সোমবার থেকে সারা দেশে ১ সপ্তাহের লকডাউন

0
104

বংলা খবর ডেস্ক:
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে আগামী সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে এক সপ্তাহের লকডাউনে যাচ্ছে সারা দেশ।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ শনিবার (৩ এপ্রিল) এ তথ্য জানিয়েছেন। নিজের সরকারি বাসভবনে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে আগামী সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, একই তথ্য জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। আজ শনিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে এক সাপ্তহের জন্য সারা দেশে লকডাউনে যাচ্ছে সরকার।’ তবে শিল্প কলকারখানা খোলা থাকবে এবং সেগুলোতে শিফটিং ডিউটি চলবে বলে জানান তিনি।

লকডাউনে অফিস-মার্কেট-আদালত বন্ধ থাকবে:

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা ও সংক্রমণ প্রতিরোধে আগামী সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে এক সপ্তাহের লকডাউনে যাচ্ছে সারা দেশ। এ লকডাউনের মধ্যে জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব ধরনের সরকারি বেসরকারি-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকবে শিল্প ও কারখানা।

শনিবার (৩ এপ্রিল) জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের চলাফেরা যাতে কমাতে পারি সেজন্য আমরা আপাতত এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন দিচ্ছি। সরকারি ও বেসরকারি অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে। সব ধরনের মার্কেট বন্ধ থাকবে।

তিনি বলেন, আমাদের জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান, ডিসি অফিস, ইউএনও অফিস, ফায়ার সার্ভিসের অফিস, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অফিস, সংবাদপত্র অফিস- এই ধরনের অফিস খোলা থাকবে। শিল্প ও কলকারখানা খোলা থাকবে, সেখানে একাধিক শিফট করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে শ্রমিকরা কাজ করেন- সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

গণপরিবহন বন্ধ থাকবে কিনা- জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা যখন এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করব সেখানে তা স্পষ্ট করে বলা হবে। এখনই এ বিষয়ে বলছি না।’

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘মানুষের চলাচল যাতে একেবারে সীমিত করে ফেলা যায় আমরা সেই পদক্ষেপ নেব। কেউ অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে পারবে না।’

অনেক লোক বিভিন্ন স্থানে গিয়ে আটকে থাকতে পারে, তাদের সেই সুযোগটা দিয়ে একদিন পর লকডাউন দেয়া হচ্ছে বলেও জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।

লকডাউনে খোলা থাকবে শিল্প ও কলকারখানা:

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে আগামী সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে এক সপ্তাহের লকডাউনে যাচ্ছে সারা দেশ। তবে এই লকডাউনে শিল্প কলকারখানা খোলা থাকবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

শনিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।

প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে এক সপ্তাহের জন্য সারাদেশে লকডাউনে যাচ্ছে সরকার। তবে এ লকডাউনে শিল্প কলকারখানা খোলা থাকবে এবং সেগুলোতে শিফটিং ডিউটি চলবে।

সচিবসহ স্বাস্থ্যের শীর্ষ কর্মকর্তারা আক্রান্ত, রাজনৈতিক অঙ্গনেও ছড়াছড়ি:

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নানসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তাঁদের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানাও রয়েছেন। অন্যান্য অঙ্গনের মতো করোনা সংক্রমণ বেশ ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনেও।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নানকে গতকাল শুক্রবার ঢাকার মহাখালীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক ড. গোলাম কিবরিয়া বলেছেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব গতকাল দুপুরের দিকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর অবস্থা এখন ভালো।

স্বাস্থ্যসচিব মো. আবদুল মান্নান দেশে পরীক্ষামূলকভাবে করোনাভাইরাসের টিকাদান শুরুর পর গত ২৮ জানুয়ারি টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন। প্রায় দুই মাস পর তিনি করোনায় আক্রান্ত হলেন।

গত বছর জুন মাসে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের দায়িত্ব পান মো. আবদুল মান্নান। এর কিছুদিন পর তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা গতকাল শুক্রবার এক ফেসবুক বার্তায় জানিয়েছেন, তিনি নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত বছর মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে কোনো ছুটি ছাড়াই নিরবচ্ছিন্নভাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার খুরশীদ আলম এবং ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সেন্টারের (এমআইএস) পরিচালক ও এইচআইএস অ্যান্ড ই-হেলথের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক মিজানুর রহমান ছাড়াও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা গত কিছু দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

রাজনৈতিক অঙ্গনে যেসব নেতারা করোনায় আক্রান্ত:

অন্যান্য অঙ্গনের মতো করোনা সংক্রমণ বেশ ভালোভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনেও। করোনার প্রথম ঢেউয়ে দেশ হারিয়েছে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে। দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পরও আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর বেশ কয়েকজন নেতা করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ বাড়িতে, কেউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন বিএনপি নেতারা। একটি সূত্র জানায়, করোনার প্রথম ঢেউয়ে বিএনপির ৪৪০ জন নেতাকর্মী মারা গেছেন। আর আওয়ামী লীগের মারা গেছেন ৫২২ জন নেতাকর্মী। করোনায় মৃত্যুর দিক থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের একাধিক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, জেলা ও বিভাগ পর্যায়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা মারা গেছেন।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন খসরু, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজিম (বর্তমানে তিনি সুস্থ) ও ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি।

দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিএনপির যেসব নেতা আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তাঁর স্ত্রী বিলকিস বেগম, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ড. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও তাঁর স্ত্রী রিফাত হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ড. এ কে এম আজিজুল হক, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, সাবেক ছাত্রনেতা রকিবুল ইসলাম বকুল, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন মিডিয়া কমিটির সদস্য আতিকুর রহমান রুমন, অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল প্রমুখ।

এর মধ্যে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রুহুল কবীর রিজভীকে আইসিইউয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে। হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহার সৃষ্টি এবং দুই মেয়ে জান্নাতুন ইসি সূচনা ও অপরাজিতা খানও আক্রান্ত হয়েছেন।

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) করোনার প্রথম ঢেউয়ে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে জাপার আহসান আদেলুর রহমান করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও নীলফামারী থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here