ব্যাংকে লেনদেন: দিনভর লঙ্কাকাণ্ড

0
89

বাংলা খবর ডেস্ক,ঢাকা:
এক সপ্তাহের বেশি সময়ের লকডাউন। ব্যাংকে লেনদেন বন্ধ থাকবে। তাই লকডাউন শুরুর আগের দিন ব্যাংকে টাকা তোলার ভিড়। শত শত মানুষ একসঙ্গে ভিড় করায় হিমশিম খেতে হয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষকেও। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তুলতে হয় গ্রাহকদের। মানুষের ভিড়ে অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধিও মানা হয়নি খুব একটা। দিনভর হুলস্থুল আর ভোগান্তির পর সন্ধ্যায় নতুন সিদ্ধান্ত আসে। লকডাউনেও খোলা থাকবে ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার।
মন্ত্রিসভা বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠানোর পর সন্ধ্যায় নতুন সার্কুলার জারি করা হয়। পরে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন লেনদেন চালু রাখার সিদ্ধান্ত জানায়। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত লেনদেন চলবে বলে এসইসি জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো. আনোয়ারুল ইসলামের সই করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া দৈনিক ব্যাংকিং সময়সূচি সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হলো। এক্ষেত্রে লেনদেন পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখা এবং প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনে দুপুর ২টা ৩০ পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিধি-নিষেধ চলাকালে ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়, প্রধান শাখাসহ সকল অনুমোদিত ডিলার (এডি) শাখা ও জেলা সদরে অবস্থিত ব্যাংকের প্রধান শাখা খোলা রাখতে হবে। তাছাড়া এ সময়ে উপজেলা পর্যায়ে কার্যরত প্রতিটি ব্যাংকের একটি শাখা বৃহস্পতিবার, রোববার এবং মঙ্গলবার খোলা রাখতে হবে। ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্ব-স্ব অফিসে আনা-নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গ্রাহকদের হিসাবে সর্বপ্রকার জমা এবং উত্তোলন, ডিমান্ড ড্রাফট, পে-অর্ডার ইস্যু ও জমা গ্রহণ, ট্রেজারি চালান গ্রহণ, সরকারের বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের আওতায় প্রদত্ত ভাতা-অনুদান বিতরণ, বৈদেশিক রেমিট্যান্সের অর্থ পরিশোধ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃশাখা অর্থ স্থানান্তর, এনআরবি বন্ডে এবং বিভিন্ন প্রকার জাতীয় সঞ্চয় সার্টিফিকেটের মেয়াদপূর্তিতে নগদায়ন ও কুপনের অর্থ পরিশোধ, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ইউটিলিটি বিলগ্রহণসহ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক চালু রাখা বিভিন্ন পেমেন্ট সিস্টেমের বা ক্লিয়ারিং সিস্টেমের আওতাধীন সকল লেনদেন সুবিধা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। সমুদ্র/স্থল/বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থিত ব্যাংকের শাখা, উপ-শাখা, বুথসমূহ সার্বক্ষণিক খোলা রাখার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ বন্দর ও কাস্টম্‌স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাক্রমে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিতপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এর আগে সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ১৪ থেকে ২১শে এপ্রিল ব্যাংক শাখা বন্ধ থাকবে। তবে বন্দর এলাকার ব্যাংক শাখা খোলা রাখা যাবে। ব্যাংক বন্ধের সিদ্ধান্তের খবরে মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যাংকে ছিল উপচেপড়া ভিড়। এমনকি রাজধানীর অনেক শাখায় চাহিদামতো টাকা না পাওয়ার অভিযোগও করেছেন গ্রাহকরা। সকালে মতিঝিলে বিভিন্ন ব্যাংকের বাইরে গ্রাহকের লম্বা লাইন দেখা যায়। ব্যাংকের বাইরেও গ্রাহকদের লম্বা লাইন দেখা যায়। ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলোতে টাকা জমা দেয়ার চেয়ে উঠাচ্ছেন বেশির ভাগ গ্রাহক। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও গ্রাহকদের মধ্যে শিথিলতা দেখা যায়। গ্রাহকদের চাপে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনলাইন ফান্ড ট্রান্সফার সিস্টেমের (ইএফটিএন) সার্ভার অকার্যকর হয়ে পড়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখার সময়ও সার্ভার স্বাভাবিক হয়নি। ফলে আন্তঃব্যাংক লেনদেন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। রাত পর্যন্ত অনেক ব্যাংক কর্মকর্তার কর্মস্থলে অবস্থান করার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথ থেকে দিনে এক লাখ টাকা পর্যন্ত নগদ উত্তোলনের সীমা বাড়িয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমানে বেশির ভাগ ব্যাংকের কার্ড দিয়ে দিনে ৫০ হাজার টাকা ও কিছু ব্যাংক থেকে বেশি অর্থ উত্তোলন করা যায়। নিজ ব্যাংকের বুথ ও অন্য ব্যাংকের বুথ থেকে একই সীমা প্রযোজ্য হবে বলে জানানো হয়। ব্যাংকাররা বলছেন, সাতদিন বন্ধের খবরে আজকে (মঙ্গলবার) স্বাভাবিক দিনের তুলনায় গ্রাহকের অনেক চাপ। তবে টাকা জমা দেয়ার চেয়ে উত্তোলন বেশি করছেন গ্রাহকরা। ব্যাংকের ভিড় ঠেকে রাস্তা পর্যন্ত। এমনকি বুথগুলোতে দেখা যায় বিশাল বড় লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তুলছে। লাইনে দাঁড়িয়ে রোদে ঘেমে একাকার হয়ে গ্রাহকরা টাকা তোলেন। এ সময় তাদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here