‘ভ্যাকসিন অবশ্যই সব দেশের জন্য সহজলভ্য করতে হবে’

0
64

বাংলা খবর ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এক্ষেত্রে ধনী দেশ এবং বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবিএস) ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেছেন। একইসঙ্গে কোভিড-১৯ মহামারী সঙ্কট মোকাবেলায় সুসমন্বিত রোডম্যাপের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করছি, বিশ্ব খুব শীঘ্রই কোভিড-১৯ এর কার্যকর ভ্যাকসিন পেতে যাচ্ছে। এসব ভ্যাকসিন অবশ্যই সব দেশের জন্য সহজলভ্য করতে হবে, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের জন্য বিনামূল্যে সরবরাহ করতে হবে। এক্ষেত্রে ধনী দেশ এবং বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো উদারতা নিয়ে এগিয়ে আসার প্রয়োজন। শুক্রবার সন্ধ্যায় আসেম (দ্য এশিয়া-ইউরোপ মিটিং) অর্থমন্ত্রীদের ১৪তম সভার উদ্বোধনী সেশনে ভিডিও বার্তায় এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনার কারণে ভার্চুয়ালি আয়োজিত এবারের সভার আয়োজক বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। জার্মানি, স্পেন, পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, থাইল্যান্ড, জাপান, চীন, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ আসেমভুক্ত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীসহ বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফের প্রতিনিধিরা এ সভায় অংশ নেন এবং গুরুত্বপূর্ণ মতামত ব্যক্ত করেন।

প্রসঙ্গত, অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে এমন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আর্থিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে এশীয় ও ইউরোপীয় জাতিসমূহের জন্য আসেম হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম। অংশীদার দেশগুলোর জন্য গুরুত্ব বহন করে এমন অভিন্ন অর্থনৈতিক ও আর্থিক বিষয়াদি চতুর্দশ আসেম অর্থমন্ত্রী সভায় উঠে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

কোভিড-১৯ মহামারী সঙ্কট মোকাবেলায় সুসমন্বিত রোডম্যাপের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বে বহুমাত্রিক সমস্যা সৃষ্টি করেছে। এটিকে বৈশ্বিকভাবেই মোকাবেলা করা উচিত। এ সঙ্কট মোকাবেলায় আমাদের একটি সুসমন্বিত রোডম্যাপ প্রয়োজন।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বেইল আউটের হাত থেকে রক্ষার জন্য রাজস্ব প্রণোদনা, কনসেশনাল ফাইন্যান্স এবং ঋণ উপশম সুবিধা দিতে জি-৭, জি-২০, ওইসিডি দেশগুলো, বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ডিউটি-ফ্রি ও কোটা-ফ্রি বাজার সুবিধা এবং প্রযুক্তি সহায়তায় উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে।

বিভিন্ন দেশগুলোকে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির তাগিদ দিয়ে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতা নয়, সহযোগিতাই যে কোন সঙ্কট মোকাবেলা করতে পারে। এই কঠিন সময়ে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে আমাদের আরও সহযোগিতা প্রয়োজন।

করোনা মহামারীতে বিশ্বে সৃষ্ট স্থবিরতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ সব দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে মারাত্মক ধাক্কা দিয়েছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ চাকরি হারিয়েছে, আয় উপার্জন বন্ধ। দারিদ্র্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। স্বাস্থ্য সেক্টর কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এ মহামারীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এ বছর চতুর্দশ আসেম অর্থমন্ত্রী সভার আয়োজন করতে পেরে বাংলাদেশ অত্যন্ত আনন্দিত। এই অনুষ্ঠানে যোগদান করায় আমি আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি একটি বৈষম্যহীন, সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমি তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। আমি অত্যন্ত খুশি যে, এ সঙ্কটময় সময়ে আপনারা বিনম্র চিত্তে এবং সহমর্মিতা প্রদর্শনপূর্বক এ সভায় যোগ দিয়েছেন।’

করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি পোষাতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও অর্থনৈতিক প্যাকেজ গ্রহণ করার পরও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় কোভিড-১৯ প্রভাব ফেলছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গত এক দশক ধরে অব্যাহতভাবে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং আর্থ-সামাজিক সূচকেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা ‘ভিশন ২০৪১’ গ্রহণ করেছি। এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রেও আমাদের দেশ ভাল অবস্থানে ছিল। তবে করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য সুবিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ গ্রহণ করা সত্ত্বেও এ মহামারী আমাদের অগ্রযাত্রার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

তিনি বলেন, তার সরকার এখন পর্যন্ত অর্থনীতির বিভিন্ন সেক্টরের পাশাপাশি আমাদের সমাজের বিভিন্ন খাতকে সহায়তা করার জন্য ১৪ দশমিক ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমতুল্য ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এই সহায়তা প্যাকেজের পরিমাণ জিডিপির ৪ দশমিক ৩ শতাংশের সমান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েক মাসব্যাপী মহামারীর প্রাথমিক ধাক্কা সামলানোর পর আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। রফতানি, প্রবাস আয়, কৃষি উৎপাদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সর্বশেষ প্রবণতাই এটি নির্দেশ করে যে, আমাদের অর্থনীতি এখন টেকসই প্রবৃদ্ধির পথে পুনরায় ফিরে আসছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here