লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড : ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট

0
366

বাংলা খবর ডেস্ক,ঢাকা;
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনায় মৃতদের পরিবারের জন্য ৫০ লাখ টাকা করে এবং গুরুতর আহত ব্যক্তিদের জন্য ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে বিচারিক অনুসন্ধানের জন্য কমিশন গঠনের নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।

আজ রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। সোমবার এ রিট আবেদন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে নৌ পরিবহনসচিব, বিআইডাব্লিওটিএর চেয়ারম্যান এবং লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখকে।

গত ২৩ ডিসেম্বর দিনগত রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটিতে পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকার সুগন্ধা নদীতে বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়। এতে এখন পর্যন্ত ৪১ জনের প্রাণহানি হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন শতাধিক।

আগুনে দগ্ধ ৮১ জনের মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪৬ জন। ১৯ জনকে পাঠানো হয়েছে ঢাকায়। আর ১৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। পুড়ে যাওয়া লঞ্চটিতে কতজন যাত্রী ছিলেন, তার সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বিআইডাব্লিউটিএ থেকে জানানো হয়েছে, লঞ্চটিতে প্রায় ৪০০ যাত্রী ছিলেন।

চার মালিকসহ আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা:

ওদিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনায় নৌযানটির চার মালিকসহ আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকার নৌ আদালত।

রোববার বিকালে নৌ আদালতের বিচারক (স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট) জয়নাব বেগম আসামি আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

নৌ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বেল্লাল হোসাইন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঝালকাঠীর সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না রাখার দায়ে ঢাকা ও বরগুনা রোববার দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনার দুই দিন পর ঢাকায় নৌ আদালতে মামলা দায়ের করেন বাংলাদেশ নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের মুখ্য পরিদর্শক মো. শফিকুর রহমান।

এদিনই লঞ্চের চার মালিক এবং দুইজন মাস্টার ও দুইজন ড্রাইভারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন নৌ আদালত। তাদের বিরুদ্ধে নৌযানে পর্যাপ্ত সংখ্যক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, লাইফ জ্যাকেটসহ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না রাখাসহ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ এর চারটি ধারা লংঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ ছাড়া বরগুনায় লঞ্চ মালিকের নাম উল্লে­খ করে ২০-২৫ জন অজ্ঞাত শ্রমিককে আসামি করে মামলা করেছেন স্থানীয় বালিয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার ঢাকা নদী বন্দর (সদরঘাট) থেকে অভিযান-১০ লঞ্চটি ছেড়ে যায়। ঝালকাঠী থেকে বরগুনা যাওয়ার পথে সুগন্ধা নদীতে আগুন লেগে লঞ্চটির ৪২ জন যাত্রী মারা গেছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। নিখোঁজ রয়েছেন ৫১ জন যাত্রী। ওই ঘটনার দুইদিন পর এ দুটি মামলা দায়ের করা হলো।

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের দায়ের করা মামলায় আসামি লঞ্চের চার মালিকরা হলেন- মো. হামজালাল, মো. শামীম আহম্মেদ, মো. রাসেল আহাম্মেদ ও ফেরদৌস হাসান রাব্বি।

মাস্টার ও ড্রাইভাররা হলেন- প্রথম শ্রেণির ইনচার্জ মাস্টার মো. রিয়াজ সিকদার ও দ্বিতীয় শ্রেণির ইনচার্জ মাস্টার মো. খলিলুর রহমান এবং প্রথম শ্রেণির ইনচার্জ ড্রাইভার মো. মাসুম বিল্লাহ ও দ্বিতীয় শ্রেণির ড্রাইভার আবুল কালাম।

এজহারে অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ এর ৫৬, ৬৬, ৬৯ ও ৭০ ধারা লংঘনের কথা উল্লে­খ করা হয়েছে। তবে ওই ঘটনায় লঞ্চের ৪২জন যাত্রীর মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকলেও দণ্ডবিধির কোনো ধারা এজাহারে উল্লেখ করা হয়নি। এতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না রাখা, বিপজ্জনক মাল পরিবহণ, উপযুক্ত ও বৈধ সনদপত্র ছাড়া মাস্টার-ড্রাইভার নিয়োগ দেওয়া এবং অসদাচরণের কারণে জাহাজ বিপদাপন্ন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব ধারা ভঙ্গের পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নৌযানটিতে পর্যন্ত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, লাইফ জ্যাকেট, বয়া, বালির বক্স ও বালতি ছিল না। ইঞ্জিন রুমের বাইরে অননুমোদিতভাবে অনেকগুলো ডিজেল বোঝাই ড্রাম, রান্নার জন্য সিলিন্ডারের গ্যাসের চুলা ছিল। এসব অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ এর ৫৬, ৬৬, ৬৯ ও ৭০ ধারার পরিপন্থী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here