একক আধিপত্য বিস্তার করে ৪-১ গোলে জয় ব্রাজিলের

0
50

বাংলা খবর ডেস্ক:
হারলে বিদায়, জিতলে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা নিশ্চিত। বাঁচা-মরার এমন লড়াইয়ের ম্যাচে সেভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি দক্ষিণ কোরিয়া। ম্যাচে একক আধিপত্য বিস্তার করে ৪-১ গোলে জয় পায় ব্রাজিল।

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১ টায় স্টেডিয়াম ৯৭৪ এ মাঠে নামে দু’দল। ম্যাচের ৭ মিনিটে গোল করে ব্রাজিলকে এগিয়ে দেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। এরপর নেইমার, রিচার্লিসন ও লুকাস পাকুয়েতা গোল করলে চার গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ব্রাজিল। বিরতি থেকে এক গোল শোধ করে দক্ষিণ কোরিয়া। এরপর আর কোন গোল না হলে ৪-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সেলেসাওরা।

ম্যাচের শুরু থেকেই লম্বা পাসে আক্রমণ করার চেষ্টা করে ব্রাজিল। প্রথম অ্যাটাক থেকেই গোলের দেখা পায় ব্রাজিল। ম্যাচের ৭ মিনিটে বাম দিক থেকে সাজানো আক্রমণে ওঠে ব্রাজিল। বাম দিক থেকে রাফিনহার বাড়ানো বল পায় ডি বক্সের ফাঁকায় দাড়িয়ে থাকা ভিনিসিয়াস জুনিয়র। ঠান্ডা মাথায় অসাধারণ শটে বল জালে জড়ান তিনি। তার গোলে ম্যাচের শুরুতেই লিড পায় ব্রাজিল।

ম্যাচে এগিয়ে গিয়ে আরও আক্রমণে ধার বাড়ায় ব্রাজিল। ম্যাচের ১১ মিনিটে বক্সের ভেতরে রিচার্লিসনকে ফাউল করলে পেনাল্টি পায় ব্রাজিল। পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্রাজিলকে দুই গোলের লিড এনে দেন ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরা নেইমার। ঠান্ডার মাঠায় অসাধারণ শটে বল জালে জড়ান তিনি।

ম্যাচের ১৬ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে আচমকা শট করেন হাওয়াং হিচান। তবে তা অসাধারণ শটে দলকে রক্ষা করেন অ্যালিসন বেকার। এরপর নিজদের মধ্যে বলের নিয়ন্ত্রণ রেখে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করে ব্রাজিল। অন্যদিকে কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবল খেলতে থাকে দক্ষিণ কোরিয়া।

ম্যাচের ২৪ মিনিটে বাম দিক থেকে আক্রমণে যায় ব্রাজিল। সেখান ক্রস করেন ক্যাসেমিরো। তবে তা বিপদ মুক্ত করেন দক্ষিণ কোরিয়ার গোলরক্ষক কিম সেঙ্গু। ম্যাচের ২৫ মিনিটে কর্নার পায় দক্ষিণ কোরিয়া। তবে তা কাজে লাগাতে পারেনি তারা। ম্যাচের ২৬ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে যায় নেইমার। তবে কর্নারের বিনিময়ে ক্লিয়ার করে দেন দক্ষিণ কোরিয়ার ডিফেন্ডাররা।

ম্যাচের ২৮ মিনিটে কর্নার পায় ব্রাজিল। কর্নার থেকে ফিরতি বলে সাজানো আক্রমণ থেকে থিয়াগো সিলভার পাস থেকে বল পেয়ে জালে জড়ান রিচার্লিসন। ম্যাচের ২৯ মিনিটে গোল করেন তিনি। তার গোলে তিন গোলের লিড পায় ব্রাজিল।

এরপর ম্যাচের ৩২ মিনিটে আক্রমণে যায় দক্ষিণ কোরিয়া। বাম দিক থেকে বল নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে শট করেন হাওয়াং হিচান। তবে তা আবারও সেভ করেন অ্যালিসন বেকার।

ম্যাচের ৩৪ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে শট করেন ক্যাসেমিরো। তবে তা চলে যায় পোস্টের বাইর দিয়ে। ম্যাচের ৩৬ মিনিটে আবারও গোলের দেখা পায় ব্রাজিল। কাউন্টার অ্যাটাক থেকে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের পাস থেকে বল জালে জড়ান লুকাস পাকুয়েতা। তার গোলে ম্যাচে চার গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল।

বিরতি থেকে ফিরেই আক্রমণে যায় দক্ষিণ কোরিয়া। ম্যাচের ৪৬ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বল পেয়ে শট করেন হিউং মিন সন। তবে আরও একবার অসাধারণ সেভে নিজেদের জাল অক্ষত রাখেন অ্যালিসন বেকার। ম্যাচের ৫০ মিনিটে বাম দিক থেকে ব্রাজিল আক্রমণে ওঠে। তবে তা কাজে লাগাতে পারেনি তারা।

ম্যাচের ৫৪ মিনিটে সাজানো আক্রমণ থেকে ডি বক্সের ভেতরে বল পেয়ে শট করেন রাফিনহা। তবে তা অসাধারণ সেভ করে দলকে এই যাত্রায় রক্ষা করেন কিম সেঙ্গু। ম্যাচের ৫৬ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিক পায় ব্রাজিল। সেখান থেকে রাহিনহার নেওয়া শট মানব দেওয়ালে লেগে চলে যায় পোস্টের বাইর দিয়ে।

ম্যাচের ৬২ মিনিটে ব্রাজিলের অ্যাটাক থেকে বল পেয়ে শট করেন রাফিনহা। তবে আবারও অসাধারণ সেভ করেন কিম সেঙ্গু। ম্যাচের ৬৬ মিনিটে আবারও সুযোগ পায় ব্রাজিল। তবে রাফিহার বাড়ানো বলে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন রিচার্লিসন।

জয়ের পর পেলেকে শ্রদ্ধা জানালেন নেইমাররা

ম্যাচের ৬৮ মিনিটে জোড়ালো শট করেন হাওয়াং হিচান। তবে আবারও ত্রাতা হয়ে আসেন অ্যালিসন বেকার। অসাধারণ সেভে বিপদ মুক্ত করেন তিনি। ম্যাচের ৭৬ মিনিটে গোলের দেখা পায় দক্ষিণ কোরিয়া। ডি বক্সের বাইরে থেকে জোড়ালো শটে বল জালে জড়ান পাইক সেউং-হো। তার গোলে ম্যাচে ব্যবধান কমায় দক্ষিণ কোরিয়া।

ম্যাচের ৮০ মিনিটে আবারও আক্রমণে যায় দক্ষিণ কোরিয়া। ডি বক্সের ভেতর থেকে হাওয়াং হিচানের নেওয়া শট আবারও রুখে দেন অ্যালিসন বেকার। ম্যাচের ৮৫ মিনিটে গোলরক্ষকের ভুলে গোলের সুযোগ পায় ব্রাজিল। তবে গোল করতে ব্যর্থ হয় তারা।

ম্যাচের ৮৯ মিনিটে মার্টিনেল্লির বাড়ানো পাসে উড়ন্ত শট করেন দানি আলভেস। তবে তা ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে প্রতিহত হয়। এরপর বেশ কিছু আক্রমণ করেও গোল করতে ব্যর্থ হয় দু’দল।

শেষ পর্যন্ত আর কোন গোল না হলে ৪-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল। এই জয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করলো পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। সেইসঙ্গে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় দক্ষিণ কোরিয়া।

ওদিকে টানা তিন বিশ্বকাপে গোল করলেন নেইমার। আর এই গোল দিয়েই নেইমার বসে গেছেন ব্রাজিলের কিংবদন্তি পেলে ও রোনালদোর পাশে।

এর আগে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে শুধুমাত্র ফুটবল সম্রাট পেলে ও রোনালদো তিন বিশ্বকাপে গোল করার কীর্তি গরেছিলেন। এবার সেই কীর্তি গড়ে তাদের পাশেই বসলেন ব্রাজিলের পোস্টারবয় নেইমার। ২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নেমেই গোলের দেখা পান নেইমার, ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপেও গোল পেয়েছিলেন নেইমার। এবার কাতারের মাটিতেও নক-আউটে এসে গোলের দেখা পেলেন নেইমার।

আজকের ম্যাচের এক গোল করেই ব্রাজিলের জার্সিতে সর্বাধিক গোল করার তালিকায় পেলের ঠিক পেছনে চলে গেছেন। ব্রাজিলের হয়ে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক ৭৭ টি গোলের রেকর্ড ফুটবল সম্রাটের। আজকের ম্যাচের গোল দিয়ে এখন পর্যন্ত ৭৬টি গোল নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর নেইমারের। ৭৬ গোল করে ব্রাজিলের জার্সিতে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় রোনালদোকেও পেছনে ফেলেছেন নেইমার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here