দেশে ৪৮ লাখ মানুষ প্রতিবন্ধী

0
62

বাংলা খবর ডেস্ক:
দেশের মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৮০ শতাংশের মধ্যে শারীরিক বা মানসিক কোনো না কোনো প্রতিবন্ধিতা রয়েছে। নারীর তুলনায় পুরুষের মধ্যে এটি বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। ন্যাশনাল সার্ভে অন পারসনস উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ (এনএসপিডি) নামে প্রাথমিক এ প্রতিবেদন সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

২০১১ সালের সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৯৮ লাখ। বিবিএসের তথ্য হচ্ছে, প্রতি ১০ বছরে জনসংখ্যা গড়ে দুই কোটি বেড়ে থাকে। সর্বশেষ জনশুমারির পর ১১ বছর পার হয়েছে। সে হিসাবে দেশে বর্তমানে জনসংখ্যা কমবেশি ১৭ কোটি। এ হিসাবে দেশে এখন প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ৪৮ লাখ। প্রতিবন্ধীর সরকারি সংজ্ঞা অনুযায়ী এদের মধ্যে অন্তত একটি প্রতিবন্ধিতা রয়েছে।

জরিপে নমুনা হিসেবে সারাদেশের ৩৬ হাজার খানার তথ্য নেওয়া হয়েছে। প্রশ্নোত্তর এবং তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়। তথ্য সংগ্রহ করা হয় গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে। দেশে এ ধরনের জরিপ এটিই প্রথম। প্রতিবেদনের নির্বাহী সারসংক্ষেপে বিবিএস বলেছে, প্রতিবন্ধী মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নে নেওয়া পরিকল্পনা, পরিবীক্ষণ এবং মূল্যায়নে এসব হালনাগাদ তথ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধিতা বেশি। মোট প্রতিবন্ধীর ২ দশমিক ৯২ শতাংশ গ্রামের, বাকি ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ শহরের। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধীদের মধ্যে সর্বোচ্চ হার শারীরিক প্রতিবন্ধীর। ২ দশমিক ৮০ শতাংশের মধ্যে ১ দশমিক ১৯ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধী। মানসিক কারণে প্রতিবন্ধীর সংজ্ঞায় পড়া মানুষের হার শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ৩৯ শতাংশ। বাকপ্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ১৪ এবং শ্রবণপ্রতিবন্ধী শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ মানুষ। অন্য আরও কিছু প্রতিবন্ধিতার তথ্য তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রতিবন্ধীরা সামাজিকভাবে বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য ও হয়রানির শিকার হন। সরকারের দেওয়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকেও তাঁরা বঞ্চিত। এমনকি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) বিভিন্ন সেবা কর্মসূচি থেকেও তাঁরা সেবা সুবিধা পাননি। এ কারণে সামাজিকভাবে পিছিয়ে আছেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে অনেকে বঞ্চনা ও হয়রানির অভিযোগ করেন না। যাঁরা করেছেন, তাঁরাও সুবিচারপূর্ণ প্রতিকার পাননি।

প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, প্রতিবন্ধীদের মাত্র ২৭ দশমিক ২১ শতাংশ কাজে নিযুক্ত আছেন। জরিপকালের আগের তিন মাসের মধ্যে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পাননি ৩৮ শতাংশের বেশি। যাঁরা সাধারণ চিকিৎসা পেয়েছেন, তাঁদের প্রায় ২৭ শতাংশই এ সেবা পেয়েছেন সরকারি হাসপাতাল থেকে। প্রায় ৭২ শতাংশ প্রতিবন্ধীকে উচ্চমূল্যে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে হয়েছে।

প্রতিবেদনে সমাজের বঞ্চিতদের নিয়ে কাজ করা এনজিওর মাধ্যমে চিকিৎসার সুযোগের তথ্য রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো। ১ শতাংশের কম মাত্র শূন্য ৩১ শতাংশ প্রতিবন্ধী মানুষ এনজিও থেকে চিকিৎসাসেবা পেয়েছেন। প্রতিবন্ধী অনেকেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তারপরও ৫১ শতাংশ প্রতিবন্ধী এখনও করোনার টিকা পাননি। সরকারের দেওয়া প্রতিবন্ধী ভাতা পাননি ৭৭ শতাংশ। প্রতিবেশীর হয়রানির শিকার হয়েছেন ৪০ শতাংশ। পরিবারে প্রতিবন্ধী সদস্য আছে এমন ৫ শতাংশ পরিবার বিদ্রুপের শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছে। এদের ৪৬ শতাংশ অভিযোগ করেও কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো সুবিচার পায়নি।

প্রতিবন্ধী শিশুদের ৫৯ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত পড়ালেখা করছে না। ৭৫ শতাংশের বেশি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে যাচ্ছে না। এসব শিশু সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসজিডি) সাম্য, শান্তিপূর্ণ ও উন্নত সমাজের কথা বলা হয়েছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন লক্ষ্য হিসেবে ‘বাদ যাবে না কেউ’ স্লোগানের কথা বলা হয়েছে এতে। ২০৩০ সালের মধ্যেই এ লক্ষ্য অর্জনে সরকারের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। লক্ষ্য অর্জনে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের মূল প্রবাহে নিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here