গবেষণায় ডেঙ্গুর নতুন ধরন, মৃত্যু ঝুঁকি বেশি

0
69

বাংলা খবর ডেস্ক,ঢাকা:
দেশে ডেঙ্গু রোগের নতুন ধরনে আগের চেয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। এবার ডেঙ্গুর ডেনভি-৩ ভ্যারিয়েন্টে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এটা ডেনভি-১, ২ এর চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর। ডেনভি-১ ও ২ এ আক্রান্ত হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে অনেকের। কিন্তু ডেনভি-৩ এর বিরুদ্ধে এই ক্ষমতা গড়ে ওঠেনি। ঢাকার একটি হাসপাতালের ডেঙ্গুর ২০টি নমুনার জিনোম সিকুয়েন্স করে এমন তথ্য গবেষণায় পাওয়া গেছে। গতকাল বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)’র মিলনায়তনে ‘ডেঙ্গু ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের তথ্য উন্মোচন’
অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান গবেষকরা।
বিসিএসআইআর’র উদ্যোগে পরিচালিত এই গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপ যা ডেনভি-১, ডেনভি-২, ডেনভি-৩ ও ডেনভি-৪ এর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশে ডেনভি-৩ শনাক্ত হয় ২০১৭ সালে।

২০১৮ সালে ডেনভি-৩ এর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে এবং ২০১৯ সালে মহামারি আকার ধারণ করে। সমপ্রতি বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেশি। এ বছর রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতাল থেকে সংগৃহীত ২০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স পরীক্ষায় ডেনভি-৩ শনাক্ত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিসিএসআইআর’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ জানান, দেশে এবছর জুলাই থেকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হলে এর ব্যাপকতা নির্ধারণের জন্য বিসিএসআইআর’র চেয়ারম্যানের সার্বিক নির্দেশনায় ডেঙ্গু ভাইরাসের নমুনার জিনোম সিকুয়েন্সিং-এর কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। গবেষণায় এ বছর রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতাল থেকে সংগৃহীত ২০টি নমুনার জিনোম সিকুয়েন্সিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে ডেঙ্গুর ডেনভি-৩ শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ সেরোটাইপ-৩ এর অন্তগর্ত। ডেঙ্গুর মিউটেশন বিষয়ক উল্লেখযোগ্য গবেষণা না থাকায় এসব মিউটেশন ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাব শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। যেহেতু নমুনাসমূহ শুধুমাত্র ঢাকার একটি হাসপাতাল থেকে নেয়া হয়েছে, তাই সেক্ষেত্রে সারা দেশে ডেঙ্গুর বিস্তৃতি জানার জন্য আরও অধিক সংখ্যক জিনোম সিকুয়েন্সিং করা প্রয়োজন। বিসিএসআইআর প্রাথমিকভাবে এই গবেষণা করেছে। ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে ধাপে ধাপে আরও ব্যাপক গবেষণার কথা তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান।
তিনি আরও জানান, বিসিএসআইআর ২০২০ সালে দেশে করোনাভাইরাসের ভাইরাসের সঠিক চিত্র অনুধাবনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের ৮টি বিভাগ থেকে করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে ১১০০-এর অধিক নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স সম্পন্ন করেছে। এখন পর্যন্ত ৭৭৮টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং ডাটা আন্তর্জাতিক ডাটাবেজ জিআইএসএআইডিতে প্রকাশ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে সংস্থাটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিম খান বলেন, দেশে প্রথম এই ধরন শনাক্ত হয় ২০১৭ সালে। ২০১৭ সালের আগে ডেনভি-১ ও ২ এ আক্রান্ত হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে অনেকের। কিন্তু ডেনভি-৩ এর বিরুদ্ধে এই ক্ষমতা গড়ে ওঠেনি। যারা আগের দুই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত তারা নতুন করে ডেনভি-৩ আক্রান্ত হলে হেমোরেজ বা সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়েছে। তাই এবার মৃত্যু বেশি। তিনি আরও জানান, মায়ের দুধ পান করলে শিশুর ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন গবেষণায়।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইফুল্লাহ মুন্সি বলেন, বিসিএসআইআরের এই সিকোয়েন্সিং ভবিষ্যতে ভ্যাকসিন উৎপাদনে সহায়ক হবে। এবার ডেঙ্গুর ডেনভি-৩ ভ্যারিয়েন্টে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এটা ডেনভি-১, ২ এর চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর। এর আগে ২০১৩ থেকে ১৬ পর্যন্ত ডেনভি-১ এবং ডেনভি-২ দিয়ে আক্রান্ত হয়েছে মানুষ। যারা সেরোটাইপ-১ এবং সেরোটাইপ-২ আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে সেরোটাইপ-৩ এ আক্রান্ত হচ্ছেন তারা হেমোরোজিক হচ্ছেন, শক হচ্ছে। এতে মৃত্যুর ঝুঁকিটা বেড়ে যায়। বিসিএসআইআর’র বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই গবেষণার মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাসের জীবন-রহস্য উন্মোচনের ফলে সংক্রমিত সেরোটাইপ শনাক্ত করে ভাইরাসের বিস্তার রোধ, আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় সহায়তাকরণ, কার্যকারী একটি ডেঙ্গু ভাইরাস রোগ শনাক্তকরণ কিট ও ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান।
এ বছরে ৪২ জনের মৃত্যু, প্রায় ১০ হাজার শনাক্ত: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২৫২ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতেই রয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায় ২০২ জন। আগস্ট মাসের ২৯ দিনে ৭ হাজার ১৯৯ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। দেশে ডেঙ্গুতে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে আগস্টের ২৯ দিনেই মারা গেছেন ৩০ জন। আর জুলাইতে ১২ জন। গত জুলাই মাসেই ভর্তি হয়েছিলেন ২ হাজার ২৮৬ জন ডেঙ্গু রোগী। তার আগের মাসে এই সংখ্যা ছিল ২৭২ জন। ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বাইরে নতুন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫০ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ১২৩ জন। ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে মোট ভর্তি রোগী আছেন ৯৮০ জন। অন্যান্য বিভাগে বর্তমানে ভর্তি আছেন ১৪৩ জন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৮৫৭ জন। সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৮ হাজার ৬৯০ জন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here