যেভাবে উদ্ধার করা হয় আটকে পড়া নাবিকদের

0
350

বাংলা খবর ডেস্ক:
ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে পড়া বাংলাদেশি জাহাজে থাকা ২৮ জন নাবিক ও ইঞ্জিনিয়ারকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় বাঙ্কারে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। রকেট হামলায় নিহত ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মৃতদেহ নিরাপদ জায়গায় নিয়ে হিমাগারে রাখা হয়েছে। বন্দরটির আশেপাশের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী বাংলাদেশের নাগরিকদের সহায়তায় এ উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। বুধবার ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে বাংলাদেশি জাহাজে রকেট হামলার ঘটনায় ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান নিহত হন। এ ঘটনায় জাহাজে থাকা দু’জন নারী ক্যাডেটসহ ২৮ জন নাবিক এবং ইঞ্জিনিয়ার বেঁচে গেছেন। এ ঘটনার পর থেকেই জীবিত ক্রুরা বাঁচার আকুতি জানিয়ে তাদের স্বজনদের কাছে বার্তা পাঠিয়ে আসছিলেন। তাদের কয়েকজন সামাজিক মাধ্যমেও বাঁচার আকুতি জানিয়ে ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। তাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হয়।

কিন্তু তাতে কোনো পক্ষ থেকেই নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছিল না। বেঁচে থাকা নাবিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। গতকাল পোল্যান্ড থেকে রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, আমরা এখানে ইউক্রেন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু যুদ্ধের ভেতরে আমাদের তারা কিছু বলেনি। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় বাংলাদেশিদের তৎপরতায় জাহাজের নাবিক এবং ইঞ্জিনিয়ারদের উদ্ধার করে বন্দরটি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ একটি জায়গায় নেয়া গেছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, অনেক বাংলাদেশি দীর্ঘদিন ধরে সেখানে আছেন। ওনারা বন্দরের আশেপাশেই থাকেন। বন্দরের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভালো। সেই সম্পর্ক এবং ওনাদের ব্যক্তিগত তৎপরতায় আমরা নাবিকদের জাহাজ থেকে বের করে একটা সেল্টার হাউজে নিয়েছি। লায়লা জানান, শেল্টার হাউজেই ওই নাবিক এবং ইঞ্জিনিয়াররা রয়েছেন এবং সেখানে ডেডবডিও নেয়া হয়েছে। ডেডবডি একটি হিমাগারে রাখা হয়েছে। জীবিত ২৮ জনকে এবং নিহতের মৃতদেহ নিয়ে পুরো দলটিকে ইউক্রেনের সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডের রাজধানীতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এখন ইউক্রেনের ভেতরেই আমরা নিরাপদ জায়গা যতটুকু মনে করেছি সেখানে নিয়েছি। সেখানে বাংকার আছে। ওনারা প্রয়োজনে বাঙ্কারে থাকতে পারবেন। এখন ডেডবডিসহ ওনাদের পোল্যান্ড সীমান্ত দিয়ে ওয়ারশতে এনে আমরা যাতে বাংলাদেশে পাঠাতে পারি সেই চেষ্টা করছি।
এদিকে, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা চলাকালে বাংলাদেশি জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধিকে ওই অঞ্চলে পাঠানোকে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন বিএসসি’র অদূরদর্শিতা মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জাহাজে হামলার পর যেভাবে উদ্যোগ নিয়ে তাদেরকে সরিয়ে নেয়া হলো, সেটি কেন আগে করা হয়নি সেটা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুদ্ধকবলিত এবং জলদস্যুপ্রবণ এলাকায় জাহাজ না চালানোর এখতিয়ার জাহাজ মালিকদের আছে। জাহাজের ক্যাপ্টেনও চাইলে বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে জাহাজের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারেন। নাবিকদের জীবনের নিরাপত্তা বিষয়ক কনভেনশন ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য সেফটি অব লাইফ এট সি বা সোলাস’-এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের মালিক বিএসসি নাবিকদের জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে সেখানে চাইলে জাহাজ না যাওয়ার নির্দেশনা দিতে পারতো। কিন্তু তারা তা করেনি। তাই বিষয়টিকে বিএসসি’র সার্বিক অব্যবস্থাপনাই বলছেন অনেকে। বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স এসোসিয়েশন (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শাখাওয়াত হোসাইন বলেন, গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি জয়েন্ট ওয়ার কমিটি কর্তৃক জায়গাটিকে যুদ্ধকবলিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণার ৭ দিন পর জাহাজটিকে সেখানে কেন যেতে অনুমতি দেয়া হয়েছে এটি প্রশ্নবিদ্ধ। তাই আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। তিনি বলেন, জাহাজটি যুদ্ধকবলিত এলাকায় আটকে যাওয়ার পরও জাহাজটির নাবিকদের নিরাপদে সরিয়ে আনার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। জাহাজ পরিচালনায় বিএসসি’র সার্বিক অব্যবস্থাপনার কারণে আমাদের আজকে এই মৃত্যু ও নাবিকদের দুর্দশা দেখতে হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির চরম ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন বিএসসি’র নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্যিক) পীযূষ দত্ত মানবজমিনকে বলেন, জাহাজটি না পাঠানোর সুযোগ ছিল না। চার্টারার যদি যেতে চায় আইনগতভাবে না পাঠানোর সুযোগ নেই। তিনি বলেন, বিএসসি’র এই জাহাজ ডেনমার্কের ডেলটা করপোরেশনের কাছে ভাড়া দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল তাতে যুদ্ধাঞ্চলে যেতে পারবে না এমন বিষয় ছিল না। আর জাহাজটি ছাড়ার আগে যুদ্ধ হয়নি। আর এতো তাড়াতাড়ি যে যুদ্ধ লেগে যাবে সেটি কেউ চিন্তাও করেনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here