আজ আসছে আরো ৬০ লাখ টিকা

0
58

বাংলা খবর ডেস্ক:
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে সরকারের কেনা করোনার টিকার তিন কোটি ডোজের মধ্যে ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালান আজ সোমবার আসছে। একই দিন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস নিজেদের জন্য আলাদা চালানে আরো ১০ লাখ ডোজ টিকা আনছে। এ ছাড়া টিকা প্রয়োগের বিষয়ে আজ চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

এদিকে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সাড়ে ১০ মাস পর অনুমোদন পেল অ্যান্টিবডি টেস্ট।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনার টিকা কোভিশিল্ড ভারতে উৎপাদন করছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। এই টিকার তিন কোটি ডোজ আমদানির জন্য গত নভেম্বরে সরকার সেরাম ইনস্টিটিউট ও দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কম্পানি বেক্সিমকো ফার্মার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করে। এর আগে এই টিকা দেশে আমদানির জন্য বেক্সিমকো চুক্তি করে সেরামের সঙ্গে।

আজ সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছার কথা সরকারের কেনা টিকার প্রথম চালান। একই ফ্লাইটে বেক্সিমকোর টিকার চালানটিও আসার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, বিমানবন্দর থেকে টিকার চালানটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মা গ্রহণ করবে। সেখান থেকে তারাই নিয়ে যাবে গাজীপুরে তাদের নির্ধারিত স্টোরে। পরে সেখান থেকে সরকারের দেওয়া তালিকা অনুসারে বেক্সিমকোর পরিবহনে ভাগে ভাগে পৌঁছে দেওয়া সব জেলার সরকারি স্টোরে।

গতকাল সন্ধ্যায় বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন গুলশানে নিজ বাসায় এক ব্রিফিংয়ে আজ সকালে সেরাম থেকে টিকা আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ সময় তিনি জানান, সরকারের ৫০ লাখ ছাড়া বাকি যে ১০ লাখ টিকা আসবে সেটা বেক্সিমকোসহ দেশের সব ফার্মাসিটিউক্যাল কম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ব্যবহার করা হবে। সেটা সরকারের অনুমতি নিয়েই করা হবে। যদি কিছু টিকা থেকে যায় তবে সেগুলোও সরকারের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বেসরকারি হাসপাতালে দেওয়া হতে পারে। তিনি বলেন, ‘সেরাম থেকে সরকার সবচেয়ে কম দামে টিকা পেয়েছে। এত কম দামে সেরাম আর কাউকে টিকা দেয়নি। আমাদের সঙ্গে সেরামের যে চুক্তি হয়েছে সেটাও নজিরবিহীন। যেখানে বলা আছে, সেরাম যদি ভারত সরকারকে আমাদের চেয়ে কম দরে টিকা দেয় তবে আমাদের সেই দামেই দিতে হবে। আর যদি ভারত সরকার আমাদের চেয়েও বেশি দামে কেনে তবে আমরা সেই অতিরিক্ত টাকা দেব না।’

বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরো বলেন, ‘এই টিকা আমরা আমদানি করছি, আমরা পৌঁছে দেব। পথে কোথাও কোনো সমস্যা হলে, কোনো টিকা নষ্ট হলে, কোনো ঘাটতি থাকলে সব দায়-দায়িত্ব আমাদের, সরকারের কোনো দায় নেই। তারা আমাদের কাছ থেকে তিন কোটি ডোজের প্রতিটি টিকা বুঝে নেবে। আজ যে টিকা আসবে সেগুলো ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ল্যাবে ব্যাচ ধরে ধরে পরীক্ষা হবে। পরিবহনের সময় তাপমাত্রা ঠিক ছিল কি না কিংবা ঠিক আছে কি না সেগুলোও তারা পরীক্ষা করে দেখবে, তারপরই চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে।’

এর আগে ভারত সরকার বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে বিনা মূল্যে ২০ লাখ ডোজ কোভিশিল্ড পাঠিয়েছে। এই টিকা নির্ধারিত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রয়োগের মাধ্যমে দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। এ বিষয়ে আজ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বিকেল ৩টায় ওই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

টিকা নিয়ে গুজব:

ওদিকে গত বৃহস্পতিবার ভারত থেকে উপহারের টিকা এসেছে ২০ লাখ চার হাজার ডোজ; আজ সোমবার আসছে কেনা আরো ৬০ লাখ ডোজ। টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি, কর্মসূচি—সব ঠিকঠাক। তবে করোনার এই টিকা দেওয়ার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার মতো জোরালো কোনো প্রচার-প্রচারণা কর্মসূচি এখনো শুরু করতে পারেনি সরকার। এই সুযোগে টিকা নিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তিমূলক ও অবৈজ্ঞানিক তথ্য, গুজব ও অপপ্রচার চলছে। বিশেষ করে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের ঢেউ বইছে।

এই কাজে যোগ দিয়েছেন কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং তাঁদের মতাদর্শের বুদ্ধিজীবীরা। তাঁরা সভা-সমাবেশে টিকা নিয়ে নানা ধরনের টিপ্পনী-কটূক্তি করছেন, মনগড়া তথ্য দিচ্ছেন নিয়মিত। সমাজের দায়িত্বশীল সুধীজনদেরও কেউ কেউ টিকা না দেওয়ার জন্য প্রকাশ্যেই এক ধরনের উসকানি বা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা নিয়ে অপপ্রচার ছড়ানোর নেপথ্যে রয়েছে সরকারিভাবে সঠিক তথ্য দিয়ে প্রচার-প্রচারণার অভাব এবং সরকারবিরোধীদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। এ জন্য টিকা নিতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে দ্রুত বৈজ্ঞানিক তথ্য তুলে ধরে বড় পরিসরে প্রচার-প্রচারণা শুরুর পাশাপাশি অপপ্রচার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, কেউ গুজবে কান দেবেন না।

এ প্রসঙ্গে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘যাঁরা অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করছেন যে বাংলাদেশে পাঠানো টিকা অক্সফোর্ডের নয়, এটা ভারতের তৈরি, তাঁদের উদ্দেশে বলব—আগে টিকা আবিষ্কার ও উৎপাদন সম্পর্কে জেনে তারপর কথা বলতে হবে। বিশ্বে টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। সে জন্যই অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা তাদেরকে টিকা উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে। এটি ভারতীয় কোনো টিকা নয়। ফলে যাঁরা ভারতবিদ্বেষী মনোভাব নিয়ে অপপ্রচারে নেমেছেন, তাঁরা রাজনৈতিক মতাদর্শ দিয়ে মানুষকে টিকা থেকে বঞ্চিত রাখার চক্রান্তে নেমেছেন। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের উচিত সঠিক তথ্য তুলে ধরা।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘টিকা নিয়ে কারোরই গুজবে কান দেওয়া ঠিক হবে না। ভারতের দেওয়া অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সব ধরনের পরীক্ষা শেষেই দেশে এসেছে। অন্যান্য টিকার তুলনায় আমাদের দেশের আবহাওয়ায় এই টিকা সবচেয়ে বেশি মানানসই। তবে যেকোনো টিকাতেই সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতেই পারে।’

তিনি বলেন, ‘টিকা দেওয়ার পর কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তার জন্য বিশেষ টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সুতরাং সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ে করোনার মতো জীবনঘাতী ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা না নেওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে টিকা নিতে সরকার কাউকে বল প্রয়োগ করবে না।’

তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান বলেন, ‘টিকাসংক্রান্ত প্রচারণার জন্য আমাদের তথ্য অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারাই সব কিছু করছে।’ তিনি বলেন, ‘টিকা নিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যেসব অপপ্রচার চলছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। একসময় বলা হচ্ছিল টিকা আসবেই না, কিন্তু টিকা এসেছে। এখন বলছে এই টিকা নিরাপদ না, যুক্তরাজ্যে তৈরি না। তবে মানুষ ঠিকই বুঝতে পারছে, এগুলো আসলে মিথ্যা, অপপ্রচার।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here