বাংলা খবর ডেস্ক:
আগামী রমজান ও ঈদ ঘিরে আমদানিতে বাণিজ্যিক ঋণপত্র (এলসি) খুলতে অগ্রাধিকার চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, রমজানে শুধু আট পণ্য নয়, এর বাইরেও অনেক পণ্য আমদানি করতে হয়। এসব দিক বিবেচনায় এলসি খোলায় যাতে কোনো সমস্যায় পড়তে না হয়, সে জন্য জরুরি ভিত্তিতে রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোকে ডলার সহায়তার কথা বলেন তাঁরা। একই সঙ্গে আমদানি-রপ্তানিতে ডলারের এক রেট দাবি তাঁদের। আগামী জুন মাস পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোরও দাবি জানানো হয়েছে।
গতকাল সোমবার সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সভা শেষে এসব দাবি জানায় এফবিসিসিআই। ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
এর আগে বেসরকারি ব্যাংকগুলো রিজার্ভ থেকে ডলার সহায়তা চেয়েছিল। তবে সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোকে নিজেদের উদ্যোগেই ডলার সংগ্রহ করে পণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলতে বলেছিল দেশের ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। গত ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) বৈঠকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে এ কথা সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক আট পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এলসি সহজ করে সার্কুলার জারি করেছে। তবে এই আট পণ্যের বাইরে আরো পণ্য আছে। কারণ রোজার পরই তো ঈদ আসছে। সে ক্ষেত্রে আরো অনেক পণ্য আমদানির দরকার হবে। আবার অনেক ব্যবসায়ী এলসি খুলতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে এলসি খোলা সহজ করতে জরুরি ভিত্তিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার সহায়তা দিতে হবে।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক ও এফবিসিসিআইয়ের বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা ইডিএফ ঋণের সময়সীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক বিবেচনায় নেবে। করোনার সময় বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা দিয়েছিল। এই সুবিধার মেয়াদ চলতি ডিসেম্বরে শেষ হবে। তাই আগামী বছরের জুন পর্যন্ত এই সুবিধার মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে এফবিসিসিআই। এ বিষয়টিও আমরা দেখব। ’
তিনি আরো বলেন, করোনার মতো নীতি সহায়তা চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাশিয়া-ইউক্রেন সমস্যার কারণে এটা চেয়েছেন, নিয়মিত লোনের জন্য এটা। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থনীতির স্বার্থে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে বিষয়টি। এলসি খোলায় যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য আট পণ্যের বিষয়ে সার্কুলার হয়েছে, প্রয়োজনে বাড়ানো হবে।
এ ছাড়া আগামী জুন মাস পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষতি কাটিয়ে উঠলেও রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম এখনো সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক হয়নি। ঋণ শ্রেণীকরণ সুবিধার মেয়াদ বাড়ানো না হলে বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনিচ্ছাকৃত খেলাপিতে পরিণত হবে। এতে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এ কারণে ঋণ বিরূপ মানে শ্রেণীকরণপ্রক্রিয়া আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংকও বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে।
জসিম উদ্দিন বলেন, আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ডলারের যে পার্থক্য রয়েছে তা এক রেট করার জন্য বলেছি। কারণ কাঁচামাল আমদানি করার জন্য একজন ব্যবসায়ীর খরচ পড়ে ১০৫ টাকা। কিন্তু পণ্য রপ্তানি করতে গেলে সেটা ১০১ টাকা হয়। তাই এটা এক রেট করার দাবি জানিয়েছি। এ ছাড়া ইডিএফ ঋণের মেয়াদ ১৮০ দিন থেকে বাড়িয়ে ২৭০ দিন করার দাবি জানিয়েছি।
সুদহার নিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘সুদের হার কম থাকলে বিনিয়োগ বেশি হয়। তাই সুদহারের ক্যাপ এখন তোলার প্রয়োজন দেখছি না। এ জন্য অনুরোধ জানিয়েছি, আগামী এক বছর যাতে সুদহারের ক্যাপ না তোলা হয়। সুদহার বাড়ালে যে মূল্যস্ফীতি কমবে তা নয়। কারণ অনেক সাধারণ মানুষ ব্যাংকের বাইরেও রয়েছে। আমরা আমদানিনির্ভর দেশ। সুদহার বাড়ালে মানুষের খরচ বেড়ে যাবে। ’
রিজার্ভ থেকে ডলার সহায়তা চাওয়ার বিষয়ে মেজবাউল হক বলেন, রেমিট্যান্স বাড়ছে। আমদানি কমেছে। আগের চেয়ে ডলার সংকট কমে আসবে। তখন ব্যাংক নিজেই এলসি খুলতে পারবে। এর পরও যদি প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা করবে।