সাকিবের ক্ষমা চাওয়া নিয়ে এবার বিতর্ক ভারতে

0
173
সাকিব আল হাসান। ফাইল ছবি

বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে বিতর্ক ছাড়ছে না।পশ্চিমবঙ্গের একটি কালীপূজায় যোগ দেয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ায় এবার বিতর্ক পৌঁছেছে কলকাতায়। ভারতের নানা হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীও এখন তার প্রতি হতাশ।

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের শীর্ষস্থানীয় নেতা ড. সুরেন্দ্র জৈন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, সাকিবের মতো তারকা ক্রিকেটারের কাছ থেকে তারা আরও নির্ভীক আচরণ প্রত্যাশা করেছিলেন।

তিনি বলেন, কালীপূজায় যাওয়াটা কীভাবে বড় অপরাধ হতে পারে? হিন্দু ও খ্রীষ্টানরা কি মুসলিমদের ইফতার পার্টিতে যোগ দেন না? অনেক হিন্দু তো নামাজেও সামিল হন।

‘সাকিব আল হাসানের মতো একজন নন্দিত ক্রিকেটার এই ইসলামী মৌলবাদের নিন্দা করবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল। তার কাছ থেকে এই বার্তাটাই চেয়েছিলাম, যে বিভিন্ন ধর্মের সহাবস্থান তখনই সম্ভব যখন পরস্পরের প্রতি সম্মান থাকে।’

বিবিসি বলছে, একজন ‍‌‌প্রকৃত মুসলমান হিসেবে কালীপূজার অনুষ্ঠানে যাওয়াটাও তার উচিত হয়নি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাকিব আল হাসানের এই বক্তব্য ভারতের হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোও মোটেই ভালোভাবে নিচ্ছে না।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাবেক সভাপতি ও ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের সাবেক রাজ্যপাল তথাগত রায় মনে করছেন, বাংলাদেশের মৌলবাদের বিরুদ্ধে ভারতে যে যথেষ্ঠ প্রতিবাদ দানা বাঁধেনি – সাকিব আল হাসানকে নিয়ে এই বিতর্কে এটাই সবচেয়ে আক্ষেপের বিষয়।

এদিকে বাংলাদেশ থেকে বিতারিত ভারতে থাকা লেখিকা তসলিমা নাসরিন টুইট করেছেন, কালীপূজোয় যাওয়ার জন্য সাকিব আল হাসানের ক্ষমা চাওয়া মোটেই উচিত হয়নি।

যে মুসলিমরা পূজামণ্ডপে যান কিংবা হিন্দুদের প্রতি সহানুভূতিশীল, এতে তাদের হত্যা করতে ইসলামী মৌলবাদীরা উৎসাহিত হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে কলকাতায় গিয়ে কালীপূজার অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশ সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। এমন খবর চাউর হওয়ার পরই দেশজুড়ে সাকিবকে নিয়ে কঠোর সমালোচনা শুরু হয়।

এ ঘটনার জন্য ‘মহসিন তালুকদার’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে সাকিবকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। হুমকি দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষমা চাইলেন সাকিব আল হাসান।

জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক বলেছেন, অনেকেই বলছেন আমি পূজা উদ্বোধন করেছি। যেটি আমি কখনই করিনি। সচেতন মুসলমান হিসেবে আমি এটা করব না। তারপরও হয়তো ওখানে যাওয়াটাই আমার ঠিক হয়নি। সেটি যদি আপনারা মনে করে থাকেন তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ক্ষমা প্রার্থী। আমি আশা করব আপনারা এটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এরকম কোনো ঘটনা যেন আর না ঘটে সেটিও আমি চেষ্টা করব।

অনুশীলনে সাকিবের সঙ্গে গানম্যান

ওদিকে ভারতে পূজা উদ্ধোধন নিয়ে সমালোচনায় পড়েছেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এ নিয়ে তাকে ফেসবুক লাইভে এসে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে এ অলরাউন্ডারের বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে সঙ্গে গানম্যান দেয় বিসিবি।

গানম্যানসহ সাকিব আল হাসান। ছবি: সংগৃহীত

বুধবার সকালে সাকিব মিরপুরে আসেন অনুশীলন করতে। সেসময় তার সঙ্গে একজন গানম্যানকে দেখা যায়।বিসিবির পক্ষ থেকে সাকিবের নিরাপত্তার জন্য গানম্যান দেয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী।

এ নিয়ে নিজাম উদ্দিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, এটা বাড়তি নিরাপত্তার জন্য। যেহেতু একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা জিনিস এসেছে, তাই সাময়িকভাবে একটু সাবধানতা অবলম্বন করা।

তবে এবার এক বছর নিষেধাজ্ঞা শেষে দেশে ফেরার পর তাকে ঘিরে শুরু হয়েছে তিনটি বিতর্ক। দেশে ফেরার পরদিন স্বাস্থ্যবিধি না মেনে একটি সুপারশপ উদ্বোধন করা।

এরপর বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে কলকাতা যাওয়ার পথে সাকিবের হাত লেগে এক ভক্তের মোবাইল পড়ে যাওয়া নিয়ে দ্বিতীয় বিতর্ক শুরু হয়। এ নিয়ে সাকিব ভিডিও বার্তায় বলেছেন যে, ওই ভক্ত তার অনুমতি ছাড়াই এবং স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অনেকটা গায়ের ওপর ওঠে ছবি তোলার চেষ্টা করেছেন। এ সময় তাকে সরিয়ে দিতে গেলে হাত লেগে ওই ব্যক্তির ফোন পড়ে যায়।

সবশেষ বিতর্কের চূড়া স্পর্শ করে সাকিবের কলকাতায় পূজা উদ্বোধনের খবরে। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন এ নিয়ে। এমনকি এজন্য তাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের লাইভে এসে প্রাণনাশের হুমকি দেন সুনামগঞ্জের এক যুবক। পরে অবশ্য তাকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। এরপর ইউটিউবে ‘পূজা উদ্বোধন করিনি’ বলে জানান সাকিব।

বাংলাদেশে ক্রিকেটের কারও সঙ্গে গানম্যান দেওয়া অবশ্য এবারই প্রথম নয়। এর আগে হোলি আর্টিজেনে জঙ্গি হামলার পর জাতীয় দলের সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেসহ অন্য বিদেশি কোচদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক গানম্যান নিয়োগ করেছিল বিসিবি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here