ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ

0
51

বাংলা খবর ডেস্ক:
দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এসব এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধি-নিষেধ বা লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় লকডাউনের মেয়াদ এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। কোনো কোনোটির লকডাউন বাড়ানো হয়েছে দ্বিতীয় মেয়াদে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফল মিলছে না।

প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, করোনা নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে মাঠে কাজ করছেন জনপ্রতিনিধিরা। পরিচালনা করা হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। কোথাও ব্যারিকেড বসিয়ে, কোথাও মাইকিং করে অকারণে বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে মানুষকে। জনসচেতনতা বাড়াতে কোথাও কোথাও বিলি করা হচ্ছে লিফলেট। তবু নানা অজুহাতে মানুষ ঘরের বাইরে আসছে। মাস্ক ব্যবহার করছে না। ফলে দেশজুড়েই দৈনিক শনাক্তে আবার দেখা যাচ্ছে ঊর্ধ্বগতি। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে। সীমান্তের কোথাও কোথাও দৈনিক শনাক্তের হার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর দিকে আরো আগে থেকেই নজর রাখা উচিত ছিল। বিশেষ করে যখন পাশের দেশে ব্যাপকভাবে সংক্রমণ বেড়ে যায় তখনই যদি দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্যাপকভাবে টিকা দেওয়া যেত, তবে হয়তো এখন ওই সব এলাকায় এত সংক্রমণ না-ও হতে পারত। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ এখন সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে জরুরি টিকাদান কার্যক্রম চালানো দরকার বলে মত দিলেও এ ব্যাপারে ভিন্নমতও আছে বলে খবরে প্রকাশ।

বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন, এখন যেসব এলাকায় সংক্রমণ তুলনামূলক কম আছে, সেই এলাকাগুলোতে টিকা দেওয়া গেলে বেশি উপকার হবে, সেখানে সংক্রমণ ছড়াতে পারবে না।

সীমান্তবর্তী এলাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, যেসব সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই সেসব স্থান দিয়ে অবাধে চলাচল। এই চলাচল সীমান্ত এলাকায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ালেও বিষয়টি নিয়ে এলাকার মানুষ খুব একটা সচেতন বলে মনে হয় না।

ওদিকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে গোপনে বাংলাদেশিদের ভারতে যাতায়াত বেড়েছে। ফলে সীমান্ত এলাকাসহ দেশের অভ্যন্তরে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্টে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেড়েই চলেছে। সংক্রমণ ঠেকাতে সীমান্ত এলাকায় বিজিবির টহল জোরদার করা হলেও পুলিশের পক্ষ থেকে অবৈধ প্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। অনেকের অভিযোগ, মাদক চোরাকারবারিদের অবাধ যাতায়াত ও মাদকপাচার কারবার আগের মতোই চলমান। ভারতীয় নাগরিকদের চলাচলও সীমান্ত এলাকায় বাড়াচ্ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি। সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের কাছে আইডি কার্ড জমা দিয়ে বাংলাদেশে জমিতে কাজ করতে আসে।

কাজেই সংক্রমণ ঠেকাতে বিধি-নিষেধ মেনে চলার পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারির কোনো বিকল্প নেই।

আরও ৩৯ জনের মৃত্যু:

ওদিকে দেশে গতকাল পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৩ হাজার ৭১ জনে। একই সময়ে নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৬৩৭ জন। এ নিয়ে দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮ লাখ ২৪ হাজার ৪৮৬ জনে।

শনিবার (১২ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ১০৮ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৬৪ হাজার ২৪ জন। এই সময়ে ১১ হাজার ৬৬১ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হলেও পরীক্ষা করা হয়েছে ১১ হাজার ৫৯০টি। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ। মোট পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৩৯ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ খুলনা বিভাগে ১১ জন। এছাড়া ঢাকা বিভাগে ১০, চট্টগ্রামে ৬ জন, রাজশাহীতে ৭, বরিশালে ২ ও সিলেটে ১ জন ও রংপুরে ২ জন মারা গেছেন।

২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ২৬ জন পুরুষ এবং ১৩ জন নারী। এদের মধ্যে বাসায় ৩ জন ছাড়া বাকিরা হাসপাতালে মারা গেছেন। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ২০ জনেরই বয়স ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছরের ৭, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ৭ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ৪ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন।


বাদুড়ের দেহে মিলল নয়া করোনাভাইরাস:

বাদুড়ের দেহে বেশ কয়েকটি নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের সন্ধান পেলেন চীনের গবেষকরা।

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে বাদুড়ের দেহ থেকে এই ভাইরাস খুঁজে পেয়েছেন তারা। এমনই দাবি করে চীনা বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নতুন গোত্রের এ ভাইরাসই প্রমাণ করে দিচ্ছে যে, কত ধরনের করোনাভাইরাসের বাহক বাদুড়। তাদের মধ্যে বেশ কিছু মানবদেহে সংক্রমণ ঘটায়। খবর সিএনএনের।

স্যানডং বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা গবেষকরা জানিয়েছেন, বেশ কিছু প্রজাতির বাদুড়ের দেহ থেকে ২৪ ধরনের নভেল করোনাভাইরাস সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মধ্যে চারটে আবার সার্স কোভ-২ গোত্রের।

গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের মে থেকে ২০২০ সালের নভেম্বরের মধ্যে ছোট ছোট বাদুড় এবং জঙ্গলের বাদুড়ের মল, মূত্র—এমনকি লালারসের পরীক্ষা করেছেন। সেখান থেকে যেসব করোনাভাইরাসের সন্ধান পেয়েছেন, তার মধ্যে একটি জিনগতভাবে সার্স কোভ ২-এর সমগোত্রীয়, যা বর্তমানে প্রাণঘাতী মহামারি সৃষ্টি করেছে।

তারা আরও দাবি করেছেন, ২০২০ সালে থাইল্যান্ড থেকে যে ভাইরাস সংগ্রহ করেছেন, তা সার্স কোভ ২-এর সমগোত্রীয়। এই পরীক্ষা থেকে এটিই স্পষ্ট যে, সার্স কোভ ২-এর সমগোত্রীয় ভাইরাসের বাহক বাদুড়ই।

করোনার উৎস কী তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর মেলেনি। অভিযোগ উঠেছে, চীনের উহান থেকেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। যদিও চীন তা অস্বীকার করেছে বারবারই।

করোনার উৎস খুঁজতে একটা তদন্ত কমিটিও গঠন করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু সন্তোষজনক উত্তর না মেলায় চীনের বিরুদ্ধে ফের তদন্তের দাবি জোরালো হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। এমন একটি সময়ে চীনা গবেষকরা দাবি করলেন, বেশ কয়েকটি নতুন গোত্রের করোনাভাইরাসের সন্ধান পেয়েছেন তারা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here