ঈদ আমেজে স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে ঘরমুখী জনস্রোত

0
54

বাংলা খবর ডেস্ক:
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সাত দিনের বিশেষ বিধি-নিষেধ আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর গতকাল রবিবার গণপরিবহন নিয়ে নৈরাজ্যকর এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। স্বাস্থ্যবিধি মানার সামান্য নমুনা দেখা যায়নি কোথাও। গণপরিবহনে যাত্রীদের বেশির ভাগ ছিল মাস্কবিহীন। বাসের কোনো সিট খালি রাখা হয়নি। উল্টো দাঁড় করিয়েও যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে। আর যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হয়েছে দ্বিগুণ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারও বেশি। স্বাস্থ্যবিধি, অতিরিক্ত ভাড়া—এসব দেখার জন্য কোথাও ছিল না কোনো পর্যবেক্ষকদল। ঈদ আমেজে দূরপাল্লার বাসে টিকিটের জন্য ছিল হুড়াহুড়ি। একই অবস্থা দেখা গেছে লঞ্চেও। উপচে পড়া ভিড়, স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করা, সঙ্গে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরিঘাটে দেখা গেছে ঘরমুখী মানুষের বিপুল স্রোত। এসবের মধ্যেই গতকাল সন্ধ্যায় বৈরী আবহাওয়ার কারণে সদরঘাট থেকে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডাব্লিউটিএ।

ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতউল্লা জানিয়েছেন, আজ সোমবার থেকে পরিবহন বন্ধ থাকছে। সরকারি সিদ্ধান্ত পেয়ে তাঁরা এরই মধ্যে তা মালিকদের জানিয়ে দিয়েছেন। লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহাবুবউদ্দিন বীরবিক্রম জানিয়েছেন, বিশেষ নিষেধাজ্ঞার সময় লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে।

আজ ৫ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে আগামী ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত লকডাউনের আদলে বিশেষ এই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হয়েছে।

গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে চলাচল করা সব কটি বাসে দেখা যায়, বাসচালক, সহকারী, যাত্রী, কারো মুখে মাস্ক নেই। আর প্রতি আসনে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। ফাস্টটেন, প্রজাপতি, বিহঙ্গ, ক্যান্টনমেন্ট, আকাশ, অছিম ও ক্লাসিক পরিবহনের বাসগুলোর ৪০ আসনের বাইরে আরো অন্তত ২০ জন দাঁড় করিয়ে নেওয়া হয়েছে। মিরপুর ১০ নম্বর থেকে গাবতলীর ভাড়া ১০ টাকা হলেও যাত্রীদের কারো কাছ থেকে ২০ টাকা আবার কারো কাছ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে।

রাজধানীর সব বাস টার্মিনালে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। কোথাও পা ফেলার জায়গা ছিল না। দূরপাল্লার বাসগুলো করা হয়নি জীবাণুমুক্তকরণ। যাত্রীদের হাতে দেওয়া হয়নি হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মুখে মাস্ক দেখা যায়নি কোনো যাত্রীর। বাসের সব আসন ভর্তির পর মাঝখানের চলাচল করার স্থানে মোড়া পেতে যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে।

রামপুরা, মহাখালী, বাড্ডা, কল্যাণপুর, গাবতলী, মিরপুর এলাকার ভিক্টর ক্লাসিক, রাইদা, অনাবিলসহ আরো কয়েকটি বাস ঘুরে দেখা গেছে, এসব বাস অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে। আর স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে যাত্রীদের মধ্যে নেই সামান্যতম সচেতনতা।

এদিকে বাসের ভাড়া বাড়ানোসহ অন্যান্য বিধি-নিষেধ জারি করলেও তা তদারকিতে বিআরটিএর কোনো টিমকে মাঠে দেখা যায়নি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও এ বিষয়ে নিষ্ক্রিয় দেখা যায়।

ট্রেনের যেসব যাত্রী অগ্রিম টিকিট কেটেছিল, তাদের টিকিট ফেরত নেওয়া হয়নি। আবার গতকাল বিকেলে কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিটপ্রত্যাশী যাত্রীদের ব্যাপক ভিড়ও ছিল। টিকিট কাটার লাইন কাউন্টার থেকে ভবনের বাইরে সড়ক পর্যন্ত চলে আসে। অনেকেই মূল গন্তব্যের টিকিট না পেয়ে বিমানবন্দর স্টেশনের টিকিট নিয়ে ট্রেনে উঠে পড়েছে। যাত্রীরা বলছে, ট্রেনে উঠে পড়লে মাঝপথে নামাতে পারবে না। তখন প্রয়োজনে অতিরিক্ত জরিমানা দিয়ে হলেও ট্রেনে টিকিট মিলবে। সব কিছু মিলিয়ে গতকাল বেশির ভাগ ট্রেনই অর্ধেকের বেশি যাত্রী নিয়ে কমলাপুর থেকে ঢাকা ছেড়েছে।

টিকিট বুকিং সহকারী সুলতানা আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সব আন্ত নগর ট্রেনের টিকিট শেষ হয়ে গেছে। তবু বাইরে যাত্রীদের চাপ আছে। অনেকে আবার টিকিট ফেরত দিতে এসেছেন। সব মিলিয়ে ভিড় দেখা যাচ্ছে।’

জানা যায়, যেসব যাত্রী ৫, ৬ ও ৭ এপ্রিলের টিকিট অগ্রিম কেটেছিল, তাদের শতভাগ মূল্য ফেরত দেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here