হেফাজতের হরতাল: পুলিশের সাথে সংঘর্ষে অর্ধশত গাড়ি ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ

0
794

বাংলা খবর ডেস্ক:
হেফাজতে ইসলামের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সাইনবোর্ড এলাকা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।

দিনভর সড়ক অবরোধের কারণে দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ছিল পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দফায় দফায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে হেফাজতের নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।

এ সময় ৬ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। সংঘর্ষে হেফাজত কর্মীদের পক্ষে হকার, টোকাই ও বহিরাগত লোকজনও অংশ নেয়।

এদিকে বিকালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করলে হঠাৎ করেই অনেকটা ফিল্মি কায়দায় ৩টি যানবাহনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আবারো পুরো মহাসড়কে ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ শহরে কঠোর পুলিশি অবস্থানের কারণে মাঠে নামতে পারেনি হেফাজতের নেতাকর্মীরা।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ফজরের নামাজের পর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর পশ্চিম ঢাল, শিমরাইল চৌরাস্তা, ইউটার্ন, মাদানীনগর মাদ্রাসা, দশতলা ভবন এলাকা, মৌচাক, সানারপাড় ও সাইনবোর্ড এলাকায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের অবস্থানের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সকাল ৮টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মুফতি বশির উল্লাহ শিমরাইল পয়েন্টে বক্তব্য রাখেন। ইউটার্ন এলাকায় অবস্থান নেয় আন নূর তাহফিজুল কোরআন মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে হেফাজত কর্মীরা।

পরবর্তীতে মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে, বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় হেফাজত কর্মীরা। হরতাল চলাকালে র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা তাদের কয়েক দফা মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন।

একপর্যায়ে সাইনবোর্ড, সানারপাড়, মৌচাক ও ইউটার্ন এলাকায় হেফাজত নেতাকর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ হরতাল সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল এবং ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

এ সময় মো. শফিকুল ইসলাম (৬৭), শাহাদাত (৩৫) ও শাকিলসহ (৩২) কমপক্ষে ৬ জন গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন পুলিশসহ ২০ জন। হেফাজত কর্মীদের সঙ্গে টোকাই, হকারসহ বহিরাগতরাও অংশগ্রহণ করে।

এ সময় হরতালের সমর্থনকারীরা ৩টি ট্রাক, ১টি মাইক্রোবাস ও ৩টি বাসে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এছাড়াও অ্যাম্বুলেন্স, সংবাদমাধ্যমের গাড়িসহ অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাংচুর করা হয়। বিকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আকাশে র‌্যাবের হেলিকপ্টারকে কয়েকবার চক্কর দিতে দেখা গেছে।

মহাসড়কে টহলে ছিল বিজিবি ও পুলিশের সাজোয়া যান এবং জলকামান। এছাড়াও সকাল সাড়ে ১০টায় সাইনবোর্ড ও সানারপাড় এলাকায় মহাসড়ক থেকে পুলিশ হরতাল সমর্থকদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। হরতাল সমর্থকরা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর ইট-পাটকেল ছুড়লে পুলিশও ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

দিনভর সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল মোড় পর্যন্ত কয়েকটি পয়েন্টে থেমে থেমে দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ২ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ যৌথভাবে অ্যাকশনে গেলে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। পরে হঠাৎ করেই হরতাল সমর্থক বহিরাগতরা ১টি বাস, ১টি ট্রাক ও ১টি কাভার্ডভ্যানে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।

এসব ব্যাপারে পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, শহরে হেফাজতের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের পিকেটিং থেকে নিবৃত্ত করা হয়েছে। মহাসড়কে সকাল থেকে তারা রাস্তায় আগুন ধরিয়েছিল। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের সরিয়ে দিলে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

তিনি জানান, হেফাজতের নেতাকর্মীরা পরবর্তীতে মাঠে নেমে পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে পুলিশ পাল্টা অ্যাকশনে যায়। তবে সংঘর্ষে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়েছেন বলে জানান পুলিশ সুপার।

হেফাজতের ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের প্রতিবাদে গত শুক্রবার (২৬ মার্চ) জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে পুলিশের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। রবিবার পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

রবিবার বিকালে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি পল্টন বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পল্টন থানায় মামলা করেছে। মামলা নম্বর ৫৭। এই মামলায় ৫০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। তবে ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। তাদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত।

শুক্রবার (২৬ মার্চ) জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ৫০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। জুমার নামাজের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই সংঘর্ষ চলে।

নিরাপত্তা বাহিনী চরম ধৈর্য ধরছে, আর থাকবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

দুইদিন ধরে দেশে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সরকার নমনীয় নয়, ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছে মাত্র। নিরাপত্তা বাহিনী চরম ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করছে। কিন্তু এ অবস্থা আর থাকবে না।

রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ হুশিয়ারি দেন।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বিক্ষোভে হতাহতের ঘটনায় শনিবার বিক্ষোভ ও রোববার হরতাল ডাকে হেফাজতে ইসলাম। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক হামলা, ভাংচুর, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কয়েকটি থানায় হামলা, ভাংচুর, অস্ত্র লুটসহ বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

রোববার হরতালের দিনও ঢাকাসহ সারা দেশে গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, সড়ক অবরোধ, হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেষ্টা করলে তাদের ওপর হামলা, এক পর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে দিনভর। রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা-অগ্নিসংযোগ করা হয়। এই দুই দিনে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রোববার পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১০ ও চট্টগ্রামে ৪ জন নিহত হয়েছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এতিম ও ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এরাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। গুজব সৃষ্টি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করে উত্তেজনা তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো থেকে বিরত না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অহেতুক এসব আচরণ কাম্য নয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here