বাংলা খবর ডেস্ক,ঢাকা:
চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড চাইবে পুলিশ।
সোমবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা করে।
মামলার বাকি তিন আসামি হলেন- লিপি আক্তার (১৮), সুমি আক্তার (১৯) ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধা (২৪)।
মঙ্গলবার ডিবি গুলশান জোনাল টিমের এসআই মানিক কুমার সিকদার বলেন, গতকাল রাত ১২টার দিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে বিমানবন্দর থানায় মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।
গতকাল বিকালে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় এক হাজার পিস ইয়াবা, বিদেশি মদসহ পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
এর আগে সকালে চিত্রনায়িকা পরীমনি ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ, অমিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা করেন।
অবশেষে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ‘তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন’
ওদিকে পরীমণিকে ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টা ঘটনার ৬ দিনের মাথায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি ‘তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন’ করেছে! ১৫ জুলাই রাত ১টার পরে সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান স্বাক্ষরিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই নিন্দা জানানোর কথা বলা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি সাভারের বিরুলিয়া এলাকায় বোট ক্লাবে চিত্রনায়িকা পরীমণির সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে মামলা দায়ের হয়েছে এবং কিছু আসামী গ্রেফতার হয়েছে। এই মামলায় দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে চলচ্চিত্র সমিতি পরীমনিকে সার্বিক সহযোগিতা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।
ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিকে জানিয়েও কোনো সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ করেন পরীমনি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান তাকে আশ্বাস দিয়েও সহযোগিতা করেননি বরং কালক্ষেপণ করেছেন। ১৩ জুন নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানান তিনি।
এই সম্মেলনের পর তোলপাড় সৃষ্টি হয় সারাদেশে। টনক নড়ে প্রশাসনের। ঘটনার রাত ৯ জুন বনানী থানা সাধারণ ডায়েরি গ্রহণ না করলেও ১৪ জুন দুপুরে সাভার থানায় মামলা দায়ের করতে পারেন পরীমনি। এদিন দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার হন প্রধান আসামী নাসির ইউ মাহমুদসহ ৫ জন। একই সঙ্গে নাসির ইউ মাহমুদকে বহিষ্কার করে ঢাকা বোট ক্লাব।
অভিযুক্তরা গ্রেফতারের পর পরীমণি স্বস্তি প্রকাশ করেন। বলেন, ‘অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করায় ভরসা পাচ্ছি। আশা করি ন্যায্য বিচার পাবো।’
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি ও অমির সঙ্গে দুটো গাড়িতে করে উত্তরার দিকে যান পরীমনি। তার ছোট বোনও সে সসময় সঙ্গে ছিলেন। পথে অমির কথায় বোট ক্লাবের সামনে থামেন তারা। অমি তাদের ভেতরে ঢোকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। পরে নাসির মাহমুদ কফি পানের আমন্ত্রণ জানান বলে মামলায় বলা হয়। এরপর অমি মদ পানের জন্য জোরাজুরি করে। আমি মদ্যপান করতে না চাইলে ১ নং আসামি (নাসির) জোর করে আমার মুখের মধ্যে বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। পরে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেন। নাসির মাহমুদ তখন ‘অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ’ করতে থাকেন এবং ‘ধর্ষণের চেষ্টা’ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন পরীমনি।
‘আমি হার মানবো না’
ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর চিত্রনায়িকা পরীমনি এখন ভরসা পাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক, সকল সহকর্মী এবং দেশের মানুষ সবার প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন উল্লেখ করে ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে পরীমনি লেখেন, আমার বিশ্বাস আমার আস্থা ভুল ছিলো না। আইন সবার উপরে। শুধু সেই সঠিক জায়গায় পৌঁছানটাই যত কষ্ট! আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সকল সাংবাদিক, সকল সহকর্মী এবং দেশের মানুষ যারা আমার এই দুঃসময়ে আমার পাশে ছিলেন, আছেন আমি সবার প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ। আপনারাই আমার সাহস। পরী আরও বলেন, আসামীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন আমার চাওয়া আসামীরা যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়। কোনভাবেই যেন এই ধরনের লোকেরা আর কোন মেয়েকে এভাবে নির্যাতন ও অপমান করার সাহস না পায়।
আমি হার মানবো না। আমি এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি এই দেশের আশীর্বাদ। আপনি মা। আপনি মমতার আঁচলে জড়িয়ে রাখেন আপনার সকল সন্তানকে।