ভোটার তালিকা হালনাগাদ লক্ষ্য পূরণ না হওয়ার শঙ্কা

0
221

বাংলা খবর ডেস্ক:
ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম চলমান। এবার ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে হলে জন্মনিবন্ধন সনদ আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে ভোটার হতে গিয়ে অনেকে জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে ভোগান্তির কথা বলছেন। প্রয়োজনীয় কাগজ থাকার পরও জনপ্রতিনিধিরা তাদের হয়রানি করছেন, দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করছেন। ফলে ইসি কর্মকর্তারা অনেকের নাম ভোটার তালিকায় যুক্ত করতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতি চলমান থাকলে চলতি হালনাগাদে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ ইসি কর্মকর্তরা।

বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হওয়ায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ক্ষেত্রে হয়রানি করা হলে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে স্থানীয় সরকার বিভাগে সুপারিশ করবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠিানটি।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোটার তালিকা প্রণয়ন আইন অনুযায়ী, ফরম-২ এ জন্ম সনদ নম্বর দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। কিন্তু ভোটার হতে ইচ্ছুক অনেকেই শিক্ষা সনদ, বাড়ি ভাড়ার রশিদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকার পরও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থায় ভুক্তভোগীরা জন্ম সনদ ছাড়াই ভোটার হাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা নির্বাচন কার্যালয়ে ধরনা দেন। চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদে এ সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভোটার তালিকা হালনাগাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার শঙ্কাও প্রকাশ করছেন ইসি কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি ইসির মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়গুলোই উঠে এসেছে। সভায় একাধিক আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বলেছেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জন্ম সনদ দিতে গড়িমসি করেন, অনেকেই দেন না। আবার কেউ কেউ বলেছেন, সমস্যা ছিল। পরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা করে সমাধান করতে হয়েছে।

সভার কার্য বিবরণীতে উল্লেখ রয়েছে- বরিশালের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ প্রাপ্যতায় সমস্যা হওয়ায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

রংপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, প্রথম পর্যায়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ কার্যক্রমে অনলাইন জন্ম সনদ পেতে সমস্যা হলেও স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে সভা করে বর্তমানে তা সমাধান করা হয়েছে।

ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, সাভার ও গাজীপুর এলাকার জনপ্রতিনিধিরা অনলাইন জন্মনিবন্ধন দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে বিধায় কোনো কোনো উপজেলায় প্রাক্কলিত ভোটারের তুলনায় ভোটার হওয়ার হার অনেক কম হচ্ছে। সভায় এ আলোচনার পর সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ুন কবীরকে নির্দেশনা দিয়েছেন ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, তথ্য সংগ্রহ হালনাগাদ কার্যক্রমে কোনো জনপ্রতিনিধি আবেদনকারীর জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু না করলে বা হয়রানি করলে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধির তথ্য মহাপরিচালক, এনআইডিকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ বরাবর পত্র পাঠাতে হবে। এ ছাড়া সব আঞ্চলিক কর্মকর্তাকে এ নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানোরও নির্দেশনা দিয়েছেন ইসি সচিব।

এবারের হালনাগাদে ভোটার অন্তর্ভুক্তির হার ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৮৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫২৬ ব্যক্তিকে হালনাগাদের অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে ইসি। গতবারের মতো এবারও তিন বছরের তথ্য একসঙ্গে নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পূর্বে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন, তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এদের মধ্যে যাদের বয়স যখন ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তখন তারা স্বয়ংক্রিভাবে ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন। আগামী ২০ নভেম্বরের মধ্যে হালনাগাদের কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে ইসি।

বর্তমানে দেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ জন এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৭ জন। হিজড়া ভোটার আছে ৪৫৪ জন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here