বাংলা খবর ডেস্ক:
ইয়াসের পর ধেয়ে আসবে ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডব চলাকালীনই আগামী ঘূর্ণিঝড়ের নাম রাখা হয়ে গেল। আরব সাগর, ভারত মহাসাগর কিংবা বঙ্গোপসাগরে জন্ম নেবে আগামী ঘূর্ণিঝড় গুলাব। সমুদ্র উত্তাল করে গুলাব আছড়ে পড়বে স্থলভাগের বুকে। তবে সে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, মালদ্বীপ নাকি থাইল্যান্ডে আছড়ে পড়বে তা নিশ্চিত নয়। আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, পরবর্তী ঘূর্ণিঝড় গুলাব কোন সাগরে জন্ম নেবে এবং কোন দেশের উপরে আছড়ে পড়বে তা এখনই বলা বা আন্দাজ করা সম্ভব নয়। তবে নিয়ম অনুসারে একটি ঘূর্ণিঝড় শেষ হতেই পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ পর্ব করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রেও ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ল্যান্ডফল করতেই পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়ে গিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কেন্দ্র ছিল ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের উপকূল এলাকায়। বঙ্গোপসাগর, আন্দামান সাগর ও মার্তাবান উপসাগরের এলাকা থেকে ইয়াস মুখ ঘোরায় ভারতের দিকে। প্রথমে মনে করা হয়েছিলো ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়বে। কিন্তু ধীরে ধীরে সে তার গতিমুখ বদল করে ভারতের ওডিশা উপকুলকেই টার্গেট করে। এবার পালা গুলাবের। ঘূর্ণিঝড় গুলাবের নামকরণ করেছে পাকিস্তান। উর্দু, পার্সি ও হিন্দিতে গুলাব শব্দের অর্থ হলো গোলাপ। ফলে আগামীতে সেই ‘গোলাপ ঝড়’ কোন দেশের উপকূলীয় অঞ্চলকে বেছে নেবে সেটাই এখন দেখার।
ওড়িশার সীমান্ত পেরিয়েছে ইয়াস:
ওদিকে ওড়িশার সীমান্ত পেরিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। ঝাড়খণ্ডে বুধবার (২৬ মে) দুপুর পর্যন্ত ভারি বৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন ভারতের আবহাওয়া দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) পৌঁছবে ঝাড়খণ্ডে। এসব তথ্য জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পত্রিকা আনন্দবাজার।
বলা হয়, ওড়িশা প্রশাসন জানিয়েছে, বালেশ্বর থেকে ময়ুরভঞ্জের দিকে যাবে ইয়াস। তবে বিকেল পর্যন্ত বালেশ্বরের উপরেই অবস্থান করবে এই ঘূর্ণিঝড়। ওড়িশার ত্রাণ কমিশনার জানালেন, স্থলভাগে ইয়াসের হাওয়ার গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১২০-১৪০ কিলোমিটার। তবে বালেশ্বর থেকে ময়ূরভঞ্জে ইয়াস ঢুকবে ১০০-১১০ কিলোমিটার গতিবেগে। তারপর ধীরে ধীরে কমবে ঝড়ের গতিবেগ।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আছড়ে পড়ার পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হতে তিন থেকে চার ঘণ্টা লাগবে। ওড়িশার বিশেষ ত্রাণ কমিশনার পি কে জেনা জানালেন, দুপুর ১টা (ভারতীয় সময়) নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ের লেজের অংশটিও পুরোপুরি ঢুকে পড়বে বালেশ্বরে।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: ৬৬ বাঁধ ভেঙেছে পশ্চিমবঙ্গে
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে পশ্চিমবঙ্গের দুই জেলায় ৬৬টি বাঁধ ভেঙে গেছে। এর মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরে ৫১টি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৫টি বাঁধ ভেঙেছে। বুধবার (২৬ মে) রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসব জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছে এবিপি আনন্দ। জানা গেছে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে ১১ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও মানুষকে নিয়ে আসা হবে। তিন লক্ষ কর্মী ইয়াসের মোকাবিলায় নেমেছেন।
মমতা বলেছেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় গাছ উপড়ে পড়েছে। নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১৫টি বাঁধ ভেঙেছে। পূর্ব মেদিনীপুরে ৫১টি বাঁধ ভেঙেছে। দিঘা থেকে অনেক লোককে সরানো হয়েছে। দেড় লক্ষ লোককে সরানো হয়েছেয। আরও লোক সরানোর চেষ্টা চলছে। জেলাশাসক করোনা আক্রান্ত। সেই অবস্থাতেও কাজ করছেন। কলকাতায় জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনও নিরবচ্ছিন্ন। তবে ভরা কোটালের জন্য কী হবে জানি না। মোট সাড়ে ১১ লক্ষ লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছে। ভরা কোটালের জন্য বাংলায় ক্ষতি বেশি হবে। প্রত্যেক বছর বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘূর্ণিঝড়। সরকার নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাবধান থাকুন। ৭-৮ ঘণ্টা সতর্ক থাকতে হবে।’
‘বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই’
বাংলাদেশের উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাত হানার আর কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। তিনি বলেছেন, আল্লাহ তায়ালার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই, তিনি বাংলাদেশকে একটি প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা করেছেন। রক্ষা করেছেন এ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের জানমাল এবং ফসল ও মাছের ঘেরকে। আল্লাহর কাছে আবারও শুকরিয়া জানাই।
আজ সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজ সকাল ৯টা ১৫ মিনিটের দিকে আমাদের পশ্চিমে ওডিশার উত্তরে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড়টি।
এটি এখনো অতিক্রম করছে। আমরা আশা করছি বিকেল ৪টা নাগাদ এটি ওড়িশা অতিক্রম করবে। এক প্রশ্নের জবাবে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা ইতোমধ্যে সকালে ওড়িশার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গেছে।
এটি মুভমেন্ট করলেও ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে করবে। বাংলাদেশে আঘাত হানার আর কোনো সম্ভাবনা নেই।