বিএনপির সমাবেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দাবি: মিছিল পণ্ড

0
62

বাংলা খবর ডেস্ক,ঢাকা:
সরকার পরিবর্তন এখন জনগণের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। আজ মঙ্গলবার নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সম্প্রীতি সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আর ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। তারা কোনো সমস্যারই সমাধান করতে পারেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকার আজকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরি করে, তারা মানুষের অধিকার ব্যাহত করে, তারা জনমানুষের জীবনকে দূর্বিষহ করে তুলেছে। তাই বলব, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটা নতুন নির্বাচন, দিন। যাতে সকলে ভোট দিতে পারে, ভোটের মাধ্যমে তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।’

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব অভিমুখে সম্প্রীতি শোভাযাত্রা হওয়ার কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করার কারণে ছোট ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব।

ফকিরাপুল থেকে কাকরাইলের মোড় পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশে পরিণত হয়। নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। সমাবেশ শুরু হয় সকাল ১১টায়, শেষ হয় ১১টা ২৮ মিনিটে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে আমরা একটা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে একটা র‌্যালির মাধ্যমে সরকার যে পরিকল্পিতভাবে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে তার প্রতিবাদ জানাতে শান্তিপূর্ণ র‌্যালি করে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত যাবো। আমরা চিঠিও দিয়েছিলাম আগে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজকে সকাল থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের এখানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা এখন সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করছি।’

আজকে ৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দাবি করে অবিলম্বে তাদের মুক্তি চান বিএনপি মহাসচিব।

সমাবেশের শেষ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মহাসচিব বলেন, ‘আমি ভাইদের বলতে চাই আপনারা অনেক কষ্ট করে, এভাবে অনেক প্রতিকূলতা এড়িয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছেন। আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ। আমি অনুরোধ করবো, এখান থেকে শান্তিপূর্ণভাবে যে যেখান থেকে এসেছেন, চলে যাবেন। আমরা কোনো মিছিল বা র‌্যালি করছি না সম্প্রীতির স্বার্থে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশে একটা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করার জন্য সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হিন্দু, মুসলমানের মধ্যে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ এক সাথে বাস করছি। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখন হিন্দু সম্প্রদায়ের, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের, মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপরে তারা আঘাত হেনেছে। তাদের লক্ষ্য একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদেরকে কোনো গণতান্ত্রিক স্পেস দেয় না আমরা যারা বিরোধী দল করি, আমাদেরকে একটা সভা করার জায়গা দেয় না, একটা মিছিল করার জায়গায় দেয় না। মানুষের যে অধিকারগুলোকে সেগুলোকে দমন করার জন্য তারা সবরকম নির্যাতনমূলক-দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা একটু দয়া শান্ত থাকবেন। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইদের, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ভাইদের ওপর কোনো আঘাত আসলে সেটা আমরা সামনে গিয়ে অবশ্যই আমরা প্রতিহত করবো, প্রতিরোধ করবো। আজকে সরকার যে ব্যর্থ হয়েছে, এই সরকারের মানুষদের নিরাপত্তা দিতে, সেজন্য এর বিরুদ্ধে আমরা সমাবেশ করছি। আমরা পরিষ্কার বলে দিতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে একটি মুক্ত সমাজ, একটি গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করবার জন্য যেখানে সম্প্রদায় সম্প্রদায় কোনো বিভেদ-বৈষম্য থাকবে না। সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে আজকে ধ্বংস করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না এবং নির্বাচনে যাবো না। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে হটিয়ে একটি নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করে আগামী দিনে নির্বাচন করব। সকলে আগামী দিনে আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য আপনারা প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আপনাদের আমাদের যে সংগঠিত করছেন, আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। যেকোনো মুহূর্তে আন্দোলনের ডাক পড়বে। সময় পাবেন অথবা সময় পাবেন না। আজকে যেমনি ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তার থেকে শতগুণ শক্তি নিয়ে রাজপথে থাকতে হবে। রাজপথে যে বাঁধা আসবে সেই বাধা অতিক্রম করতে হবে। আঘাত করলে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আঘাত করলে আমরা নির্ভয়ে মাথা পেতে নেব না- এই কথাটা পরিষ্কারভাবে প্রশাসনকে বলতে চাই, এই কথাটা পরিষ্কারভাবে সরকারকে বলতে চাই। সময় থাকতে পদত্যাগ করুন, দেশে শান্তি অবস্থা ফিরিয়ে আনুন। আর মন্দিরে হামলার সঙ্গে জড়িত সেই প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার করুন, বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে যে মামলা দিয়েছেন তা প্রত্যাহার করুন, যাদের গ্রেপ্তার করেছেন তাদের মুক্তি দিন।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘গণতন্ত্রের মা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির একমাত্র পথ আন্দোলনের মাধ্যমেই, অন্য কোনো পথ নেই। সেজন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হবে। এরশাদের সময়েও মন্দিরে হামলা হয়েছে। কিন্তু এরশাদের পতন কেউ ঠেকাতে পারে নাই। আজকে মন্দিরে হামলা করে ক্ষমতা টেকানো যাবে না। এই জুলুমবাজ, স্বৈরাচারী, দুর্নীতিবাজ, তাবেদারী সরকারকে বিদায় নিতেই হবে।’

প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের মহানগর উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে বিএনপির নিতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


ওদিকে সমাবেশ শেষে পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিচার্জে পণ্ড হয়ে গেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ‘সরকারের ব্যর্থতা’র প্রতিবাদে রাজধানীতে বিএনপির মিছিলের কর্মসূচি।

দলটির নেতাকর্মীরা মিছিলের চেষ্টা করলে আজ মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) সকাল ১১টা থেকে পুলিশ তাতে নানাভাবে বাধা দেওয়ায় পণ্ড হয়ে যায় তাঁদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে আজ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বিএনপি। সকাল ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত মিছিল করার কথা ছিল। তবে তার আগেই সকাল থেকে বিএনপি কার্যালয় ঘিরে রাখে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল ১০টা থেকে নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে দলীয় অফিসের সামনে জড়ো হয়ে মিছিল করতে থাকেন। একপর্যায়ে তা সমাবেশে রূপ নেয়। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে সমাবেশ শেষ করে মিছিল নিয়ে নাইটিংগেলের দিকে আগানোর চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এ সময় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ টিয়ারসেল ও লাঠিচার্জ করে নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়। একপর্যায়ে পণ্ড হয়ে যায় দলটি কর্মসূচি।

এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত দলের কেন্দ্রীয় নেতারা নয়াপল্টনে কার্যালয়ের ভেতর অবস্থান করছিলেন। গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে দলের নেতাকর্মীদের ভেতর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here