ভয়ংকর ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে দেশে প্রথম মৃত্যু: দুই রোগী বারডেমে চিকিৎসাধীন

0
90

বাংলা খবর ডেস্ক,ঢাকা:
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে বাংলাদেশে প্রথম এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিন দিন আগে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার (২৫ মে) পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, মৃত ওই ব্যক্তি মিউকোরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত ছিলেন।

মঙ্গলবার (২৫ মে) সকালে এ বিষয়ে বারডেম হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এম দেলোয়ার হোসেন বলেন, তিন দিন আগে ৬৫ বছর বয়সী এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিসে আক্রান্ত ছিলেন, কিডনির সমস্যাও ছিল তার। তিনি কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়েছিলেন। চিকিৎসার সময় বোঝা যায়নি যে তিনি মিউকোরমাইকোসিসে আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যুর পর এটা জানা গেছে।

এর আগে গত ৮ মে ৪৫ বছর বয়সী এক রোগীর এবং পরে গত ২৩ মে ৬০ বছর বয়সী আরেক রোগীর দেহে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত হয়।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত ওই দু’জন রোগী রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চলতি মাসে তাদের শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত করা হয়। সম্প্রতি ভারতে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে সতর্ক বার্তা জারি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এমন উদ্বেগের মধ্যে এবার রোগটি দেশে শনাক্ত হলো।

বারডেম হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. লাভলি বাড়ৈ গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের ল্যাবে দুজনের শরীরে মিউকরমাইকোসিস শনাক্ত হয়েছে। আমরা তাদের চিকিৎসা দিচ্ছি এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। বারডেমের ল্যাবরেটরিতে করোনা রোগীর শরীরে এবারই প্রথম রোগটি শনাক্ত হয়।

ডা. লাভলি বাড়ৈ জানান, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে অবস্থা গুরুতর হতে পারে। তাই, তাদের সতর্কভাবে চিকিৎসা দিতে হয়।

জানা গেছে, গত ৮ মে ৪৫ বছর বয়সী এক রোগীর শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরে গত ২৩ মে ৬০ বছর বয়সী আরেকজনের দেহে রোগটি শনাক্ত হয়।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ছত্রাক–জাতীয় এক রোগ, যা প্রধানত কভিড রোগীদের মধ্যে ছড়াচ্ছে। মাত্রা ছাড়া স্টেরয়েড নিলে, বেশি দিন হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকলে অথবা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের এই ছত্রাকের শিকার হওয়ার আশঙ্কা বেশি। শাকসবজি, মাটি, ফল, একই মাস্ক প্রতিদিন পরা থেকে এই রোগ ছড়ায় বলে সতর্ক করা হয়েছে। এই রোগটির উপসর্গ হলো জ্বর, মাথাব্যথা, নাক ও চোখ লাল হয়ে যাওয়া, দৃষ্টি কমে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, রক্তবমি ইত্যাদি।

ভারতে এখন পর্যন্ত ৮ হাজার ৮০০ জনের দেহে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা কালো ছত্রাক পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ২১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারতের তামিলনাড়ু, গুজরাট, উড়িষ্যা, রাজস্থান ও তেলেঙ্গানা—এই পাঁচ রাজ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

ব্ল্যাক ও হোয়াইটের পর আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ইয়েলো ফাঙ্গাস

করোনার মধ্যেই নতুন আতঙ্ক ছড়িয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের পর হোয়াইট ফাঙ্গাসের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চেয়েও সাংঘাতিক। তবে এখানেই শেষ নয়। এবার ভারতের গাজিয়াবাদে ইয়েলো ফাঙ্গাসের সন্ধান মিলেছে। আর এই ফাঙ্গাসটি নাকি ব্ল্যাক ও হোয়াইট ফাঙ্গাসের থেকেও সাংঘাতিক।

চিকিৎসকরা বলছেন, ইয়েলো ফাঙ্গাসের ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই সতর্ক হতে হবে। না হলে শরীরের ভেতরে অনেক বেশি ক্ষতি হতে পারে।

ইয়েলো ফাঙ্গাসের লক্ষণ

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ, ওজন কমে যাওয়া, খিদে চলে যাওয়া, হজমে সমস্যা, শরীরে শক্তির অভাব ইয়েলো ফাঙ্গাসের উপসর্গ। এ ছাড়া কোনো আঘাত শুকাতে দেরি হওয়া, সহজে না সারা ইয়েলো ফাঙ্গাসের লক্ষণ। চোখ ভেতরে ঢুকে যাওয়া, চোখের নিচে কালি পড়ে যাওয়াও এই রোগের লক্ষণ।

পরিস্থিতি গুরুতর হলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হতেও শুরু করে। অপুষ্টি ও নেক্রোসিসও দেখা যেতে পারে এই ছত্রাকের কারণে।

প্রতিকার

এই ধরনের কোনো উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার। নিজেকে সব সময় সুরক্ষিত রাখা দরকার।চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণহীন হলে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে ইয়েলো ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। এ ছাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেও ছত্রাকের সংক্রমণ বাড়ে। অতিরিক্ত গরমে আর্দ্রতা বাড়লে এই রোগ ছড়ায়। চিকিৎসকরা বলছেন, গরমে আর্দ্রতা বাড়লে ছত্রাক দ্রুত ছড়ায়। প্রথমেই ধরা পড়লে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে।

ভারতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে অন্তত ৯ হাজার আক্রান্ত

করোনা বিপর্যস্ত ভারতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ মহামারির আকার ধারণ করেছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৮ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মিউকরমাইকোসিস নামে রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। এই রোগে আক্রান্তের হার ৫০ শতাংশ। কোনো কোনো রোগীর চোখ অপসারণ করে বাঁচানো যায়। কিন্তু ভারতে করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়া হাজার হাজার রোগী মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হচ্ছেন।

ভারতের চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা চিকিৎসায় যে স্টেরয়েড ব্যবহৃত হয় তার সঙ্গে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার একটি সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীরা বেশি ঝুঁকিতে আছেন। সাধারণত করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার ১২ থেকে ১৮ দিনের মধ্যে এসব রোগীরা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। ভারতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগীদের অর্ধেকেরই বেশি গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের। অন্তত ১৫টি রাজ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এই রোগের বিস্তারের কারণে মিউকরমাইকোসিসকে মহামারি ঘোষণা করার জন্য ভারতের ২৯টি রাজ্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চিকিৎসকরা জানান, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য যেসব নতুন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে তা দ্রুত ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। মধ্য প্রদেশের ইন্দোর শহরে মহারাজা ইয়েশওয়ান্ত্রাও হাসপাতালে এক সপ্তাহের মধ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের রোগী ৮ জন থেকে ১৮৫ জনে বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ভিপি পাণ্ডে জানান, এদের মধ্যে ৮০ শতাংশ রোগীরই তাৎক্ষণিকভাবে অপারেশন প্রয়োজন।

পাণ্ডে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের চেয়েও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দেখা দিয়েছে। যদি রোগীদের সঠিক সময়ে ও সঠিকভাবে চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে মৃত্যুহার বেড়ে ৯৪ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। এই রোগের চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল এবং ওষুধের সরবরাহও কম।’ সূত্র: বিবিসি।

এক মাস্ক বহুবার ব্যবহারে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হতে পারে বলে দাবি

ভারতীয় এক চিকিৎসক দাবি করেছেন, না ধুয়ে টানা দুই থেকে তিন সপ্তাহ একই মাস্ক পরলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ হতে পারে। মূলত অপরিচ্ছন্নতাই এই সংক্রমণের পেছনে দায়ী বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেছেন, না ধুয়ে টানা দুই/তিন সপ্তাহ একই মাস্ক পরলে এই সংক্রমণ হতে পারে। আজ রবিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে অপরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি স্টেরয়েড ব্যবহারকেও কালো ছত্রাক সংক্রমণের জন্য দায়ী করেছেন আরেক ভারতীয় চিকিৎসক।

ভারতের এইমস হাসপাতালের নিউরোসায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক, চিকিৎসক পি শরৎ চন্দ্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অপরিচ্ছন্নতা ছত্রাক জাতীয় সংক্রমণের পিছনে বড় কারণ। তাঁর কথায়, ‘অনেকেই ২-৩ সপ্তাহের বেশি সময় না ধুয়ে একই মাস্ক ব্যবহার করে যান। তার থেকেও ছড়াতে পারে এই সংক্রমণ।’ এই সংক্রমণ এড়াতে নিয়মিত মাস্ক পরিবর্তন বা সেটিকে সাবান দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। যদিও তার এসব কথার পিছনে এখনো যথেষ্ট প্রমাণ নেই। তবে এক নামকরা বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক সুরেশ সিংহ নারুকা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই ছত্রাকের সংক্রমণের পেছনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বড় ভূমিকা থাকতেই পারে।

তার কথায়, ‘এক মাস্ক পরা তো বটেই, তার পাশাপাশি হাওয়া চলাচল করে না এমন ঘরে বসবাসও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের পেছনে বড় কারণ হতে পারে।’ তবে এর পাশাপাশি অনিয়ন্ত্রিত স্টেরয়েডের ব্যবহারকেও তিনি অনেকাংশে দায়ী করেছেন। তার মতে, ‘কভিড সংক্রমণ নিয়ে সন্দেহ হলেই অনেকে নিজে নিজে স্টেরয়েড নিতে শুরু করেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ নেন না। স্টেরয়েডের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারও এ সংক্রমণের পেছনে কারণ হতে পারে।’ সূত্র: আনন্দবাজার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here