মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলি, আতঙ্কে এলাকা ছাড়ছে স্থানীয়রা

0
60

বাংলা খবর ডেস্ক:
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু কোনারপাড়া সীমান্তে মিয়ানমারের মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণ এবং মর্টার শেল নিক্ষেপে হতাহতের ঘটনায় নো ম্যান্স ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনার পর থেকে রোহিঙ্গারা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

এ ছাড়া আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অনেক স্থানীয় বাসিন্দা বৃদ্ধা মা-বাবা ও শিশুদের অন্যত্র পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তুমব্রু’র বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান জানান, তিনি তার বৃদ্ধ বাবা-মা ও বাড়ির শিশুদের নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে আত্মীয়ের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছেন।

এদিকে সীমান্তের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে গত শুক্রবার রাতেই ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উখিয়া কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা কেন্দ্র। গতকাল শনিবার নতুন কেন্দ্রে ৪৯৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস বলেন, ‘সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে সতর্ক ও নিরাপদে থাকার কথা বলা হয়েছে।’ প্রশাসন সবকিছু পর্যবেক্ষণে রাখছে বলেও জানান তিনি।

গত শুক্রবার রাতে ঘুমধুমের কোনারপাড়া এলাকায় নো ম্যান্স ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কয়েকটি মর্টার শেল বিস্ফোরণ হয়। এতে এক যুবক নিহত এবং আরও ৫ জন রোহিঙ্গা আহত হন। আহতরা উখিয়া কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তুমব্রু ২ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য দিল মুহাম্মদ ভুট্টো বলেন, ‘শুক্রবার রাতভর গোলাবর্ষণ ও মর্টার শেল নিক্ষেপের পর শনিবারও বিরতিহীন গোলাবর্ষণ চলছে। গুলির শব্দে এপারের ভূমি পর্যন্ত কেঁপে উঠছে। আতঙ্কে ব্যাহত হচ্ছে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন।’

স্থানীয় কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণ বন্ধ হয়নি। ফলে আমাদের কৃষি কাজ বন্ধ রয়েছে। সীমান্তে মাইন আতঙ্কে ভুগছি আমরা।’

স্থানীয় বাসিন্দা হাসিনা আক্তার বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল আমাদের বাড়ির উঠানে পড়েছে। এ ছাড়া রাতভর গুলির বিকট শব্দে ঘরের শিশু ও বৃদ্ধারা ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভেজ তীবরীজি বলেন, ‘নো ম্যান্স ল্যান্ডে তিনটি গোলা এসে পড়লে বিস্ফোরিত হয় একটি। যারা হতাহত হয়েছেন তারা সবাই রোহিঙ্গা। ঘটনার পর রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যারা আছেন তাদের অনেকে এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন।’

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ সীমান্তে যাতে নতুন করে কেউ অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে নো ম্যান্স ল্যান্ডে তৈরি ক্যাম্পে ৫ বছর ধরে বসবাস করছেন চার হাজার ২০০ জনের বেশি রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পেছনেই মিয়ানমারের কাঁটাতারের বেড়া ও রাখাইন রাজ্যের একাধিক পাহাড়।

গত ২৮ আগস্ট মিয়ানমার থেকে ছোড়া দুটি মর্টার শেল ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের উত্তরপাড়া মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় এসে পড়ে। পরদিন সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল সেটি নিষ্কিৃয় করলেও দুই দিন পর মিয়ানমারের হেলিকপ্টার থেকে গোলা এসে পড়ে সীমান্তে।

মর্টার শেল নিক্ষেপের বিষয়টি প্রয়োজনে জাতিসংঘকে জানানো হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘বাংলাদেশ কোনো যুদ্ধ চায় না। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। মিয়ানমারের সংঘাত যাতে আমাদের দেশে না আসে সেই ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তারা যদি কথা না শোনে তাহলে আমরা জাতিসংঘের কাছে অভিযোগ দেব।’

আজ শনিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সীমান্তে মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেল নিক্ষেপের বিষয়টি কূটনৈতিকভাবে সমাধান করা হবে।

তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারে সংঘর্ষের মধ্যে বাংলাদেশে যাতে কোনো রোহিঙ্গা প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য বিজিবিকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। দু-একজন আসলেও তাদের পুশব্যাক করা হচ্ছে।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু সীমান্তে গতকাল শুক্রবার মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেল বিস্ফোরণে ইকবাল নামে এক রোহিঙ্গা যুবক নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here