২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পেশ আজ

0
54

বাংলা খবর ডেস্ক,ঢাকা:
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি দেশের ৫০তম বাজেট এবং আ হ ম মুস্তফা কামালের তৃতীয় বাজেট। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’। অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাজেটকে অধিকতর অংশগ্রহণমূলক করার জন্য অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে বাজেটের তথ্য ও দলিল দেওয়া হবে। দেশ-বিদেশ থেকে যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ওয়েবসাইটে থাকা ফিডব্যাক ফরম পূরণ করে বাজেট সম্পর্কে মতামত ও সুপারিশ জানাতে পারবেন।
অর্থমন্ত্রী এমন এক সময়ে বাজেট দিচ্ছেন, যখন সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে যারা কাজ হারিয়েছেন এবং যাদের আয় কমেছে, তারা আগের অবস্থায় ফেরত আসতে চান। করোনার সময়ে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো বারবার সামনে চলে এসেছে। হাসপাতালে বিছানা পাননি অনেক রোগী। অনেকে অক্সিজেন পাননি। এমনকি অনেকের হাসপাতালে ভর্তিরও সুযোগ হয়নি। অন্যদিকে, ব্যবসা-বাণিজ্য সংকটে পড়ায় কাজ হারিয়েছেন অনেকে। অনেক প্রতিষ্ঠান উৎপাদন কমিয়েছে। অনেকের বিক্রি কমে গেছে। অনানুষ্ঠানিক খাতের ব্যবসায়ী ও কর্মীরা সমস্যায় পড়েছেন সবচেয়ে বেশি। ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ সুযোগ বাড়াতে সরকারের কাছে নানা প্রণোদনা ও কর ছাড় আশা করছেন।

মহামারীর প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ। শঙ্কা আছে, তৃতীয়, চতুর্থ ঢেউয়ের ধাক্কার। কবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে দেশ, তা নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছে না। এমন অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যেই ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। তার এবারের বাজেটের প্রধান লক্ষ্য অর্থনীতির ক্ষত সারিয়ে তোলা; মানুষের প্রাণ বাঁচানো। যে কাজ হারিয়েছে, তাকে কাজও দেয়া। যে কষ্টে আছে, তার কষ্ট লাঘব করা। আর তাই তিনি তার নতুন বাজেটের শিরোনাম দিয়েছেন ‘জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’। অর্থাৎ এই বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে অর্থমন্ত্রী অর্থনীতিকে যেমন আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চান, তেমনি দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষকে টিকা প্রদানসহ নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে সংস্থান করতে চান জীবন বাঁচিয়ে জীবিকার।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আগামী বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে করোনায় কর্মহীনদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করা। খাদ্য মজুদ বাড়িয়ে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা, রাজস্ব আয় বাড়ানো, করোনার টিকা নিশ্চিত করা, চলমান অগ্রাধিকার পাওয়া প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব সংগ্রহ, বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরতা কমানো ও দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানো ইত্যাদি।

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, নতুন বাজেট হবে করোনা মোকাবেলা করে এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ের বাজট। আগামী বাজেট হবে সাধারণ মানুষের বাজেট। দেশের মানুষ বাঁচানোর ও ব্যবসায়ী বাঁচানোর বাজেট। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আমাদের লক্ষ্যই থাকবে দেশের মানুষকে বাঁচানো; ব্যবসায়ীদের বাঁচানো। সবার সবকিছু দেখেই আমরা এবার বাজেট উত্থাপন করব। আমাদের সব পিছিয়ে পড়া মানুষ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আমাদের সঙ্গে রাখতে হবে। তাদের সঙ্গে রেখেই এগিয়ে যেতে চাই। সে কারণেই এভাবে বলতে চাই, আগামী বাজেট হবে ‘জীবন ও জীবিকা রক্ষার’ বাজেট। তিনি বলেন, ‘সমাজের অতি দরিদ্র মানুষকে মূল ধারায় নিয়ে আসা, গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা এবং মহামারীর কারণে বিধ্বস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোকে টিকে থাকার সুযোগ করে দেয়ার কৌশল অবশ্যই থাকবে নতুন বাজেটে।’

করোনা মহামারীর মধ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ ৩ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে দেশের ৫০তম বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন। এই বাজেটে অর্থমন্ত্রী করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জীবন বাঁচানোর এবং তাদের জীবিকার নানা চেষ্টা করেছেন। দরিদ্র মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য বাজেটে স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক নিরাপত্তা এই তিনটি খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নতুন বাজেটে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় টিকাসহ বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল থাকছে। যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত বরাদ্দের অতিরিক্ত। ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল নতুন বছরে তা ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

সামাজিক নিরাপত্তার স্থায়ী কর্মসূচী হিসেবে সামাজিক সুরক্ষার আওতাভুক্ত মানুষের সংখ্যা ১ লাখের ওপর নিয়ে গেছেন, তেমনি আস্থায়ী ভিত্তিতে আরও প্রায় দেড় লাখ মানুষের জন্য সরকারী ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। সবমিলিয়ে আগামী বাজেটে প্রায় আড়াই কোটি মানুষকে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীর আওতায় নিয়ে এসেছেন।

অন্যদিকে করোনার মধ্যে কর্মহীন মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা করার জন্য অর্থনীতিকে গতিশীল করার ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। এজন্য এবারের বাজেটে ব্যবসায়ীদের কর্পোরেট কর হ্রাস, ন্যূনতম কর হার কমানো, শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে আগাম কর কমানোসহ নানা প্রণোদনা সুবিধা দেয়া হয়েছে। আগের কয়েক বছরের মতো এ বছরও অর্থনীতির প্রয়োজনেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যাতে দেশের বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা হয়ে উঠে। আর বিনিয়োগ ও বাণিজ্য চাঙ্গা হলে অর্থনীতিও গতিশীল হবে। ফলে অর্থনীতিকে আগের প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। মহামারী করোনার মধ্যেও প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। আর এই প্রবাসী আয়ের ওপর ভিত্তি করেই দেশের অর্থনীতি এগিয়ে চলেছে। তাই এই প্রবাসী আয় আরও বাড়ানোর জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিটেন্সে বিপরীতে নগদ প্রণোদনার ১ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হতে পারে।

আগামী বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৭.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করে বাজেটের সম্ভাব্য আকার ধরা হচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ১৭.৪৭ শতাংশ। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে যা ৩৫ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বেশি। চলমান ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।

সম্পদের সীমাবদ্ধতার প্রেক্ষিতে প্রতি বছরের মতো এবারও সংশোধন করা হয়েছে বার্ষিক উন্নযন কর্মসূচী (এডিপি)। ফলে সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। মূল্যস্ফীতি সহনীয় রেখে বাজেট ঘাটতি ধরা হচ্ছে ৬.১ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরের মতো আগামী বাজেটেও মূল্যস্ফীতি ৫.৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য মোট রাজস্ব ও বৈদেশিক অনুদান মিলিয়ে আয়ের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। কর বাবদ পাওয়া যাবে ৩ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআরবহির্ভূত কর ১৬ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ব্যতীত আয় থেকে পাওয়া যাবে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক সহায়তা বাবদ পাওয়া যাবে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। বাজেটের অনুদানসহ ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৬.১ শতাংশ। অনুদান ছাড়া বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা (জিডিপির ৬.২ শতাংশ)।

উল্লেখ্য, আগামী অর্থবছরের বাজেটটি হবে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের তৃতীয় বাজেট এবং আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের ত্রয়োদশ বাজেট।

সর্বোচ্চ গুরুত্ব তিন খাতে ॥ বরাদ্দের ক্ষেত্রে এবারের বাজেটে তিনটি খাতকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। খাত তিনটি হচ্ছে- স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক নিরাপত্তা। এর মধ্যে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় টিকাসহ বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল থাকছে। এছাড়া আগামী অর্থবছরে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় চলতি বছরের চেয়ে বরাদ্দ ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। বহুদিন উৎপাদনের চাকা ঘোরেনি। নিম্ন আয়ের মানুষ জীবিকা নিয়ে চরম ভোগান্তিতে আছে। বেড়েছে কর্মহীনের সংখ্যা। আর তা বিবেচনায় রেখেই সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আকার বেড়েছে।

করোনার কারণে অনেক মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে হচ্ছে। বিভিন্ন প্রয়োজনে খোলা বাজারে বিক্রির (ওএমএস) কার্যক্রম চালানো হয়। এর জন্য চালের প্রয়োজন। বোরোর উৎপাদন ভাল হয়েছে, তবে আগামীতে আমনের ফলন কেমন হবে তা আগাম বলা যাচ্ছে না। তাই প্রয়োজন হতে পারে চাল কেনার। এ কারণে সরকার এ বছর খাদ্যকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করছে বাজেট। যার ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ পাচ্ছে খাদ্য খাত। সব মিলিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় পাচ্ছে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় এ বছর সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হবে। এমনিতেই বছরে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১০ শতাংশ হারে বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তবে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আসছে বাজেটে তা আরও বাড়ানো হচ্ছে। সেজন্য চলতি বছরের চেয়ে নতুন বছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ২৪ শতাংশ। দুই দফা করোনাভাইরাস সংক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যারা, তাদের জন্যই মূলত বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের বয়স্ক ও বিধবা ভাতাভোগীর সংখ্যা এখন ৮৮ লাখ। এরা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আট ধরনের ভাতা পান। এ বছর দেশের দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০ উপজেলায় দরিদ্র ও প্রবীণদের ভাতা শতভাগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। করোনার অভিঘাতে যারা কাজ হারাচ্ছেন, তাদের এসব কর্মসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করার তাগিদই দিয়ে আসছিলেন অর্থনীতিবিদরা। তারই প্রভাব পড়তে যাচ্ছে আগামী বাজেটে। যেখানে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী খাতে যোগ হচ্ছে বাড়তি প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।

ভর্তুকি ও প্রণোদনা ॥ আসন্ন বাজেটে কৃষি, খাদ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রায় ৪৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ভর্তুকি ও প্রণোদনা থাকছে। এটি সম্ভাব্য প্রস্তাবিত বাজেটের ৮ শতাংশের বেশি। বরাদ্দের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি এবারও কৃষিতে যাচ্ছে। আর সবচেয়ে কম দেয়া হচ্ছে পাট খাতে। চলতি বাজেটে ভর্তুকিতে ৩৮ হাজার ৬৪৮ কোটি এবং প্রণোদনায় ১০ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।

তবে চলতি বছরের তুলনায় রেমিটেন্স খাতে অনেক বেশি বাড়ানো হয়েছে প্রণোদনার পরিমাণ। করোনা পরিস্থিতিতে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়বেÑ এমন ধারণা থেকে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে। রেমিটেন্স খাতে চলতি বছর ৩ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে অন্যান্য খাতে ভর্তুকি ও প্রণোদনায় বরাদ্দ চলতি বছরের মতো আগামী বছরও একই থাকছে। কোন ক্ষেত্রে বাড়ানো হচ্ছে না।

আগামী বছর কৃষি খাতে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, বিদ্যুতে ৯ হাজার কোটি, প্রাকৃতিক তরল গ্যাসে (এলএনজি) ৮ হাজার ৫০০ কোটি এবং রফতানিতে ৭ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ থাকছে। এছাড়া খাদ্যে ৬ হাজার কোটি, রেমিটেন্সে ৪ হাজার কোটি, প্রণোদনা প্যাকেজ ঋণের সুদ পরিশোধে ২ হাজার কোটি, পাটে ৫০০ কোটি এবং অন্যান্য খাতে ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাবদ।

রাজস্ব আদায় ॥ করোনার কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা চলছে। ফলে কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। তাই আগামী বছর রাজস্ব আদায়ে অর্থমন্ত্রী কর রাজস্বের চেয়ে কর ব্যতীত রাজস্ব আয় বাড়াতে বেশি জোর দিয়েছেন। অর্থাৎ রাজস্ব আয় বাড়াতে করের ওপর চাপ সৃষ্টি না করে করবহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জনে কর ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য মোট রাজস্ব ও বৈদেশিক অনুদান মিলিয়ে আয়ের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। কর বাবদ পাওয়া যাবে ৩ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআর বহির্ভূত কর ১৬ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া পাওয়া যাবে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক সহায়তা বাবদ পাওয়া যাবে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

মোট আয়ের লক্ষ্য বাড়লেও আগামী বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হচ্ছে না। আগামী বাজেটে এনবিআরকে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৮ কোটি টাকার লক্ষ্যই দেয়া হচ্ছে। চলতি বাজেটে দেয়া হয়েছিল। চলতি বাজেটে এনবিআরকে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেয়া আছে। এই হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে মাত্র ৭৮ কোটি টাকা। কারণ করোনা মহামারীর কারণে রাজস্ব আয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে। অর্থবছরের প্রথম প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৫২০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার ১১.৭৮ শতাংশ। এখনও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা পিছিয়ে আছে, যা দুই মাসে অর্জন করা অসম্ভব।

যে কারণে এনবিআরের ওপর চাপ কমিয়ে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত করের বাইরে আয় বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। এজন্য আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে কর ব্যতীত রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ৪৩ হাজার কোটি টাকা ধরা হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here