পারে।আদালতের রায়কে বিভ্রান্তিকর বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই পোস্টাল ভোটে কারচুপির আশঙ্কা করছেন ট্রাম্প। তিনি প্রথম থেকেই পোস্টাল ব্যালটের বিরোধী করে আসছেন। মঙ্গলবার ভার্জিনিয়ায় তাঁর প্রচার দফতরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্প, এবং বাইডেন যাবেন তার জন্মস্থান স্ক্র্যানটনে, সোমবার পেনসিলভেনিয়া গিয়েছিল ট্রাম্প তবে বাইডেন যাবেন মঙ্গলবারে।

নির্বাচন কাছাকাছি চলে আসায় বড় উদ্বেগের কারণ হচ্ছে নির্বাচনকে ঘিরে আইনী বিশৃঙ্খলা এবং অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। কারণ বিগত কয়েক মাস ধরে ট্রাম্প এই ভোট প্রক্রিয়াতে মানুষের আস্থা নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। এনডিটিভি।

(ছবি: সাংবাদিক মোহাম্মদ আবুল কাশেম)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here