ব্রিটেনে ৭৪% নারী অর্থনৈতিক কারণে দীর্ঘ সময় ধরে তার নির্যাতনকারীর সাথে থাকে

0
637

লুবনা তুরিন:

২০১৪ সাল, লন্ডনের বাঙালি কমিউনিটিতে আমার এথনোগ্রাফিক বসতি! পিএইচডি গবেষনার ইন্টারভিউ নিচ্ছি ইস্ট লন্ডন মসজিদের উইমেন সেন্টারে, কমন রুমে একটা মেয়েকে প্রায়দিন দেখতাম কোলে ১ বছরের বাচ্চা নিয়ে বসে থাকে।
একদিন মেয়েটা হঠাৎ করে এসে আমাকে বললো, আমার সাথে তার ব্যক্তিগত আলোচনা রয়েছে, আমি সময় দিলাম! ও বললো, ‘আপা প্লিজ একটু হেল্প করেন! আমি এসাইলাম চাই, মা বাবা বলেছে ডিভোর্স নিয়ে দেশে যেন না ফিরি, উনারা মুখ দেখাতে পারবেনা ! আমার ইনকাম নাই, স্বামীকে ছাড়া কোনোদিন জীবন চিন্তা করি নাই’..
মেয়েটা ২০১০ এ বিয়ের পর বাংলাদেশ থেকে ইংল্যান্ড এসেছিল স্বামীর সাথে।আমাকে ওর শরীরের কিছু জখমের চিহ্ন দেখিয়েছিলো! জিজ্ঞেস করলাম কমিউনিটির কাউকে এতদিন বলেননি কেন ? মেয়েটা বললো লজ্জা আর অপমানের ভয়ে !মেয়েটিকে নিয়ে কয়েক জায়গায় দৌঁড়াদৌড়ি করেছিলাম! একটা সাপোর্ট নেটওয়ার্কে বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় নিলাম ! এর আগে তার স্বামীর ইন্টারভিউ নিলাম, ভদ্রলোক আমাকে বললেন এই দেশে তিনি তার স্ত্রীর একমাত্র অভিভাবক,তাকে শাসন করার অধিকারও তিনার আছে !
আসলে ভিক্টিমরা মান, সম্মান, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, বা Stockholm syndrome এর কারণে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সকে নরমাল করে নেয় জীবনের সাথে ! ব্রিটেনের Abuse survey তেও দেখা যায়যে ৭৪% নারী অর্থনৈতিক কারণে দীর্ঘ সময় ধরে তার নির্যাতনকারীর সাথে থাকে।
মনোবিজ্ঞানীরা ২ টি বিষয়কে নির্যাতনের পরিবেশ তৈরিতে চিহ্নিত করেছেন :
১. ‘ক্রিটিকাল ইনার ভয়েস’ বা ডেস্ট্রাক্টিভ থট প্রসেস, যেটা মূলত পুরুষের fear of losing masculinity থেকে তৈরী হয়: ফলস্বরূপ স্ত্রীকে কন্ট্রোল করতে চায়- ইনার ভয়েস বলে, You’re not a man if you don’t control her!
২. হার্মফুল ইলুশন। মনোবিজ্ঞানী রবার্ট ফায়ারস্টোন এই ইলুশনকে কে নাম দিয়েছেন ‘ফ্যান্টাসি বন্ড’, এইখানে মুলতঃ নারী নিজেকে পরিপূর্ণ সত্তা রূপে দেখতে পায়না, আর মনে করে her partner can make her complete and is responsible for her happiness.
আমার ঘটনার মেয়েটা ও তার স্বামীর ক্ষেত্রে এই সবগুলো বিষয় লক্ষ্য করা গেছে।
সান ফ্রান্সিস্কোতে ‘Pause button’ টেকনিক খুব কাজে দিয়েছিল ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অফেন্ডারদের উপর! এই টেকনিকে ইলুশন মুক্ত রিয়েল সেল্ফ থেকে ইলুশন যুক্ত এন্টি-সেল্ফকে আলাদা করা হয়! এন্টি সেল্ফ incorporated from their own early experiences of violence!
আমার মনে হয় Pause button সবার নেয়া উচিত কারণ ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সএকটা পেন্ডেমিক! এটা এখন সবখানে, সবসমাজে regardless of ethnicity, level of education, religious beliefs or social status.

লেখক: রিসার্চ কনসালটেন্ট, যুক্তরাজ্য

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here