প্রতিশোধের ক্ষেপণাস্ত্রে জ্বলছে ইউক্রেন

0
44

বাংলা খবর ডেস্ক:
দৃশ্যত ক্রিমিয়া সেতুতে হামলার প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে রাশিয়া। এই হামলার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করার একদিনের মাথায় কিয়েভসহ বেশ কয়েকটি শহরে হামলা চালিয়েছে মস্কো। গতকাল সোমবার সকালের ব্যস্ততম সময়ে এসব হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ১১ জন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। মূলত জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে চালানো এই হামলায় জার্মানির একটি অব্যবহৃত কনস্যুলেটও আক্রান্ত হয়। এদিকে ইউক্রেনকে সন্ত্রাসী হামলায় অভিযুক্ত করে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখানোর হুশিয়ারি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। খবর বিবিসি, এএফপির।

রুশ হামলার কথা নিশ্চিত করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের উপপ্রধান কিরিলো টোমোশেনকো এক সোস্যাল মিডিয়া পোস্টে লেখেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কবলে পড়েছে ইউক্রেন। আমাদের দেশের বহু শহরে হামলার তথ্য রয়েছে।’ বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

গতকাল সোমবার কিয়েভে সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। এদিন সকালে শহরটিতে অন্তত পাঁচটি বিস্ফোরণ হয়। কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো এক সোস্যাল মিডিয়া পোস্টে লেখেন, ‘রাজধানীর মধ্যস্থান শেভচেনকিভস্কি জেলায় বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ হয়েছে।’ এর আগে সবশেষ কিয়েভে হামলার ঘটনা ঘটে গত ২৬ জুন।

ক্রিমিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একমাত্র সেতুতে এক বিস্ফোরণের জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করার একদিনের মাথায় এই হামলার ঘটনা ঘটল। গত শনিবার সেতুতে ওই বিস্ফোরণে অন্তত তিনজন নিহত হয়। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুতে এই হামলাকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ আখ্যা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

হামলার ঘটনা তদন্তে গঠিত এক কমিটির বৈঠকে রবিবার পুতিন বলেন, ‘এই হামলার পরিকল্পনাকারী, অপরাধী এবং পৃষ্ঠপোষক ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা।’ এদিকে সোমবার রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাধারণত শুক্রবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও এবার ব্যতিক্রম হলো।

নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকের পর রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত এক বিবৃতিতে পুতিন কৃষ্ণসাগর দিয়ে তুরস্কে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহকারী পাইপলাইনে বিস্ফোরণের জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেন। পশ্চিম রাশিয়ার কুরস্ক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ইউক্রেনের জাপোরিজ্জিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলার জন্যও ইউক্রেনকে দায়ী করেন পুতিন। তিনি বলেন, ‘রুশ ফেডারেশনের এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা চালানো হতে থাকলে, প্রতিক্রিয়া হবে কঠোর এবং হুমকির মাত্রা অনুযায়ী যথাযথ।’

এদিকে ইউক্রেনে চালানো রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আক্রান্ত হয়েছে কিয়েভে জার্মানির ভিসা কনস্যুলেট হিসেবে ব্যবহৃত একটি ভবন। জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টুইটারে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই অব্যবহৃত রয়েছে ভবনটি। ইউক্রেনের রাজধানীতে জার্মান দূতাবাসে কর্মরতরা অক্ষত রয়েছে। তবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ভবনের যে ছবি সামনে এসেছে তাতে দেখা গেছে এটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সোমবার কিয়েভে দুপুর আড়াইটার দিকে ইউক্রেনের পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানায়, সকালের রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত দশ জন নিহত এবং প্রায় ৬০ জন আহত হওয়ার কথা জানা গেছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানায়, রাজধানী কিয়েভ এবং দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় শহরগুলো লক্ষ্য করে অন্তত ৮৩টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এর মধ্যে ৪৩টি ভূপাতিত করার দাবি করেছে তারা।

প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, রাশিয়া মূলত জ¦ালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, ‘আজকের সকাল কঠিন। আমরা সন্ত্রাসী, বহু ক্ষেপণাস্ত্র এবং ইরানি শহীদদের (ক্ষেপণাস্ত্রের নাম) সামাল দিচ্ছি। তাদের লক্ষ্য দুইটি। সারাদেশের জ্বালানি অবকাঠামো এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে মানুষ।’ ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভের মেয়র আন্দ্রি সাদোভি জানিয়েছেন, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো আক্রান্ত হওয়ায় শহরে বিদ্যুৎ বিপর্যয় এবং গরম পানি সরবরাহে বিঘœ ঘটেছে।

এদিকে মলদোভা বলেছে, ইউক্রেনকে লক্ষ্য করে ছোড়া রাশিয়ার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে তারা রুশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করে মস্কোর ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে। মলদোভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকু পোপেসকু এক টুইট বার্তায় লেখেন, ‘সকালে ইউক্রেন লক্ষ্য করে কৃষ্ণসাগরে থাকা রাশিয়ার জাহাজ থেকে নিক্ষেপ করা তিনটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মলদোভার আকাশসীমার ওপর দিয়ে গেছে।’

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বলেছে, ইউক্রেনের বেসামরিকদের ওপর রাশিয়ার হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ গণ্য করা যেতে পারে। আর পোল্যান্ডের মতো দেশগুলো আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপে চাপ দিচ্ছে। এ ছাড়া ইউরোপীয় নেতারা ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here