বাংলা খবর ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বুধবার ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনায় এক পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি মারা যান। খবর সিএনএনের।
এ নিয়ে ক্যাপিটল ভবনে হামলা ও সহিংসতার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৫ এ।
হামলার সময় পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই এক নারীর মৃত্যু হয়। এরপর গুরুতর আহত অবস্থায় মৃত্যু হয় আরো তিনজনের।
এই ঘটনায় কমপক্ষে ৫০ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক।
ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৫টি মামলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
২০ জানুয়ারির আগে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন না ট্রাম্প:
মার্কিন পার্লামেন্টে দাঙ্গার পরদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
প্রথমবারের মতো বাইডেনের জয় মেনে নিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, নিয়মমাফিক ২০ জানুয়ারি তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
এমন সময়ে ট্রাম্প এই মন্তব্য করলেন যখন ডেমোক্র্যাটদলীয় শীর্ষ নেতারা প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ট্রাম্পকে অপসারণের আহ্বান জানাচ্ছেন।
হোয়াইট হাউস থেকে চলে যাওয়ার মাত্র ১৩ দিন আগে তাকে সরিয়ে দেয়ার এই দাবি উঠেছে। ট্রাম্প এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করে ২০ তারিখেই ক্ষমতা হস্তান্তরের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
দেশটির গণতন্ত্রের প্রতীক বলে খ্যাত ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। মার্কিন আইনপ্রণেতারা যখন বাইডেনকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রত্যয়নের জন্য বৈঠক করছে তখন এই হামলা ঘটেছে।
এই হামলার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের উসকানিকে দায়ী করা হচ্ছে। ট্রাম্পের পোস্ট সহিংসতা আরও উসকে দিতে পারে বলে আশঙ্কা থেকে তার টুইটার ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
১২ ঘণ্টা পর টুইটার অ্যাকাউন্ট ফিরে পেয়ে দাঙ্গাকারীদের নিন্দা জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলেন, এটা ছিল জঘন্য হামলা।
বৃহস্পতিবার নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট ফিরে পেয়েই ট্রাম্প বলেন, বর্তমানে নির্বাচনের ফল প্রত্যয়ন করেছে কংগ্রেস। আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
‘এখন আমি মসৃণ, সুশৃঙ্খল ও নির্বিঘ্নে ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করতে মনোযোগ দিচ্ছি। সময়টা এখন ক্ষত সারানোর ও মীমাংসার আহ্বান জানানোর।’
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের তাড়িয়ে দিতে আমি ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছি। যদিও কিছু মার্কিন গণমাধ্যমের দাবি, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েনে তিনি ইতস্তত করেছেন। বরং এই দায়িত্ব তিনি ভাইস-প্রেসিডেন্টের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলেন।
এছাড়া তার ‘অসাধারণ সমর্থকদের’ তারিফ করে অঙ্গীকার করে বলেন, আদতে আমাদের অবিশ্বাস্য যাত্রা কেবল শুরু হয়েছে।
যে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তিনি এসব কথা বলেন, তাতে নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগের বিষয়টি খুব একটা তুলে ধরেননি তিনি। গত নভেম্বরে ট্রাম্প বলেন, বাইডেন জয়ী হয়েছেন; কারণ নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বুধবারের হোয়াইট হাউসের বাইরের সমাবেশ থেকে সমর্থকদের ক্যাপিটল ভবনের দিকে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
এরপর বাইডেনের বিজয়কে স্বীকৃতি দিতে পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশন চলার সময় সেখানে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে কয়েক ঘণ্টার জন্য অধিবেশন স্থগিত রেখে আইনপ্রণেতাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। নজিরবিহিন এই হামলায় ৪ জন নিহত হয়েছেন।
ট্রাম্পের অভিশংসন চান ন্যান্সি পেলোসি:
মার্কিন কংগ্রেসে নজিরবিহীন হামলার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরাসরি দায়ী করেছেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। তিনি ট্রাম্পের অভিশংসনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। খবর আলজাজিরা ও দ্য হিলের।
ন্যান্সি পেলোসি বলেন, যদি ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অপসারণ না করেন, তবে তাকে আগের মতো অভিশংসন করা হবে। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতাগ্রহণের আগেই ট্রাম্পের অপসারণ চান পেলোসি। এর জন্য মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর জরুরি ব্যবহারের তাগিদ দেন তিনি।
এর আগেও একবার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসন করা হয়েছিল। যদিও এ কারণে তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়নি।
পেলোসি বৃহস্পতিবার বলেন, ট্রাম্পকে দ্রুত ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। তার স্বাভাবিকভাবে দায়িত্ব ছাড়ার দুই সপ্তাহ আগেই বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট দেখতে চান পেলোসি। যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যা করা দরকার তার সবই করা।
ডেমোক্র্যাট নেতা চাকজ শুমার ও পেলোসি দুজনই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগের দাবি জানান। তারা ভাইস প্রেসিডেন্ট আহ্বান জানান দ্রুত যেন ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। ভাইস প্রেসিডেন্ট যদি সেই পথে না এগোয়, তবে ট্রাম্পকে আরেকবার অভিশংসনের মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে।
ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকাপে ট্রাম্পের কড়া সমালোচক পেলোসি বলেন, গতকাল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি সশস্ত্র হামলা উসকে দিয়েছেন। তার উসকানিতেই ক্যাপিটল হিল যেটি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের পবিত্র ভূমি রক্তাক্ত হয়েছে। কংগ্রেস সদস্যদের বিরুদ্ধে সহিংস হামলার ঘটনা ঘটেছে, যেটি এককথায় ভয়াবহ। এ ন্যক্কারজনক ঘটনা ভোলা সম্ভব নয়।
প্রসঙ্গত নির্বাচনে জেতা বাইডেনকে পরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিতে বুধবার কংগ্রেসের অধিবেশনে বসেন আইনপ্রণেতারা। সে সময় শত শত ট্রাম্প সমর্থক কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে ঢুকে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। সংঘর্ষে নিহত হন অন্তত চারজন। এ সময় অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
বৃহস্পতিবার কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে সাংবাদিকদের পেলোসি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প যতক্ষণ হোয়াইট হাউসে বসে আছেন, ততক্ষণ আমরা খুব কঠিন অবস্থায় আছি।’
পেলোসির ভাষ্য– প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। একই সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যর্থতার পরিচয় দেয়ায় ক্যাপিটল পুলিশপ্রধান স্টিভেন সান্ডেরও অপসারণ চান এ ডেমোক্র্যাট নেতা।
ট্রাম্পকে আর একদিনও প্রেসিডেন্ট দেখতে চান না ডেমোক্র্যাটরা:
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আর একদিনও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে দেখতে চান না বলে জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাট পার্টির সিনেটর ও প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা। ক্যাপিটল ভবনে ন্যক্কারজনক হামলার জন্য ট্রাম্পের উসকানিকে দায়ী করে তারা প্রেসিডেন্টের অপসারণ দাবি করেছেন। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।
ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর চাক শুমার বলেছেন, অনতিবিলম্বে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপসারণ দরকার। আর একদিনও তার প্রেসিডেন্ট পদে থাকা উচিত নয়। বাইডেন ক্ষমতা নেয়ার পর সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের নেতৃত্ব দেবেন শুমার।
ট্রাম্পকে অপসারণে বর্তমান মন্ত্রিসভার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শুমার। এটি হতে গেলে অন্তত আট মন্ত্রীকে প্রেসিডেন্টের অপসারণের প্রস্তাবের পক্ষে রায় দিতে হবে। মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট মানসিক বা শারীরিক অসুস্থতার ফলে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে তার স্থলে ভাইস প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নিতে পারবেন।
এদিকে ট্রাম্পের সরাসরি অভিশংসন দাবি করেছেন তার কড়া সমালোচক ও প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। তিনি ট্রাম্পকে অপসারণ করতে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রাম্প নিজে থেকে সরে না দাঁড়ালে কিংবা তার মন্ত্রিসভা উদ্যোগ না নিলে ‘অভিশংসনের মাধ্যমে তাকে সরানো যেতে পারে’ বলে জানিয়েছেন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি।
ন্যান্সি পেলোসি বলেন, যদি ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অপসারণ না করেন, তবে তাকে আগের মতো অভিশংসন করা হবে। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতাগ্রহণের আগেই ট্রাম্পের অপসারণ চান পেলোসি। এর জন্য মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর জরুরি ব্যবহারের তাগিদ দেন তিনি।
এর আগেও একবার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসন করা হয়েছিল। যদিও এ কারণে তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়নি।
পেলোসি বৃহস্পতিবার বলেন, ট্রাম্পকে দ্রুত ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। তার স্বাভাবিকভাবে দায়িত্ব ছাড়ার দুই সপ্তাহ আগেই বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট দেখতে চান পেলোসি। যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে– ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যা করা দরকার তার সবই করা।
ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার ও পেলোসি দুজনই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগের দাবি জানান। তারা ভাইস প্রেসিডেন্টকে আহ্বান জানান দ্রুত যেন ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। ভাইস প্রেসিডেন্ট যদি সেই পথে না এগোয়, তবে ট্রাম্পকে আরেকবার অভিশংসনের মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে।
ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকাপে ট্রাম্পের কড়া সমালোচক পেলোসি বলেন, গতকাল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি সশস্ত্র হামলা উসকে দিয়েছেন। তার উসকানিতেই ক্যাপিটল হিল যেটি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের পবিত্র ভূমি রক্তাক্ত হয়েছে। কংগ্রেস সদস্যদের বিরুদ্ধে সহিংস হামলার ঘটনা ঘটেছে, যেটি এককথায় ভয়াবহ। এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ভোলা সম্ভব নয়।
এদিকে মার্কিন হাউসের বিচার বিভাগীয় কমিটির বেশিরভাগ ডেমোক্র্যাটই বুধবার সন্ধ্যায় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন।
বিবিসি জানায়, এ চিঠিতেই তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘ক্যাপিটলে হামলা উসকে দিয়ে গণতন্ত্রকে অবমাননা করার চেষ্টার অভিযোগ করে বলেছেন, সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগ করে তাকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হোক।
অন্যদিকে এক ভিডিওবার্তায় ট্রাম্প বলেন, নিয়মমাফিক ক্ষমতা হস্তান্তরে তিনি বদ্ধপরিকর। ২০ জানুয়ারি নতুন প্রশাসন কাজ শুরু করবে।
ট্রাম্প বলেন, ‘বুধবারের সহিংসতা, আইনহীনতা ও সংঘাতের ঘটনায় তিনি নিজেও ক্ষুব্ধ। এই উত্তাপ অবশ্যই ঠাণ্ডা করতে হবে এবং স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে।’
প্রসঙ্গত নির্বাচনে জেতা বাইডেনকে পরবর্তী সময় প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিতে বুধবার কংগ্রেসের অধিবেশনে বসেন আইনপ্রণেতারা। সেই সময় শত শত ট্রাম্প সমর্থক কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে ঢুকে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। সংঘর্ষে নিহত হন অন্তত চারজন। এ সময় অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
কংগ্রেসে হামলা ‘জাতির জন্য বড় লজ্জার’: ওবামা
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মার্কিন কংগ্রেসে (ক্যাপিটল হিল) ট্রাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এটি আমাদের জাতির জন্য বড় অসম্মান ও লজ্জার।’ খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
আর নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য এটি একটি জঘন্য হামলা।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, ইতিহাস আজকের এই সহিংসতার কথা মনে রাখবে, যেখানে একজন নারীকে গুলি ও হত্যা করা হয়েছে। এই হামলার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের উসকানিকে দায়ী করে সাবেক প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, আইনসঙ্গত নির্বাচনের ফলকে ভিত্তিহীনভাবে মিথ্যা প্রতিপক্ষ দাবিদার একজন দায়িত্বশীল প্রেসিডেন্টের উসকানিতে সংঘটিত এ হামলা আমাদের জন্য বড়ই অসম্মানের এবং জাতির জন্য লজ্জার।
স্থানীয় সময় বুধবার মার্কিন কংগ্রেসে জো বাইডেনের প্রত্যয়ন উপলক্ষে আইনপ্রণেতাদের বৈঠকের সঙ্গে ট্রাম্প সমর্থকরা নজিরবিহীন হামলা করে। এই দাঙ্গায় অন্তত চারজন নিহত হন। এ ঘটনায় এই বিবৃতি দেন সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ফলকে না মেনে রিপাবলিকান সমর্থকরা যে তাণ্ডব দেখিয়েছে, সেটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বিরল। তবে এ ঘটনার নিন্দা জানানোয় রিপাবালিকান নেতাদের ধন্যবাদ জানান ওবামা। ‘এর পরও আমি আশাবাদী এই কারণে যে, রিপাবলিকান দল থেকেই এ হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে।’
এদিকে এ ঘটনার পর ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র শহরে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দিয়েছেন।
ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বাউজার টুইটারে তার আদেশের বিস্তারিত পোস্ট করে লেখেন– ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত, আগে ঘোষণা করা জনজরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়িয়ে ১৫ দিন ঘোষণা করে নির্দেশ জারি করেছি।’
ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র তার জরুরি অবস্থা ঘোষণার আদেশে বলেছেন, ‘অনেকেই অস্ত্রসহ এখানে এসেছে সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞে অংশ নিতে। তারা অস্ত্রের পাশাপাশি রাসায়নিক, ইট ও বোতলও নিক্ষেপ করেছে।’
প্রাণ বাঁচাতে সুড়ঙ্গ পথ ব্যবহার করতে বাধ্য হলেন সিনেটররা
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে সিনেটরদের ভরা সভা চলছে। এই সভা শেষেই সরকারি ভাবে জয়ী ঘোষণা করা হবে গত ৩রা নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পাওয়া বাইডেনকে। কিন্তু এর আগেই ঘটনা পাল্টে দিতে ক্যাপিটল হিলে হামলা চালালো বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রামেপর সমর্থকরা। হলিউডের সিনেমা ছাড়া এর আগে কেউ ক্যাপিটলে এরকম হামলা দেখেনি। কমান্ডো স্টাইলে হামলা চালিয়ে সিনেটরদের জিম্মি করতে চেয়েছিল ট্রামপ সমর্থকরা। নজিরবিহীন এ হামলা থেকে প্রাণ বাঁচাতে সুড়ঙ্গ পথ ব্যবহার করতে বাধ্য হলেন সিনেটররা। অবশেষে রক্ষা পেলেন তারা। পেছনে ফেলে এলেন ভীতিকর এক স্মৃতি।
কীভাবে হামলা হয়েছিল ক্যাপিটল হিলে তা এরইমধ্যে সপষ্ট হয়ে এসেছে। ভেতরে যখন আলোচনা চলছে বাইরে তখন তাণ্ডব চালাচ্ছেন ট্রামপ সমর্থকরা। ক্যাপিটলের দরজা সব বন্ধ থাকায় প্রথমে অবস্থার ভয়াবহতা আঁচ করতে পারেনি কেউই। দরজায় দরজায় প্রস্তুত ছিলেন বন্দুকধারী নিরাপত্তারক্ষীরা। তবে অবস্থা দ্রুতই খারাপ হয়ে গেল। ক্যাপিটলের ভেতরে ঢুকতে মরিয়া হয়ে ওঠে ট্রামপ সমর্থকরা। বাইরে শুরু হয় তুমুল হট্টগোল। হাজার হাজার জনতার চিৎকার শোনা যায় ভেতর থেকে। সিনেটররাও বাইরে উঁকি মারতে থাকেন পরিস্থিতি বোঝার জন্য। ভেতরে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই দলের সিনেটররা, ছিলেন সাংবাদিকরাও। পরিস্থিতি বুঝতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তারা সবাই।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এরকম ঘটনা কখনো ঘটেনি। ট্রামপ সমর্থকদের হাত থেকে সিনেটরদের বাঁচাতে ক্যাপিটলের দরজাগুলো আটকে দিচ্ছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। ভেতরে খবর যেতেই তোপের মুখে পড়েন রিপাবলিকান সিনেটররা। তাদের দিকে কটাক্ষ ছুড়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ- ‘ডাকুন আপনার নেতাকে! ওর জন্যই তো এসব হচ্ছে।’ তবে ভয়াবহ কাণ্ডটা শুরু হলো এর পরেই। দরজায় আছড়ে পড়তে শুরু করেন ট্রামপ সমর্থকরা। ফলে ভেতর থেকে আসবাবপত্র দিয়ে দরজা ঠেলে ধরে থাকেন কর্মরত পুলিশ। বাইরে ফেলা হয় টিয়ার শেল। তবে তাতেও নিরস্ত্র হয় না উগ্র জনতা। হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির ফ্লোর ডিরেক্টর কেইথ স্টার্ন বলেন, ‘প্রত্যেকে নিজের নিজের আসনে বসে পড়ুন। শান্ত থাকুন। সিটের নিচে রাখা গ্যাস মাস্ক পরে নিন সবাই’। যেকোনো সময় যেকোনো দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকতে পারে বাইরের আতঙ্ক। গোড়ার দিকে যেটা ছিল কৌতূহলের বিষয়, সেটাই হয়ে দাঁড়ালো বিভীষিকা।
সিনেটরদের জীবন বিপন্ন বুঝে আর ঝুঁকি নেননি ক্যাপিটলের নিরাপত্তা অফিসাররা। সিনেটরদের বললেন, সুড়ঙ্গ দিয়ে নিরাপদ কক্ষে পৌঁছে যেতে। সে ভাবেই ফাঁকা করা হলো ক্যাপিটল। হাউস সার্জেন্টকে কোনো এক নিরাপত্তা অফিসারকে নির্দেশ দিতে শোনা যায়, ‘ক্যাপটলকে আমরা যেন নিরাপদ রাখতে পারি, সেটা নিশ্চিত করুন।’ শেষ পর্যন্ত নিরাপদে পার পেয়ে যান সিনেটররা।
ইরাকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি:
ওদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইরাকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। বৃহস্পতিবার ইরানের প্রভাবশালী সামরিক কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিসহ ১০ জনকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
বাগদাদের বিশেষ আদালত এক বিবৃতিতে বলেছে, সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ট্রাম্পকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত শেষ হয়েছে।
ইরাকের আদালত বলেছে, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য সবাইকে চিহ্নিত করার কাজ চলছে। দেশি-বিদেশি যারাই এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হবে।
গত বছরের ৩ জানুয়ারি বাগদাদ বিমানবন্দরের বাইরে হাশদ আল-শাবি গোষ্ঠীর উপপ্রধান মুহান্দিস মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন। একই হামলায় নিহত হন ইরানের বিপ্লবী বাহিনীর প্রধান জেনারেল কাসেম সোলেইমানি।
ক্যাপিটলে হামলাকারীদের ভিড়ে ছিল ভারতীয় পতাকা, বিতর্ক:
কংগ্রেসের ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে হামলাকারীদের হাতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পতাকার পাশাপাশি ছিল ভারতের জাতীয় পতাকা। আর সেই বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেটাগরিকদের একাংশের মধ্যে।
ছবি: সংগৃহীত
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও এসেছে (যার সত্যতা এখনও যাচাই হয়নি) সেখানে দেখা যাচ্ছে, ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ের সামনে প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্পের ছবি নিয়ে জড়ো হয়েছেন তার সমর্থকরা।
সেখানে অন্তত একজনের হাতে রয়েছে ভারতের জাতীয় পতাকা। এরপরেই এক নেটাগরিক লিখেছেন, ‘এখানে ভারতীয় পতাকার উপস্থিতি অত্যন্ত বিরক্তিকর’। এমনকি, ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের জাতীয় পতাকার পাশাপাশি ‘কনফেডারেট’ পতাকা।
১৮৬১ সালে ক্রীতদাস প্রথার সমর্থক ১১টি রাজ্য আমেরিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ‘কনফেডারেট স্টেটস’ গঠন করেছিল। দীর্ঘ চার বছর গৃহযুদ্ধের পরে ‘কনফেডারেট স্টেটস’কে পরাজিত করে আমেরিকাকে ফের ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন আব্রাহাম লিঙ্কন। ঘটনাচক্রে, দাসপ্রথা বিরোধী লিঙ্কনের দল রিপাবলিকান পার্টিরই নেতা বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
কলকাতার সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, ক্যাপিটলে হামলাকারী ট্রাম্প সমর্থদের জমায়েতে ভারতের জাতীয় পতাকার উপস্থিতির ‘প্রভাব’ নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্কে পড়তে পারে বলে কূটনীতিকদের একাংশ।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আমেরিকা সফরে গিয়ে হিউস্টনে অনাবাসী ভারতীয়দের ‘হাউডি মোদি’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তিনি স্লোগান দিয়েছিলেন, ‘অব কি বার, ট্রাম্প সরকার’ সেসময়ও আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মোদির ‘অংশগ্রহণ’ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নির্বাচন ঘিরে এমন সহিংসতা এবারই প্রথম। এ হামলায় এখন পর্যন্ত ৪ জন নিহত হয়েছে। আটক হয়েছেন ৫২ জন। এসব ঘটনার পর বৃহস্পতিবার মার্কিন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। যৌথ অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস তাদের জয়ের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। পরাজিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। আগামী ২০ জানুয়ারি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন।