টিকা কার্যক্রম পরিচালনায় ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ’র ব্যয় নিয়ে সরব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম

0
87

বাংলা খবর ডেস্ক:
আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। টিকা বণ্টনের জন্য গঠিত তিন স্তরের কমিটি কাজ করছে। বিতরণ কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করার কার্যক্রমও শেষ পর্যায়ে। টিকা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ‘সুরক্ষা’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ) তৈরি করা হচ্ছে। টিকা গ্রহীতাকে এই অ্যাপে নিজেদের তথ্য দিয়ে তালিকাভুক্ত হতে হবে। সেখান থেকে সরকার টিকা গ্রহীতা সম্পর্কে যেমন তথ্য পাবে, তেমনি যারা টিকা নেবেন, তারাও পরবর্তী হালনাগাদ সম্পর্কে জানতে পারবেন। এরই মধ্যে অ্যাপ তৈরির ব্যয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়েছেন অনেকে। তারা প্রচার করছেন, অ্যাপ তৈরিতে ব্যয় করা হচ্ছে ৯০ কোটি টাকা। কিন্তু অ্যাপ তৈরির সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এ ধরনের প্রচারণাকে বিভ্রান্তিকর ও গুজব বলে সতর্ক করে দিয়েছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, প্রথমে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়া নিয়ে গুজব রটানো হয়েছিল। কিন্তু শুরু থেকেই আমরা নিশ্চিত ছিলাম, সঠিক সময়ে টিকা পাব। এখন সবাই দেখেছেন, সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই টিকা আসছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে ওই টিকা বিতরণের কাজ শুরু হবে। এখন আবার নতুন করে গুজব ছড়ানো হচ্ছে টিকা গ্রহীতাদের জন্য নিবন্ধন অ্যাপের মূল্য নিয়ে। এই অ্যাপ তৈরিতে একটি টাকাও ব্যয় হয়নি। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য একটি মহল জনগণকে বিভ্রান্ত করতে সব সময় এ ধরনের গুজব ও অপপ্রচারে লিপ্ত থাকে। সবার প্রতি আহ্বান থাকবে, গুজবে কিংবা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে সঠিক তথ্য জেনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রচার করুন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহীতাদের ডাটাবেজ তৈরিতে যে অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে, তাতে কোনো টাকা ব্যয় হচ্ছে না। আইসিটি বিভাগের সেন্ট্রাল এইড ম্যানেজমেন্ট (ক্যাম) নামের একটি সফটওয়্যার রয়েছে। সফটওয়্যারটি আইসিটি বিভাগের প্রোগ্রামারদের একটি দল তৈরি করেছে। ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমে করোনাকালীন দেশের ৫০ লাখ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। সেই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেই ‘সুরক্ষা পল্গ্যাটফর্ম’ অ্যাপটি তৈরি করা হবে। আইসিটি বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখার প্রোগ্রামাররা অ্যাপটি তৈরি করবেন। নিজেদের জনবল, অফিস, সোর্স ব্যবহার করে কাজটি করার কারণে কোনো টাকাই ব্যয় হবে না।
তিনি বলেন, অ্যাপটি তৈরিতে ৯০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং কিছু গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে। এই টাকা ব্যয় হলে তো সরকারি ক্রয় কমিটির অনুমোদন নিতে হতো। কারণ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীরা ৫০ কোটি টাকার বেশি খরচ করতে পারেন না। কিন্তু ক্রয় কমিটি, অর্থ বিভাগ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিংবা অধিদপ্তর কারও কাছেই কোনো টাকা চাওয়া হয়নি। সুতরাং অ্যাপ তৈরিতে ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ের বিষয়টি গুজব। টিকাদান কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করতে একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করছে।
স্বাস্থ্য বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অ্যাপ তৈরিতে একটি টাকাও ব্যয় হচ্ছে না। তবে অ্যাপ তৈরির পর করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণকারী কোটি কোটি মানুষের তথ্য ক্লাউড সার্ভারে সংরক্ষণ করা, এনআইডি ও মোবাইল নাম্বার যাচাই এবং টিকা গ্রহীতাদের কয়েক কোটি এসএমএস প্রদান ইত্যাদি কাজে অর্থ ব্যয় হবে। এর মধ্যে ক্লাউড হোস্টিংয়ের জন্য আন্তর্জাতিক মানের ক্লাউড সার্ভার ব্যবহার ছাড়া এসএমএস পাঠাবে টেলিটক, এনআইডি ভেরিফিকেশনসহ অন্যান্য সব ধাপ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর সম্পন্ন করবে।

স্বাস্থ্য বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, জাতীয় পর্যায়ে এই ধরনের একটি অ্যাপ তৈরি ও ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যয়ের হিসাব চাওয়া হয়েছিল। এনইসি নামে জাপানের একটি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সলিউশনের অ্যাপ তৈরির জন্য ৩০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। অ্যাপ তৈরি ও ব্যবস্থাপনায় ওই কোম্পানি উচ্চ ব্যয় দেখে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সরকারি উদ্যোগে বিনামূল্যে কাজটি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পরই তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিনামূল্যের অ্যাপটি তৈরি করছে।

টিকা প্রদানে সরকারি প্রস্তুতি: স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৈরি গাইড লাইন মেনে টিকাদান কর্মসূচির সার্বিক প্রস্তুতি চলছে। প্রথমে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় সরাসরি যুক্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা পাবেন। পরে ধাপে ধাপে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী টিকার আওতায় আসবে। টিকা বণ্টনের জন্য সারাদেশে তিন স্তরে কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানে টিকা বিতরণের জন্য ১৫ ধরনের প্রায় ছয় হাজার ৩০০টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলো- বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ১০ ও ২০ শয্যার হাসপাতাল, মা ও শিশু হাসপাতাল, পুলিশ হাসপাতাল, জাতীয় সংসদ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সচিবালয় ক্লিনিক ও সিটি করপোরেশন হাসপাতাল।

টিকা পেতে নিবন্ধন করতে হবে অ্যাপে: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ তৈরির কাজ শেষ করে এনেছে। টিকা পেতে এই অ্যাপে ভোটার আইডি দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। এই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অ্যাপটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। স্মার্টফোনে অ্যাপটি ডাউনলোড করে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ থেকেই নিবন্ধন করতে পারবেন। নিবন্ধনের জন্য ফোন নাম্বার ও জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার, নাম, জন্ম তারিখ, অন্য কোনো শারীরিক জটিলতা আছে কিনা, পেশা ইত্যাদি বিস্তারিত উল্লেখ করতে হবে। প্রত্যেক ব্যক্তি করোনাভাইরাসের দুই ডোজ করে টিকা পাবেন। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের বিস্তারিত তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে জানা যাবে। ভারতসহ অনেক দেশ টিকাদানে এ ধরনের অ্যাপ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। কারা আগে টিকা পাবেন- সেই অগ্রাধিকারের তালিকাটি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকেও সংগ্রহ করা যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here