শহীদ বুদ্ধিজীবীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা করবে সরকার

0
100

বাংলা খবর ডেস্ক:
মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এই পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে। গবেষকদের মাধ্যমে সারা দেশের তথ্য সংগ্রহ করে এই তালিকা প্রণয়ন করা হবে। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এর আগে প্রকাশিত শহীদ বুদ্ধিজীবীদের এক হাজার ২২২ জনের তালিকাকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠিত ১১ সদস্যের কমিটির গতকাল রবিবার অনুষ্ঠিত প্রথম সভায় ওই এক হাজার ২২২ জনের তালিকা অনুমোদন দেওয়া হয়।

সভা শেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময় ১৯৭২ সালে প্রাথমিকভাবে এক হাজার ৭০ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর একটি তালিকা হয়েছিল। পরে ডাক বিভাগ ১৫২ জন শহীদের ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে। এই মোট এক হাজার ২২২ জনের তালিকাকে আমরা অনুমোদন দিয়েছি। বিভিন্ন আবেদন আমাদের কাছে আছে, ভবিষ্যতে হয়তো আরো আবেদন আসবে, সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেওয়া হবে। দীর্ঘদিন চলে গেছে, আর সময়ক্ষেপণ যাতে না হয় তার জন্য আগামী এক বছরের মধ্যেই এই কাজটি সম্পন্ন করা হবে।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে এক হাজার ২২২ জনের যে তালিকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেই তালিকা চলতি মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাংলা একাডেমি প্রণীত শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ এবং এশিয়াটিক সোসাইটি প্রণীত জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়ায় শহীদ বুদ্ধিজীবীর যে সংজ্ঞা রয়েছে, তার আলোকেই সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হবে বলে জানা গেছে। আগামী বৈঠকেই এই সংজ্ঞা চূড়ান্ত করা হবে বলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে কমিটির সদস্য, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের তালিকা তো সম্ভব না। আমরা এখানে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করব। বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে যাঁরা ভূমিকা রেখেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনো কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন না, ঘাতকদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদেরকেই এই তালিকাভুক্ত করা হবে।’

বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়ন কমিটির সদস্য, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির জানান, ২৫ মার্চ থেকে শুরু করে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়কাল ধরে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করা হবে। তিনি বলেন, ‘৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মিরপুর শত্রুকবলিত ছিল। মিরপুর ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ রণাঙ্গন। ৩১ জানুয়ারি মিরপুর মুক্ত দিবস অন্তর্ভুক্ত না করলে জহির রায়হান সেখানে থাকেন না। জহির রায়হানকে বিএনপি-জামায়াত সরকার কোনো তালিকায় রাখেনি। কারণ তিনি ১৬ ডিসেম্বরের পর শহীদ হয়েছেন। ফলে বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তারা সব সময় বলেছে জহির রায়হানকে আওয়ামী লীগ হত্যা করেছে। আমরা আজকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ২৫ মার্চ থেকে শুরু করে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তালিকা করা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যাঁরা গবেষণা করেছেন, আঞ্চলিক ইতিহাস লিখেছেন, আমরা সবার সহযোগিতা নেব। এটা একটা আমলানির্ভর কাজ হবে না, যেভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হয়েছে।’

বুদ্ধিবীজীদের তালিকা প্রণয়ন কমিটির আরেক সদস্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ জানান, একেবারে গ্রাম-ইউনিয়ন পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করে শহীদ বুুদ্ধিজীবী তালিকা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এই কাজে ছাত্র-যুবকদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এমনকি তালিকা প্রণয়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের নাম চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেওয়া হবে।

৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালির বিজয় যখন আসন্ন, তখনই ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে। সারা দেশেই চলে এই হত্যাযজ্ঞ।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে এত দিন ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হলেও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সরকার স্বীকৃত কোনো তালিকা ছিল না।

গত ১৯ নভেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়ন সংক্রান্ত ১১ সদস্যদের কমিটি গঠন করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্যদের মধ্যে নাসির উদ্দীন ইউসুফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবির, গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের ট্রাস্টি ড. চৌধুরী শহীদ কাদের, জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক ড. বায়েজিদ খুরশীদ রিয়াজ, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শহীদুল হক ভূঞা ও উপসচিব রথীন্দ্রনাথ দত্ত উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ আমন্ত্রণে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here