বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

0
103

বাংলা খবর ডেস্ক:
বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। গত সোমবার রাতে ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিনি এ সহায়তা চান। বৈঠকে বাংলাদেশের অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র ও নির্বাচনের তাগিদ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।

সে সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশ নেওয়ার মানসিকতা থাকা প্রয়োজন।

সে কারণে বিএনপিকেও নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রয়োজন। বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করতে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যও চান তিনি।
বৈঠকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত করার তাগিদ দেন ব্লিংকেন। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানান।

“র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে দীর্ঘ প্রক্রিয়া”

ওদিকে র‌্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়া পার হতে হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। গতকাল সোমবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‌ওদের একটা প্রক্রিয়া আছে। এটি আমাদের সম্পন্ন করতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় সব কিছুরই অনেক প্রক্রিয়া আছে।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সংশ্লিষ্ট ওই সদস্যদের প্রতি সন্তুষ্ট হতে হবে। এতে সময় লাগবে। মোমেন বলেন, ‌সুইচের মতো না যে এক দিনে অন আর অফ করতে পারবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া বেশ জটিল। তিনি বলেন, ‌যেমন ট্যারিফ প্রত্যাহারের জন্য ২৩টা কমিটিতে অনুমোদন লাগে। তারপর প্রেসিডেন্ট সেটার ওপর রেসপন্স দিতে পারেন। এর আগে প্রেসিডেন্ট কিছু বলতে পারেন না। এখানে এক্সিকিউটিভের যথেষ্ট আটকা, সে কারণে এটা সহজে বলতে পারবে না। আপনাকে প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে র‍্যাবের ভূমিকা ও অগ্রগতি তুলে ধরেন। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‌র‌্যাব আমাদের দেশে এমন সময়ে তৈরি হয়েছিল, যখন আমাদের দেশে সন্ত্রাস, জিহাদি- এগুলোর উৎপাত খুব বেশি ছিল।

মন্ত্রী বলেন, এক দিনে ৪৯৫টা বোমাবাজি হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়, যার ফলে ২৪ জন লোক মারা যায়, ৩৭০ জন আহত হয়। সারা দেশে মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক ছিল, ওই সময়ে তৈরি হয়েছিল।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, র‌্যাব হয়তো কখনো কখনো ‘অতিরিক্ত বা বেশি কিছু করে’ ফেলেছে। তবে ইনবিল্ট সিস্টেম আছে জবাবদিহিতার এবং অনেকের শাস্তি হয়েছে। এমনকি লাইফ এক্সিকিউশনও হয়েছে। সুতরাং এখানে জবাবদিহিতা আছে।

মন্ত্রী বলেন, ‌আমি বলেছি, আপনাদের রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টিই (জেমস এফ মরিয়ার্টি) বলেছিলেন, র‌্যাব ইজ দ্য এফবিআই অব বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটির ওপরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আমার তরুণরা ওখানে কাজ করায় নিরুৎসাহিত হবে। আমি খুব খুশি হবো, আপনি যদি এটা পুনর্বিবেচনা করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন জবাবে কী বলেছেন জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, উনি বললেন যে এটার প্রসেস আছে, সেই প্রসেসে হবে। তবে আমাদের জবাবদিহিতা দরকার। আমরা এ ব্যাপারে বেশ সোচ্চার।

মোমেন বলেন, আমি বললাম, আমরা সব ধরনের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি। তখন বললেন যে গত চার মাসে কেউ মারা যায়নি। আর ডিএসএ-তেও আমাদের ট্র্যাক রেকর্ড গুড। গত চার মাসে একজনও অ্যারেস্ট হয়নি। উনি বললেন, এটা ভালো।

মোমেন-ব্লিনকেন বৈঠক বিষয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতি:

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি জে ব্লিনকেন নিরাপদ ও সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক সমাজের ভিত্তি মানবাধিকার, আইনের শাসন ও ধর্ম চর্চার স্বাধীনতা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছেন। তিনি এসবের গুরুত্বের বিষয়টি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপে পুনর্ব্যক্ত করেছেন। মুখপাত্র নেড প্রাইসকে উদ্বৃত করে সোমবার অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিষয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। উল্লেখ্য, ওই বৈঠকের উদ্বোধনী সেশন বা দুই মন্ত্রীর সুচনা বক্তব্য আগেই প্রকাশ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। পরবর্তীতে যে রুদ্ধদ্বার আলোচনা হয়েছে তা নিয়ে মন্ত্রী মোমেন গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেছেন। এবার স্টেট ডিপার্টমেন্টর তরফে মুখপাত্রকে উদ্বৃত করে বিবৃতিটি প্রচার (রিডআউট) করা হলো।

বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন ও সম্পর্কের প্রতিফলন হিসেবে সেক্রেটারি অফ স্টেট এন্টনি জে. ব্লিনকেন আজ (সোমবার) বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে. আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেক্রেটারি অব স্টেট ব্লিনঙ্কেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সম্পর্কের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। একই সঙ্গে ফুলব্রাইট বিনিময়সহ দুই দেশের জনগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠাসহ গত অর্ধ শতাব্দীতে পারস্পরিক সহযোগিতার যেসব প্রতিফলন ছিল তা নিয়ে কথা বলেছেন।

উচ্চ পর্যায়ের ওই বৈঠকে জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় বিদ্যমান সহযোগিতা, গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাহিদা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি তারা গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here