সমৃদ্ধ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ: সরকারি দল, সৎ মানুষ অসহায়: বিরোধি দল

0
76

বাংলা খবর ডেস্ক:
নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বাংলাদেশ এখন সমৃদ্ধ দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বলে দাবি করেছেন সরকারী দলের সদস্যরা। জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাকালে তারা এই দাবি করেন। অন্যদিকে বিরোধী দলের সদস্য বলেছেন, দুর্নীতি প্রতিষ্ঠানিক রুপ পেয়েছে। জাতীয় স্বার্থে দুনীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

বৃহস্পতিবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ওই আলোচনায় অংশ নেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, সরকারি দলের সদস্য নূর মোহাম্মদ, শেখ সালাউদ্দিন, গাজী মো. শাহনওয়াজ, মোর্শেদ আলম, শফিকুল ইসলাম শিমুল, ইলিয়াস উদ্দিন মোল্ল্যা, নেসার আহমেদ, আশেক উল্লাহ রফিক, হাবিব হাসান, জুয়েল আরেং, বেগম সেলিমা আহমাদ ও বেগম নার্গিস রহমান এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ব্যারিষ্টার শামীম হয়দার পাটোয়ারী, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, বেগম সালমা ইসলাম ও গণফোরামের মোকাব্বির খান।

আলোচনায় অংশ নিয়ে পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী দক্ষ নেতৃত্বে সফলভাবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দেশের অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও ২০২০ সালে দেশের ৫.২২ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এটা বিশ্বের মধ্যে ৩ নম্বরে এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। তিনি বলেন, আমরা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। যদিও কোভিড কিছুটা আমাদের কিছুটা থমকে দিয়েছে। সরকার গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছে। এ পর্যন্ত তিন লাখ ৮৫ হাজার ৪০০টি ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা ও পরিবেশ সুরক্ষায় সুনির্দ্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি দেশের বিভিন্ন খাতে অগ্রগতির কথা তুলে ধরে বলেন, ১৯৯০ সালে দেশের জাতীয় অর্থনীতির আকার ছিল ৩৫ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে এটা দশগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৫১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে দেশের বাজেটের আকার ছিল ৯৯ হাজার কোটি টাকা, ২০২০ সালে তা দাঁড়ায় ৫ লাখ কোটি টাকা। ১৯৯০ সালে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের আকার ছিল ৯৬১ মিলিয়ন ডলার, ২০২০ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে রফতানি খাতের আয় ছিল ৪৭ বিলয়ন ডলার, করোনাকালের বিরূপ পরিস্থিতিতে এ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৮ বিলিয়ন ডলার।

মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ। অথচ এ সেতু নিয়ে দেশি-বিদেশি মহল নানা ষড়যন্ত্র করেছে। তাদের ষড়যন্ত্রের কারণে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন আমরা পাইনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সাহসের সাথে নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণে সিদ্ধান্ত নেন। সে দৃঢ়তার কাছে সব হীন ষড়যন্ত্র পরাজিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জাতি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এটা জাতিকে আত্মনির্ভরতায় বলিয়ান হয়ে দাঁড়ানোর সাহস এনে দিয়েছে। জাতি হিসাবে এটা আমাদের সরচেয়ে বড় অর্জন।

সরকারের পদক্ষেপের কারণে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে দাবি করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেন, কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য পেয়েছেন, চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। চালের দাম যাতে সহনীয় রাখা যায়, এ জন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ৩১৪টি বিক্রয়কেন্দ্রে ন্যায্য মূল্যে চাল বিক্রি করছে। কৃষকরা যাতে লাভবান হয়, যাতে ধানের ন্যায্য মূল্য পায়, মধ্যস্বত্বভোগীর হাতে জিম্মি না হয়, এ জন্য আমরা কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি লটারি ও অ্যাপসের মাধ্যমে ধান কিনছি। তিনি আরো বলেন, গত এক যুগের উন্নয়ন অগ্রগতির ফলে বাংলাদেশ এখন উন্নত দেশের দ্বারপ্রান্তে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই দেশ উন্নত দেশের তালিকায় যুক্ত হবে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, দেশে দুর্নীতি স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। সৎ মানুষেরা অসহায় হয়ে পড়ছে। ঘুষ ছাড়া নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে কেউ সেবা পাচ্ছে না। অসৎ ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে মানুষকে অসহায় করে তুলেছে। চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধে মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। ধর্ষণ মহামারি আকার ধারণ করেছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছেন। কিন্তু নির্লজ্জ দুর্নীতিবাজরা সেখানেও দুর্নীতি করে চলেছে। এই দুর্নীতিকে যদি কঠোর হস্তে দমন করা না যায় তাহলে সরকারের কোনো উদ্যোগই কাজে আসবে না। তিনি আরো বলেন, ধর্ষণ মহামারি আকার ধারণ করেছে। যুবক, বৃদ্ধ, শিশু কেউ রক্ষা পাচ্ছে না। মাদক চাঁদাবাজি যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। অসৎ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে জনজীবনকে বিধ্বস্ত করে তুলছে। সমাজে ভয়াবহ অবক্ষয় সব উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। দুর্নীতির কারণে সৎ মানুষেরা সমাজে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে।

দুর্নীতি, অর্থপাচার ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান জাতীয় পার্টির সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারি। তিনি বলেন, দেশে উন্নয়নের গতি অব্যাহত আছে। সরকার বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন করে যাচ্ছে। কিন্তু এ কাজে সফলতার জন্য অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহসিকতার সঙ্গে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ পরিচালনা করছেন উল্লেখ করে শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহসিকতার সঙ্গে পদ্মাসেতু নির্মাণ করে যাচ্ছেন। এই সেতুর নাম শেখ হাসিনা সেতু হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য আবু হোসেন বাবলা বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত করেছেন। কিন্তু এতো কিছুর পরেও দুষ্কৃতি ও দুর্নীতি পরায়ণ ব্যবসায়ীদের কারণে দেশের উন্নয়ন থামকে যেতে পারে। তাই আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, দেশের ১৭ কোটি মানুষ আপনার সঙ্গে আছে, যেভাবে আপনার পিতা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, আপনিও সেই নীতিতে চলবেন। তিনি আরো বলেন, সমগ্র বিশ্বে ভাস্কর্যকে শিল্প হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আমাদের দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ এই ভাস্কর্য শিল্প। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম, আমার ধর্মের কোন উগ্রতা, ধর্মান্ধ আর জঙ্গিবাদের স্থান নেই। অথচ দুঃখের বিষয় দেশের কতিপয় ধর্মান্ধগোষ্ঠী পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলামের নাম করে দেশের হাজার শিল্প সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিশ্বের দরবারে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা করছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল মানুষের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা যখন এগিয়ে যাচ্ছি তখন একটি দল ধারাবাহিকভাবে মিথ্যাচার করে চলেছে। এখন আবার তারা করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে মিথ্যাচার করছে। ভ্যকসিন আসার আগেই তারা মিথ্যাচার করে বলেছিল, ভ্যাকসিন নিয়ে লুটপাট হচ্ছে। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছি সেইভাবে দেশের সব সমস্যা সমাধান করে এগিয়ে যাবো। দেশের নদী ভাঙ্গন কবলিত ও উপকূলীয় এলাকার জানমাল সুরক্ষায় সরকার মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বিরোধী দলের সদস্য সালমা ইসলাম বলেন, কিছু কর্মকাণ্ড দেখে আমি লজ্জিত হই, বিব্রত বোধও করি। একসময় ছিল রাজনীতি মানেই আত্মত্যাগ। এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে প্রকৃত ত্যাগী এবং নীতিবান রাজনীতিবিদদের মূল্যায়ন নেই। বরং সর্বত্র হাইব্রিডদের জয়জয়কার। শটকাট পথে রাতারাতি ধনী হতে অনেকে রাজনীতিতে নাম লেখান। রাজনীতি নাকি ধনী হওয়ার বড় একটি উপায়। একটি দলে যার নিজের এবং পরিবারের অতীত কোন অবদান নেই তিনিও বিশেষ সংযোগে হঠাৎ বড় নেতা হয়ে যাচ্ছেন। এমনকি কেউ কেউ সংসদেও ঢুকে যাচ্ছেন। তাই সাধারণ মানুষ মনে করে রাজনীতি এখন একটা ব্যবসা। এইরকম ধারণা সমাজে তীব্রভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জনগণের এই বদ্ধমূল নেতিবাচক ধারণা দূর করতে সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here